সোমবার, ৫ ডিসেম্বর ২০১৬

নারায়ণগঞ্জে প্রতীক পেয়েই প্রচারে প্রার্থীরা, উৎসবের আমেজ

Home Page » জাতীয় » নারায়ণগঞ্জে প্রতীক পেয়েই প্রচারে প্রার্থীরা, উৎসবের আমেজ
সোমবার, ৫ ডিসেম্বর ২০১৬



জমে উঠেছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। প্রতীক বরাদ্দের পর আনুষ্ঠানিক প্রচারে নেমেছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। সোমবার প্রার্থীদের মধে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রতীক পেয়েই আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ মেয়র প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিক প্রচারে নেমেছেন। চষে বেড়াচ্ছেন নগরীর নানা দিক। পুরো নগরীজুড়ে লক্ষ্য করা যাচ্ছে উৎসবের আমেজ।

তবে শুরু থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে যাচ্ছেন। আনুষ্ঠানিক প্রচারে নেমেও থেমে নেই তাদের অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ। বিএনপি প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান আজও সরকার দলীয় প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছেন। অভিযোগের তীরে বিদ্ধ করেছেন নির্বাচন কমিশনকেও। এ ব্যাপারে আইভী সরাসরি অভিযোগ না করলেও তার সমর্থকরা উল্টো বিএনপির প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছেন।

প্রতীক পেলেন সাত মেয়র প্রার্থী

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ করা হয়েছে। সোমবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ ক্লাব লিমিটেডে অস্থায়ী কার্যালয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান তালুকদার প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেন।

বেলা ১১টায় প্রথম প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয় বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাইলকে। তার প্রতীক ‘কোদাল’। এরপর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর প্রার্থী মুফতি মাসুম বিল্লাহ ‘হাত পাখা’ প্রতীক লাভ করেন। ইসলামী ঐক্যজোটের মুফতি এজহারুল ইসলাম পান ‘মিনার’ প্রতীক। এলডিপি’র (বহিষ্কৃত) কামাল প্রধান পান ‘ছাতা’ প্রতীক। কল্যাণ পার্টির (বহিষ্কৃত) প্রার্থী রাসেল ফেরদৌস সোহেল মোল্লা ‘হাতঘড়ি’ প্রতীক। সাড়ে ১১টায় ‘নৌকা’ প্রতীক গ্রহণ করেন আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। পরে বিএনপি দলীয় মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেনকে ‘ধানের শীষ’ প্রতীক বরাদ্দ করা হয়।

রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান তালুকদার জানান, মেয়র পদে সাতজন, সাধারণ সদস্য পদে ১৫৬ জন এবং সংরক্ষিত সদস্য পদে ৩৮ প্রার্থীর মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা প্রার্থীদের আচরণবিধি মেনে প্রচার-প্রচারণা চালানোর জন্য অনুরোধ করছি। যদি কোনো প্রার্থী আচরণবিধি ভঙ্গ করেন তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সবার দোয়া ও সমর্থন চাইলেন আইভী

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী নৌকা প্রতীক পেয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আমি প্রথমে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে নারায়ণগঞ্জবাসীর পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আশা করি নারায়ণগঞ্জের মানুষ দলমত নির্বিশেষে সবাই মিলে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নে আমাকে পুনরায় সুযোগ করে দেবে। আমি পুনরায় নারায়ণগঞ্জবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, তাদের কারণেই আমি নৌকা পেয়েছি। নারায়ণগঞ্জের আপামর জনগণ ও তৃণমূল নেতাকর্মীরা সবার জন্য এই নৌকা আমার হাতে। যিনি এই নৌকা তুলে দিয়েছেন তিনি নারায়ণগঞ্জের মানুষের স্পন্দন শুনতে পেয়েছেন বলে আমার নৌকা তুলে দিয়েছেন। শুধু নারায়ণগঞ্জ নয়, সারা বাংলাদেশের মানুষ আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আমি সবার কাছে দোয়া চাই।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইভী বলেন, আইভী নৌকা থেকে বিছিন্ন নয়, নৌকা আইভী থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। জনগণ আইভীর নাড়ির স্পন্দন। জনগণও আইভী ও নৌকা থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। সুতরাং আমরা এক সাথে একযোগে কাজ করবো। কেউ কারো থেকে ছোট-বা বড় নয়। গণরায় অবশ্যই মেনে নেব। গণরায়ে যেটা হবে সেটাই মেনে নেব। শুধু নারায়ণগঞ্জ নয়, সারা বাংলাদেশে এটাই প্রথম দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এই নির্বাচনে জয় পরাজয়ের মাধ্যমে দল বা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার পরিবর্তন হবে না। এখানে ব্যক্তির পরিবর্তন হবে। জাতীয় পর্যায়ে এটার কোনো প্রভাব পড়বে না। আমি বিশ্বাস করি আগামী ২২ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের জনগণ নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে আমাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবে। শুধু দলের লোকজনও নয়, দলের বাইরের লোকজনও আমার সাথে আছে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইভী বলেন, আসুন আমরা একসাথে মিলেমিশে কাজ করি। তিনি বলেন, ‘নয় শঙ্কা নয় ভয়, শহর হবে শান্তিময়।’ সেই শান্তিময় শহর গড়ার জন্য নারায়ণগঞ্জের আপামর জনসাধারণকে আহ্বান জানাবো আপনারা সবাই সমবেত হন নৌকায় উঠুন শ্লোগান তুলুন নারায়ণগঞ্জে সন্ত্রাসীদের কোনো স্থান নাই। দলমতের উর্ধ্বে উঠে সবাই নৌকাকে বিজয়ী করুন।

এ সময় তার সাথে ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই, বিকেএমইএর সাবেক সহসভাপতি আব্দুর রাশেদ রাশু, জেলা যুবলীগের সসভাপতি  আব্দুল কাদিরসহ  স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

আনুকূল্য নয়, লেবেল প্লেয়িং চাই: সাখাওয়াত

এদিকে বিএনপি দলীয় মেয়র প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন ধানের শীষ প্রতীক পাওয়ার পর সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশের মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষা ও ভালোবাসার প্রতীক ধানের শীষ আমরা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে গ্রহণ করেছি। আজ থেকে আমরা নির্বাচনী কার্যক্রম সব আইন কানুন মেনে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালাবো। জনগণের যে গণতান্ত্রিক যে অধিকার হরণ করা হয়েছে সেই গণতান্ত্রিক অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেয়ার জন্যই নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যাবো। নির্বাচন নিয়ে নারায়ণগঞ্জের মানুষের মাঝে গণজোয়ার ও আবেগের সৃষ্টি হয়েছে। জনগণ এখন ভোট দেয়ার সুযোগ চায়। আমি যেখানেই যাচ্ছি, জনগণ সুষ্ঠুভাবে ভোট দেয়ার সুযোগ চায়। আমরা অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড চাই। সরকার ও নির্বাচন কমিশন সব ব্যবস্থা নেবে। সেই আশা নিয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের মনোভাব কী তা যাচাইয়ের জন্য আমরা নির্বাচনে অবতীর্ণ হয়েছি। মানুষ ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ পায় তালে দেয়ার সুযোগ পায় নারায়ণগঞ্জের মানুষ পরিবর্তনের পক্ষে রায় দেবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি ইতিপূর্বে বলেছি লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড চাই। কিন্তু আমি এখনো পাইনি। তারপরও আমি সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা রাখতে চাই। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সরকার দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সিটি করপোরেশনের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নৌকা প্রতীক নিয়ে মিছিল নিয়ে প্রতীক নিতে এসেছেন। গত ৫/৭ দিন যাবত উনি (আইভী) আচরণবিধির ওপর কোনো তোয়াক্কাই করছেন না। তিনি অহরহ আইন ভঙ্গ করছেন। নির্বাচন কমিশন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। অথচ আমরা কোনো আইন ভঙ্গ করছি না।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা যে আচরণবিধি ভঙ্গ করেছে তা আঙ্গুল দিয়ে নির্বাচন কমিশনে দেখিয়ে দিতে চাই। তারা কী ব্যবস্থা নেয়। নির্বাচন কমিশন সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করা। কিন্তু এখনও সমান সুযোগ সৃষ্টির পরিবেশ তৈরি হয়নি। আমি আপনাদের মাধ্যমে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনুরোধ করবো আপনারা জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিন। এই নির্বাচনের মাধ্যমে তো সরকারের পরির্বতন হবে না। সরকারি দলের প্রার্থী যত নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করেছেন তার প্রমাণ যদি দিতে যাই তাহলে আমি তো নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা করতে পারবো না।

সাখাওয়াত বলেন, ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে সুষ্ঠু নির্বাচন হোক সেটা আমার মনে হয় গণমাধ্যমকর্মীরাও যান। আমি চাই সুষ্ঠু নির্বাচন। আমি নারায়ণগঞ্জে সুষ্ঠু নির্বাচন হোক এটা সেটা আমার মনে হয় মিডিয়া ও সংবাদকর্মীরা চান। আমি কারো ফেভার চাই না। আমি চাই সুষ্ঠু নির্বাচন। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যে নিরাপত্তা বাহিনী রয়েছে- তারচেয়ে বড় নিরাপত্তা বাহিনী বাংলাদেশ মানুষ ও সংবাদকর্মী মনে করি। জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য সেই সুযোগটা আপনারা গণমাধ্যমকর্মীরা করে দেবেন এটাই প্রত্যাশা।

যা বললেন এলডিপি ও কল্যাণ পার্টির প্রার্থী

বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মেয়র প্রার্থী রাশেদ ফেরদৌস প্রতীক হাতঘড়ি পেয়ে বলেন, ২০ দলীয় জোটের সিদ্ধান্তকে (বিএনপির প্রার্থীকে সমর্থন দেয়া) আমি অবশ্যই শ্রদ্ধা জানাই। কিন্তু ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত যাদের ছিল তারা গাফিলতি করেছে। তারা আমাদের সাথে কোনো যোগাযোগ করেনি। বিশেষ করে বিএনপি দলীয় প্রার্থী এখন পর্যন্ত আমাদের সাথে কোনো প্রকার যোগাযোগ করেনি। এজন্য আমার দলের সাধারণ সম্পাদক দায়ী। তিনি আমাকে এ বিষয়ে কিছু জানাননি। তিনি ২০ দলের ক্ষতি করতে চান, আমার ক্ষতি করতে চান।

এলডিপির মেয়র প্রার্থী কামাল প্রধান বলেন, দল থেকে বহিষ্কারের আদেশ এখনও পাইনি ও শুনিও নাই। দলীয় সভাপতি আমার আচরণবিধি ভঙ্গ করলে যে কাউকে বহিষ্কার করতে পারেন। সেই ক্ষমতা তিনি রাখেন। আমি মনে করি, নারায়ণগঞ্জে আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি, নারায়ণগঞ্জে এলডিপির অবস্থানটা কী? কর্নেল অলির অবস্থান কী? কামাল প্রধানের অবস্থানটা কী? এটা আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী জানি। কেন্দ্রে যারা থাকে তারা জানে না। মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা না করে যদি দল আমাকে বহিষ্কার করে থাকেন তাহলে দলীয় সভাপতি বিনয়ের সঙ্গে ভুলবো তিনি ভুল করেছেন। আমরা প্রচার-প্রচারণা করছি, কিন্তু ২০ দলের পক্ষ থেকে কেউ কোনো যোগাযোগ করেনি। ওনারা তো ব্যক্তিগতভাবে আমাদের সাথে সমঝোতা না করে আমরা যেতে পারি না। এলডিপিকে কামাল প্রধান যে অবস্থানে নিয়ে এসেছেন আমি মনে করি কামাল প্রধানের ব্যক্তি ইমেজকে নষ্ট করার জন্য গণমাধ্যমে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত এসেছে। কর্নেল অলির দলকে নষ্ট করার জন্য ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমি বলবো দলের চেয়ারম্যান মহোদয় বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়ে দেখবেন।

প্রতীক পেয়েই প্রচারে সরব

এদিকে বিকাল তিনটায়  আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সিটি করপোরেশনের ৬নং ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন। এসময় পাড়া মহল্লা বিভিন্ন বাড়ি বাড়ি গিয়ে আইভী নৌকা মার্কার পক্ষে ভোট চান। এছাড়া বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে শত শত নারী পুরুষ ফুল ছিটিয়ে আইভীকে বরণ করে নেন।

অন্যদিকে বিকাল চারটার বিএনপির প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বন্দর কদমরসুল দরগায়  মিলাদ পড়িয়ে নির্বাচনী আনুষ্ঠনিক প্রচার শুরু করেন। পরে তিনি কদমরসুল এলাকার বিভিন্ন পাড়া মহল্লা ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধানের শীষে পক্ষে ভোট চান। এ সময় তার সাথে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালাম, বন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুলসহ স্থানীয় বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতারা।image-10719.jpgimage-10719.jpg

বাংলাদেশ সময়: ২২:২৯:২৫   ৩৮০ বার পঠিত