শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬
আজ থেকে নেত্রকোনার দুর্গাপুরে সাত দিনব্যাপী কমরেড মনি মেলা শুরু
Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » আজ থেকে নেত্রকোনার দুর্গাপুরে সাত দিনব্যাপী কমরেড মনি মেলা শুরুবিশেষ প্রতিনিধিঃ,টংক আন্দোলনের মহান নেতা অবশ্য সকলেরই জানতে ইচ্ছে করে,টঙ্ক কি ? টঙ্ক মানে ধান কড়ারী খাজনা প্রথা। ফসল হোক বা না হোক কড়ার মত ধান দিতে হবে। টঙ্ক জমির উপর কৃষকদের কোন স্বত্ব ছিল না। তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলার কলমাকান্দা, সুসঙ্গ দুর্গাপুর, হালুয়াঘাট, নালিতাবাড়ী, ও শ্রীবর্দি সহ সুসঙ্গ জমিদারী এলাকার সর্বত্রই এই প্রথার ব্যাপক প্রচলন ছিল। প্রথার নাম কেন টঙ্ক হল তা জানা যায় না, এটা স্থানীয় নাম।
টঙ্ক প্রথানুযায়ী সোয়া একর জমির জন্য ধান দিতে হতো সাত থেকে পনের মন অথচ সেই সময়ে জোত জমির খাজনা ছিল সোয়া একরে পাঁচ থেকে সাত টাকা মাত্র। প্রতি মন ধানের দাম ছিল সোয়া দুই টাকা। ফলে সোয়া একরে অতিরিক্ত খাজনা দিতে হতো এগার টাকা থেকে সতের টাকা।
এই প্রথা শুধু জমিদারদেরই ছিল তা নয়,মধ্যবিত্ত মহজনরাও এই প্রথায় লাভবান হতেন। একমাত্র সুসঙ্গ জমিদারই টঙ্ক প্রথায় দুই লাখ মন ধান আদায় করতেন। এটা ছিল জঘন্যতম সামন্ততান্ত্রিক শোষণ ব্যবস্থা। এ শোষণের হাত থেকে ওইসব এলাকার কৃষক ও মেহনতি মানুষদের রক্ষা করতে কমরেড মণিসিংহ ১৯৩৭ থেকে ১৯৪৯ টঙ্ক প্রথা বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলেন। এতে কমরেডের সহযোগী হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন লেঙ্গুরার ললিত সরকার, ভূপেন ভট্রাচার্য, হালুয়াঘাটের প্রথম গুপ্ত ও নালিতাবাড়ির জলধর পাল।
টঙ্ক আন্দোলনে সুসঙ্গ জমিদার বাহিনীর লাটিয়ালদের হাতে শহীদ হন রাশিমণি হাজং, সুরেন্দ্র হাজং, মঙ্গল সরকার, অগেন্দ্র,সুরেন্দ্র ,শঙ্কমণি ,রেবতি,যোগেন, স্বরাজ ও অজ্ঞাতনামা ১৩ জন। মণি হাজং ও সুরেন্দ্র হাজং ১৯৪৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর দুর্গাপুরের বহেরাতলীতে এবং মঙ্গল সরকার ,অগেন্দ্র , সুরেন্দ্র হাজং, মঙ্গল সরকার,অগেন্দ্র,সুরেন্দ্র ,শঙ্কমণি , রেবতি,যোগেন ও স্বরাজ ১৯৪৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারী কলমাকান্দার লেংগুরায় শহীদ হন। একই সালে (অজ্ঞাত তারিখ) লেংগুড়ায় শচী রায়, দুবরাজ, মোহনপুরের রবি দাম, মাহাতাব উদ্দিন সহ অজ্ঞাত অনেকে শহীদ হন।
মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের উপদেষ্টা, কমিউনিষ্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বৃটিশ বিরোধী ও টংক আন্দোলনের অন্যতম নেতা কমরেড মনি সিংহের ২৬তম মৃত্যুবার্ষিকী শনিবার ।নেত্রকোণার দুর্গাপুরে আজ থেকে টংক স্মৃতি সৌধ প্রাঙ্গনে সপ্তাহব্যাপী মণিমেলা শুরু হবে। সকালে মেলার উদ্বোধন করবেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ছবি বিশ্বাস। প্রধান অতিথি থাকবেন কেন্দ্রীয় সিপিবির উপদেষ্টা মঞ্জুরুল আহসান খান। এ ছাড়া মেলা উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক প্রবীন রাজনীতিবিদ দুর্গাপ্রসাদ তেওয়ারী, কেন্দ্রীয় সিপিবি নেতা ডা. দিবালোক সিংহসহ এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকবেন। সকালে মেলা প্রাঙ্গন থেকে শোভাযাত্রা বের হয়ে উপজেলা সদরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিন করবে। সাতদিন ব্যাপী মেলায় জাতীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ,দেশবরেন্য বুদ্ধিজীবি,ও সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিগন উপস্থিত থাকবেন।
বাংলাদেশ সময়: ৮:৪০:০৪ ৬৫৬ বার পঠিত