মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬
চুয়াডাঙ্গায় প্রতিদিন সবজির বেচাকেনা দেড় কোটি টাকা
Home Page » অর্থ ও বানিজ্য » চুয়াডাঙ্গায় প্রতিদিন সবজির বেচাকেনা দেড় কোটি টাকাবঙ্গ-নিউজঃ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্রাণকেন্দ্র চুয়াডাঙ্গায় শীতের সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতিদিন চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জ বাজার থেকে দেড় কোটি টাকার বেশি সবজি সারা দেশে যাচ্ছে। এছাড়া এ বাজার থেকে ২০০ মেট্রিক টন সবজি মালয়েশিয়া ও সৌদি আরবসহ মধ্য প্রদেশে রফতানি করা হয়ে থাকে। সবজির ভালো মূল্য পেয়ে খুশি এখানকার কৃষকেরা।
জানা যায়, প্রতি বছর এ বাজারে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার সবজি বিক্রি হয়। চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গত সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে শীতকালীন সবজি চাষাবাদ শুরু হয় যা চলবে আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্তে।এ বছর শীতকালীন ৮ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষের লক্ষমাত্রা ধার্য করা হলেও ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। এসব সবজির মধ্যে রয়েছে বাধাকপি, ফুলকপি, ওলকপি, মূলা, শাচি (বান), লাউ, মাইটা লাউ, কচু, বরবটি, আলু, ঝিঙ্গা ও বেগুনসহ বিভিন্ন রকমের সবজি। কৃষকেরা সবজিতে অধিক মূল্য পাওয়ায় কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে নতুন করে শাক-সবজি আবাদে ঝুঁকে পড়েছে।
সোমবার চুয়াডাঙ্গা শহর থেকে ৮ কিলোমিটার উত্তরে সবজির সর্ববৃহৎ সরোজগঞ্জ বাজারে গিয়ে দেখা গেছে প্রচুর মূলা, ফুলকপি, বাধাকপি, ওলকপি, বেগুন ও লাউসহ বিভিন্ন রকমের সবজি ওঠেছে। কৃষকরা ভ্যান, ভটভটি (শ্যালো ইঞ্জিন চালিত যানবাহন) ও মিনি ট্রাকে করে বাজারে সবজি নিয়ে আসছে। তারা পাইকারি হিসেবে প্রতি মণ (৪০ কেজি) মূলা ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা, ফুলকপি ৫০০ থেকে সাড়ে ৫০০ টাকা, করল্লা ৬০০ থেকে সাড়ে ৬০০ টাকা, বেগুন ১ হাজার টাকা, মাইটা লাউ ১০০ পিছ ৭০০ টাকা, শাচি লাউ ১০০ পিছ ১ হাজার ৬০০ টাকা, বাধাকপি ১০০ পিছ ১ হাজার টাকায় বিক্রি করছে। তবে খুচরা বাজারে এর মূল্য অনেক বেশি।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের কৃষক নূর ইসলাম মূলা, ফুলকপি, বাধাকপি ও বেগুন বিক্রির জন্য এসেছে। তিনি এবার ১০ বিঘা জমিতে সবজি চাষ করেছে। তিনি জানান, সবজি বিক্রি করে তিনি ভালোই লাভবান হয়েছে। দাম ভালো পাওয়ায় প্রতি বছর সবজি চাষের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। দাদন নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি জানান, এখন কৃষকদের সবজি চাষের জন্য দাদন নিতে হয় না। তবে ধান, ভুট্টা ও পাটের সময় অনেক কৃষক বাধ্য হয়ে দাদন নিয়ে চাষ করে থাকে।
একই মন্তব্য করেন, সদর উপজেলার বোয়ালগাছি গ্রামের চাষী বাক্কা মিয়া, একই গ্রামের নুরুল ইসলাম, ছয়ঘরিয়া গ্রামের আবু বকর, কিরণগাছি গ্রামের শফিকুল ইসলাম ও সুবদিয়া গ্রামের জামাত আলী।
পাইকারি ক্রেতা (ব্যাপারি) মকসেদপুর সদরের আনুর হোসেন জানান, তিনি এ বাজার থেকে পাইকারি দরে সবজি কিনে ঢাকা কাওরানবাজার, সিলেট, বরিশাল ও চট্টগ্রামের চৌমোহনীতে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করেন। ঢাকায় ট্রাক ভাড়া ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে তার প্রতি কেজিতে ৫-৬ টাকা, সিলেট ও চট্টগ্রামে ৭-৮ টাকা ও বরিশালে ৪-৫ টাকা খরচ পড়ে। তিনি প্রতি কেজিতে ২-৩ টাকা লাভ করে থাকেন।
গোপালগঞ্জের একরাম শুধু চট্টগ্রামের চৌমোহনী বাজারে ফুলকপি, বাধাকপি, ওলকপি ও মূলাসহ বিভিন্ন সবজি বিক্রি করে থাকেন।
ঢাকার পাইকারি ক্রেতা (ব্যাপারি) রুবেল ও ব্রাম্মণবাড়িয়ার সবুর জানান, প্রতিদিন তারা সরোজগঞ্জ বাজার থেকে ৩০০ থেকে ৪০০ মণ সবজি কিনে থাকেনা। প্রতি রাতেই তারা ট্রাকে মাল পাঠিয়ে দেয়। প্রতি মণে তাদের সব মিলিয়ে ২০০ থেকে আড়াইশ টাকা খরচ পড়ে। তারা দাবি করেন, সামান্য কিছু লাভে তারা মাল বিক্রি করে দেয়।
সরোজগঞ্জ বাজার কমিটির সভাপতি আব্দুল্লাহ শেখ জানান, দক্ষিণাঞ্চলের ৭টি জেলার মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সরোজগঞ্জ সবজির বাজারের জন্য প্রসিদ্ধ। এখানে স্থানীয় ৪২ জন ও অস্থায়ী ১৫ জন আড়তদার রয়েছে। তারা প্রতি ট্রাকে ২ থেকে আড়াই লাখ টাকার সবজি দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে থাকে। বছরের শীতকালীন ৬ মাস প্রতিদিন গড়ে ৬০ ও অন্য ৬ মাস ২৫টি ট্রাক সবজি ভর্তি হয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়। কয়েকদিন পরে আলু উঠলে প্রতিদিন অন্তত ১০০ থেকে ১২০ ট্রাক মাল বাইরে যাবে।
তিনি আরও জানান, প্রতিদিন সবজি খাতে কমপক্ষে দেড় কোটি টাকা বেচাকেনা হয়ে থাকে এ বাজারে। তার হিসেবে শীতকালীন ৬ মাসে ২৭০ কোটি টাকা ও অন্য ৬ মাসে ১১২ কোটি ৫০ লাখ টাকার সবজি জেলার বাইরে যায়। সব মিলিয়ে শুধু সরোজগঞ্জ বাজার থেকে বছরে ৩৮২ কোটি ৫০ লাখ টাকার সবজি কেনাবেচা হয়ে থাকে। এ বাজার থেকে সপ্তাহে ২০০ মে.টন সবজি মালয়েশিয়া, সৌদি আরবসহ মধ্য প্রদেশে রফতানি হয়ে থাকে।
আড়তদাররা বলছেন, জেলায় বিপুল পরিমাণ সবজি চাষাবাদ হলেও সংরক্ষণের জন্য কোনও হিমাগার নেই। সংরক্ষণের অভাবে হরতাল, অবরোধসহ বিভিন্ন সময় বিপুল পরিমাণ সবজি পঁচে নষ্ট হয়ে যায়। তারা এখানে সব্জি সংরক্ষণের জন্য হিমাগারা স্থাপনে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তা নির্মল কুমার দে জানান, এ জেলায় প্রতি বছর ২ লাখ ৯৯ হাজার ৮০ মে. টন সবজি চাষ হয়ে থাকে। গড়ে ২০ টাকা কেজি ধরলে ৫৯৮ কোটি ১৬ লাখ টাকার সবজি বিক্রি হয়। চুয়াডাঙ্গায় কৃষকেরা বছরে একই জমিতে ২-৩ বার চাষাবাদ করে থাকে। এছাড়া সবজি চাষ লাভজনক হওয়ায় এখন কোনও কৃষককে দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে উচ্চ সুদে টাকা নিতে হয় না।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:৩৩:৪৬ ২৮০ বার পঠিত