মঙ্গলবার, ৪ জুন ২০১৩
কেটে নেয়া টাকা ফেরত দিতে হবে প্রাইম ব্যাংককে
Home Page » অর্থ ও বানিজ্য » কেটে নেয়া টাকা ফেরত দিতে হবে প্রাইম ব্যাংককেবঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ এই নির্দেশনা দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে রোববার প্রাইম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এহসান খসরুকে একটি চিঠিও পাঠানো হয়েছে।এভাবে টাকা কেটে নেওয়ার মতো ‘বিধিবহির্ভূত কাজে’ জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে ওই চিঠিতে। তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হলো তাও জানাতে বলা হয়েছে।বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়, “গ্রাহকরা সেবা গ্রহণ না করলেও তাদের অনুমোদন ছাড়া প্রস্তাবিত চার্জের অজুহাতে এ ধরনের টাকা কাটা আমানতকারীদের স্বার্থের পরিপন্থী। ব্যাংকের এমন অনৈতিক ও অযাচিত চার্জ কাটার ফলে ব্যাংকিং খাতের প্রতি গ্রাহকদের নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে, যা কোনভাবেই কাম্য নয়।”এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের সবগুলো অফিসের মাধ্যমে তদন্ত করে দেখেছি, প্রাইম ব্যাংক তাদের সব ধরনের সঞ্চয়ী হিসাব থেকে ‘অ্যাকাউন্ট স্টেইটমেন্ট জেনারেশন চার্জের’ নামে ২৩০ টাকা করে কেটেছে। এটা সম্পূর্ণ বেআইনি।”ব্যাংকের ‘শিডিউল অব চার্জেস’ বা বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘চার্জ ও ফি’ নেয়ার যে নীতিমালা রয়েছে তাতে এ ধরনের কোনো সেবা বা ফির কথা নেই। এমনকি ওই টাকা কাটার পর গ্রাহকদের কোনো স্টেইটমেন্টও পাঠায়নি প্রাইম ব্যাংক।”এজন্য আগামী ১৫দিনের মধ্যে সব অ্যাকাউন্টে টাকা ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর এ ধরনের কাজ করতে যে বা যেসব কর্মকর্তা নির্দেশ দিয়েছেন, তার বা তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে”, বলেন ওই কর্মকর্তা।এসব বিষয়ে প্রাইম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে অফিসে পাওয়া যায়নি। তিনি এই প্রতিবেদকের ফোনও ধরেননি।প্রাইম ব্যাংকের গ্রাহক এবং শাখার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্যাংকের সব ধরনের হিসাব থেকে (সঞ্চয়ী, চলতি ও এসএনডি হিসাব) থেকে ‘একাউন্ট স্টেইটমেন্ট জেনারেশন চার্জ’ হিসেবে ২০০ টাকা এবং এর সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বাবদ আরো ৩০ টাকা করে মোট ২৩০ টাকা কাটা হয়েছে।
সারাদেশে ব্যাংকটির ১১৭টি শাখা ও ১৫টি এসএমই শাখায় ১২ লাখের বেশি গ্রাহক রয়েছে। সেই হিসেবে গ্রাহকদের ২৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা কাটা হয়েছে। এর মধ্যে ভ্যাট বাদ দিলে থাকে ২৫ কোটি টাকা।
এছাড়া যেসব হিসাব থেকে এসএমএস চার্জ বাবদ ৫০০ টাকা এবং এর ভ্যাট বাবদ ৭৫ টাকা হিসাবে মোট ৫৭৫ টাকা কাটা হয়েছে, তাও ফেরত দিতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে অনলাইনে এসব ‘চার্জ’ কাটা হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে ধরা পড়েছে। প্রাইম ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার গ্রাহকদের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওই তদন্ত চালায় বাংলাদেশ ব্যাংক।
প্রাইম ব্যাংকের মতিঝিল এলাকার কয়েকটি শাখার ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিয়ম না থাকলেও প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে তারা এই চার্জ কাটতে বাধ্য হয়েছেন।
একজন শাখা ব্যবস্থাপক বলেন, “হেড অফিসের নির্দেশনাটা এমন যে, প্রতিটি অ্যাকাউন্ট থেকে ২০০ টাকা ও ভ্যাট কাটবেন। যদি কোনো গ্রাহক আপত্তি করে তাহলে টাকা ফেরত দেবেন।”
এভাবে চার্জ কাটার পর বাংলাদেশ ব্যাংকে লিখিত অভিযোগ করেন প্রাইম ব্যাংকের চট্টগ্রাম আগ্রাবাদ শাখার গ্রাহক কামাল হোসেন।
তিনি বলেন, “ব্যাংক আমাকে কোনো স্টেইটমেন্ট দেয়নি। অথচ আমার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নিয়েছে। সেবা পাব না, কিন্তু ব্যাংক টাকা কেটে নেবে- এটা কোনোভাবেই যৌক্তিক না।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংক বছরে দুই বার গ্রাহকদের বিনা খরচে অ্যাকাউন্ট স্টেইটমেন্ট দেবে- কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ রকম একটি নির্দেশনাও আছে।
প্রাইম ব্যাংকের মতো অন্য কোনো ব্যাংক এভাবে টাকা কাটছে কি না- তাও তদন্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ সময়: ১৪:৩৬:৪৫ ৪৩৮ বার পঠিত