শনিবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৬

বড়দিনের প্রস্তুতি সম্পন্ন, নিরাপত্তায় সন্তুষ্ট আয়োজকরা

Home Page » প্রথমপাতা » বড়দিনের প্রস্তুতি সম্পন্ন, নিরাপত্তায় সন্তুষ্ট আয়োজকরা
শনিবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৬



112.jpg
বঙ্গ-নিউজঃ আগামীকাল ২৫ ডিসেম্বর খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বড়দিন। যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন হিসেবে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়ে থাকে। এবারও নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিনটি উদযাপনে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে সম্প্রদায়টি। আর নির্বিঘ্নে বড়দিন পালনে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ( ডিএমপি)। এদিকে, বড়দিনকে ঘিরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গ্রহণ করা সার্বিক নিরাপত্তায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন আয়োজকরা।

সম্প্রতি দেশের বিভিন্নস্থানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের ঘটনা ঘটলেও বড়দিনকে কেন্দ্র করে কোনও ধরনের শঙ্কা বা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন না বলে জানিয়েছেন একাধিক গির্জার যাজকরা।

রাজধানীর কাকরাইলে সেন্ট মেরি গির্জা, তেজগাঁওয়ের জপমালা রাণী গির্জা ও আসাদগেট সংলগ্ন সেন্ট ক্রিস্টিনা ক্যাথলিক গির্জা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি গির্জায় বড়দিন উদযাপনের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করা হয়েছে। চলছে শেষ মূহূর্তের প্রস্তুতি।
গির্জাগুলোতে যিশু খ্রিস্টের জন্মের সময়কে স্মরণ করতে আলাদা করে বানানো হয়েছে গোয়াল ঘর। যেখান যিশু খ্রিস্ট জন্মগ্রহণ করেছিলেন। গোয়াল ঘর জুড়ে রাখা হয়েছে শিশু যিশু খ্রিস্ট, মা কুমারী মেরি, যোশেফ, তিনজন পণ্ডিত, রাখাল। এছাড়া ছোট গোয়াল ঘরে রাখা হয়েছে বেশ কয়েকটি পশুর প্রতিকৃতি। ঘরের ওপরে রয়েছে আলোকোজ্জ্বল তারা। যা দেখে পণ্ডিতরা যিশুর জন্ম হয়েছে বুঝতে পেরেছিলেন।

বড়দিন উদযাপনের সব প্রস্তুতি নিয়ে সন্তুষ্ট কাকরাইল সেন্ট মেরি গির্জার ফাদার খোকন ডিসেন্ট গোমেজ। প্রস্তুতির বিষয়ে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রভু যিশু এই দিনে পৃথিবীতে এসেছিলেন। তার জন্মদিনকে উদযাপনই হলো বড়দিন। আমাদের সাজ সজ্জাসহ ভক্তদের আগমণে যাতে কোনও সমস্যা না হয় সে ব্যাপারে আমাদের প্রস্তুতি শেষ। মূলত রাত ১২টা ১মিনিটে বড়দিন শুরু হলেও অনুষ্ঠান শুরু হবে আজ (শনিবার ) রাত ৯টা থেকে।’

ফাদার গোমেজ জানান, ‘ আজ রাতে যজ্ঞের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। এরপরই কেক কাটা হবে। চার্চে রাখা শিশু যিশু খ্রিস্টের প্রতিকৃতিতে চুমু খেয়ে শ্রদ্ধা জানানো হবে। এরপরই উপসনালয় থেকে প্রসাদ বিতরণ করা হবে।’
বড়দিনে অন্যতম আকর্ষণীয় উপকরণ হচ্ছে ক্রিসমাস ট্রি। অত্যন্ত দর্শনীয় ও আলোকোজ্জ্বল করে সাজানো হয় ক্রিসমাস ট্রিকে। ‘এই গাছের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এর পাতাগুলো কখনই মলিন হয় না, সব সময় সবুজ থাকে। ঈশ্বর চিরসবুজ ও জীবন্ত বোঝাতে এই ক্রিসমাস ট্রি বছরের পর বছর ধরে বড়দিনের অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।’– কথাগুলো বলছিলেন তেজগাঁওয়ের পবিত্র জপমালা রাণী গির্জার প্রধান ধর্মযাজক ফাদার কমল কোডাইয়া।

বাঙালি সংস্কৃতি মেনে বড়দিন উদযাপনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

সান্তাক্লজকে কেন্দ্র করে অনেক প্রতিষ্ঠান বাণিজ্য করছে। শান্তাক্লজ গোপনে দান করতেন। তার পোশাক থেকে শুরু করে সবকিছু পরিবর্তন হতে হতে এই অবস্থায় এসে পৌঁছেছে। এগুলো নিয়ে বিভিন্ন হোটেলে পশ্চিমা সংস্কৃতি চর্চা করা হয়। কিন্তু এই চর্চার ঘোর বিরোধিতা করেন ফাদার কমল কোডাইয়া।

তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা বাঙালি, আমাদের উদযাপন হবে আমাদের মতো করে। আমরা কেন অন্য দেশের সংস্কৃতি লালন করবো? আমাদের চার্চে প্রতিটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান বাংলায় পাঠ করা হয়। প্রসাদ হিসেবে পিঠা বিতরণ করা হয়। এগুলো সবই আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির অংশ।’

তেজগাঁও গির্জার অনুষ্ঠান সূচি সম্পর্কে ফাদার কমল কোডাইয়া বলেন, আজ (শনিবার) রাত সাড়ে ৮টায় শুরু হবে। এছাড়া যজ্ঞ হবে রাত ১১টা, পরদিন সকাল ৭টা, ৯টা ও ১১টায়। এরমধ্যে আগামীকাল রবিবার সকাল ৯টায় ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের আর্চবিশপ কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি রোজারিও আমাদের সঙ্গে বড়দিন উদযাপনে অংশ নেবেন। এছাড়া সকাল ১১টায় ইংরেজি ভাষাভাষীদের জন্য ইংরেজিতে প্রার্থণা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।

বড়দিন উপলক্ষে ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে ২৫ ডিসেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ক্ষার-জাতীয় বা বিস্ফোরক দ্রব্য, আতশবাজি, পটকাবাজি, অন্যান্য ক্ষতিকারক ও দূষণীয় দ্রব্য বহন এবং ফোটানো নিষেধ করা হয়েছে। ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া ডিএমপি অর্ডিন্যান্সের ২৮ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন।

রাজধানীতে ছোট বড় মোট ৭৬টি গির্জায় বড়দিন উদযাপিত হবে। প্রতিটি গির্জায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থার পাশাপাশি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া চার্চগুলোর প্রবেশ পথে আর্চওয়ে গেট ও মেটাল ডিটেক্টর বসানো হয়েছে। চার্চগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের ডগ স্কোয়াড, বোম্ব ডিসপোসাল ইউনিট ও সোয়াট টিম মোতায়েন থাকবে বলে ডিএমপি থেকে জানানো হয়েছে।

নিরাপত্তা নিয়ে রমনা জোনের এডিসি আজিম উল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের সার্বক্ষণিক পুলিশ নিয়োজিত রয়েছে। তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া পেট্রোল ডিউটি থাকবে সারা শহরে। যে কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি।

বড়দিন উদযাপন কেন্দ্র করে কোনও ধরনের নিরাপত্তাহীনতা বা হুমকিতে নেই বলে জানিয়েছেন গির্জার যাজকরা। কাকরাইল সেন্ট মেরি গির্জার ফাদার খোকন ডিসেন্ট গোমেজ আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে আগে থেকেই পুলিশ নিয়োজিত রয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমাদের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছেন। আমাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন। নিরাপত্তার ব্যাপারে আমাদের কোনও প্রশ্ন নেই। আশা করছি, সবাই আনন্দের সঙ্গে বড়দিন উপযাপন করবে।

বাংলাদেশ সময়: ২২:৩৮:০৪   ৩৩১ বার পঠিত