বুধবার, ১৮ জানুয়ারী ২০১৭
শত বাঁধা পেরিয়ে কালীগঞ্জের জয়িতা রেজিয়ার পথ চলা!
Home Page » বিবিধ » শত বাঁধা পেরিয়ে কালীগঞ্জের জয়িতা রেজিয়ার পথ চলা!বঙ্গ
নিউজঃ মোঃ শরিফুল ইসলাম। হাতীবান্ধা থানা প্রতিনিধি :শত বাঁধা আরা নানা প্রতিকূলতা আটকাতে পারেনি কিশোরী রেজিয়াকে। এলাকার অন্যদের থেকে একটু আলাদা রেজিয়া খাতুন (১৭)। বাবার মৃত্যুর পর আর নিজের বাল্য বিবাহ রোধ করে স্কুল যেতে শুরু করেছে মেয়েটি। সংগ্রামী রেজিয়া হিসেবেই এলাকায় রয়েছে তার পরিচিতি। আর এ কারণে সম্প্রতি উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদফতর থেকে এ কিশোরীকে দেয়া হয়েছে জয়িতার পুরস্কারও। বর্তমানে আত্মপ্রত্যয়ী মেয়েটি আদিতমারী উপজেলার পলাশী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীতে অধ্যয়ন করছেন। উপজেলার উত্তর তালুক পলাশী গ্রামে নানীর বাড়িতেই বসবাস রেজিয়ার।
জানা গেছে, কালীগঞ্জ উপজেলার চলবলা ইউনিয়নের শুকানদীঘি গ্রামের আছিমুদ্দীনের মেয়ে রেজিয়া। ২ ভাই ও ৪ বোনের মধ্যে পঞ্চম। ১৩ বছর পূর্বে তার বাবা মারা যান। রেজিয়ার বাবা ছিলেন দিনমজুর। আর জমা-জমি বলতে মাত্র ৫ শতক ভিটেমাটি। বাবার মৃত্যুর পর রেজিয়ার আশ্রয় হয় নানী লতিফুন নেছার বাড়িতে। নানী অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে সংসার ও তার লেখাপড়ার খরচ বহন করতেন। শত কষ্টের মাঝেও চলছিল তার লেখাপড়া। হঠাৎ করে রেজিয়ার মা সাহিদা খাতুন তার বিয়ে ঠিক করেন। কিন্তু বাঁধ সাধেন কিশোরী মেয়েটি। সাফ মাকে জানিয়ে দেন, এ বিয়ে করবে না সে। লেখাপড়া করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে চায়। কিন্তু রেজিয়ার মা এ বিয়ে জোর করে হলেও দিবেন। তার নানীর বাধাও শোনেনি সাহিদা খাতুন। তিনি মেয়েকে বিয়ে দিবেনই। বিয়ের সকল আয়োজন শেষ। বর আসবেন রাতে। এ ঘটনার পর রেজিয়া শিশু বিবাহ থেকে রেহাই পেতে কাউকে না জানিয়ে ঢাকায় বোনের বাসায় চলে যান। যাওয়ার আগে রেজিয়া একটি চিঠি লিখে যান।
তিনি লিখেন- নানী তুমি চিন্তা কর না, আমি ভাল আছি। আমি আমার মায়ের চাপে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছি। বাড়িতে থাকলে আমাকে বিয়ে দিয়ে দিত। আমি আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম কিন্তু সেটি মহাপাপ জেনে তা করিনি। এ দিকে আদিতমারীতে কর্মরত একটি আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশের এতিম শিশু সুরক্ষা প্রকল্পের সদস্য ছিলেন রেজিয়ার নানী লতিফুন নেছা। ঘটনাটি জানার পর সংগঠনটি রেজিয়ার পাশে এসে দাঁড়ায়। তাদের হস্তক্ষেপে কিশোরী মেয়েটিকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এরপর সংগঠনটির পক্ষ থেকে রেজিয়াকে মাসিক ৫শ টাকা করে শিক্ষাবৃত্তি ও ব্যবসার জন্য আঠার হাজার টাকা প্রদান করা হয়।
নিজে স্কুলছাত্রী হয়েও গ্রামে শুরু করেন প্রাইভেট পড়ানোর। এখান থেকে রেজিয়ার প্রতি মাসে ৫শ টাকা করে আসতে শুরু করে। শুধু তাই নয়, ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ থেকে পাওয়া আঠার হাজার টাকা দিয়ে নানীর বাড়ির পার্শ্বের একটি পুকুরে মাছ চাষ, দু’টি ছাগল ক্রয় এবং হাঁস- মুরগী পালন ও সবজি চাষ শুরু করেন। যা আয় হয়, তা দিয়ে নানী-নাতনির সংসার কোন রকম চলে যায়। এত কিছুর পরেও থেমে নেই রেজিয়ার মা সাহিদা খাতুনের হুমকি।রেজিয়ার নানী লতিফুন নেছা জানান, ‘রেজিয়া মোর নাতনী নয়, এটা মোর ছাওয়া। মুই ভিক্ষা করি হইলেও ইয়াক পড়াইম।’ তিনি রেজিয়ার জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২২:২৪:১৬ ২৫৪ বার পঠিত