বুধবার, ১৯ অক্টোবর ২০১৬

কংগ্রেসে নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন ডেমোক্র্যাটদের

Home Page » বিশ্ব » কংগ্রেসে নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন ডেমোক্র্যাটদের
বুধবার, ১৯ অক্টোবর ২০১৬



.

বঙ্গ নিউজঃ যুক্তরাষ্ট্রে আজ যদি নির্বাচন হয়, তাহলে ডেমোক্রেটিক পার্টি কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ বা সিনেটের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাবে। নির্ভরযোগ্য নির্বাচনী বিশ্লেষক নেট সিলিভার বিভিন্ন জনমত জরিপের ভিত্তিতে যে মডেল তৈরি করেছেন, তাতে ডেমোক্র্যাটদের সিনেটে নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা ৭৩ শতাংশ। শুধু সিনেট নয়, ডেমোক্র্যাটরা এখন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ বা প্রতিনিধি পরিষদেও নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।
ডেমোক্র্যাটদের এমন স্বপ্ন দেখার একটাই কারণ, ডোনাল্ড ট্রাম্প। সর্বশেষ জনমত জরিপ অনুসারে হিলারি ক্লিনটন ট্রাম্পের চেয়ে ৪ পয়েন্ট বা তার চেয়েও বেশি পয়েন্টে এগিয়ে আছেন। এনবি ওয়াল স্ট্রিটের জরিপে এই ব্যবধান ১১ পয়েন্ট। ৪ বা তার চেয়ে বেশি পয়েন্টের ব্যবধানে ট্রাম্প যদি পরাস্ত হন, তাহলে রিপাবলিকানরা শুধু সিনেট নয়, প্রতিনিধি পরিষদও হারাতে পারেন। সেই বিপদের আঁচ পেয়ে কংগ্রেসে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে স্পিকার পল রায়ান ইতিমধ্যে রিপাবলিকান প্রার্থীদের ট্রাম্পের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার বদলে যাঁর যাঁর আসন সামলানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
নভেম্বরের নির্বাচনে ১০০ সদস্যবিশিষ্ট সিনেটের ৩৪টি আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই ৩৪টির মধ্যে যদি নিজেদের কোনো আসন না হারিয়ে আর মাত্র অতিরিক্ত পাঁচটি আসন ডেমোক্র্যাটরা দখলে নিতে সক্ষম হন, তাহলেই তাঁরা সিনেট নিজেদের দখলে আনতে সক্ষম হবেন। (হিলারি প্রেসিডেন্ট হলে চারটি অতিরিক্ত আসন হলেও চলবে।

কারণ, ভাইস প্রেসিডেন্ট সিনেটে ভোট দেওয়ার অধিকার রাখেন)। ২০১৪ সালের নির্বাচনে রিপাবলিকান দল ৫৪টি আসনে জয়ী হয়ে সিনেটে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়।

নেট সিলিভারের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, ডেমোক্র্যাটরা তাঁদের সব আসন ধরে রাখতে পারবেন। একমাত্র নেভাডায় তাঁদের কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। কিন্তু ট্রাম্প এখানে দ্রুত সমর্থন হারাচ্ছেন, ফলে এখানকার সিনেট সিটটি ধরে রাখা ডেমোক্র্যাটদের জন্য সহজ হয়ে আসছে। এর বাইরে আরও কমপক্ষে সাতটি আসনে ডেমোক্র্যাটদের জেতার সম্ভাবনা রয়েছে। রিয়েল ক্লিয়ার পলিটিকসও সর্বশেষ জরিপের ভিত্তিতে যে নির্বাচনী মডেল তৈরি করেছে, তাতে ডেমোক্র্যাটদের আটটি অতিরিক্ত আসন জেতার সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রতিনিধি পরিষদে অবশ্য পরিস্থিতি ভিন্ন। বর্তমানে এই নিম্নকক্ষে রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ২৪৭টি আসন, ডেমোক্র্যাটদের ১৮৮টি। ৫৯ আসনের এই বিশাল ব্যবধান কাটিয়ে ওঠা কার্যত অসম্ভব। তারপরও অঙ্গরাজ্য পর্যায়ে ট্রাম্প সমর্থন হারানোয় ইতিপূর্বে যেসব আসনে তাঁদের পক্ষে জেতা অসম্ভব ছিল, এখন তা সম্ভব বলে বিবেচিত হচ্ছে। অনেকেই বলছেন, রিপাবলিকানদের বিপক্ষে এবার একটি প্রতিকূল ঢেউ আসছে। ট্রাম্পের কারণে অনেক রিপাবলিকান ভোটার হয় ভোটকেন্দ্রে আদৌ যাবেন না, অথবা ট্রাম্পের মনোনয়নের প্রতিবাদে ডেমোক্রেটিক প্রার্থীকে ভোট দেবেন।

এ বছর ডেমোক্র্যাটদের অবশ্য বড় সুবিধা রয়েছে অর্থ সংগ্রহে। পরিকল্পিতভাবে অগ্রসর হওয়ায় তাঁরা ভোটযুদ্ধের জন্য রিপাবলিকানদের চেয়ে অধিক চাঁদা সংগ্রহে সক্ষম হয়েছেন। ট্রাম্পের প্রতি বিরূপ মনোভাবের কারণে ওয়াল স্ট্রিটের ধনকুবেররা ডেমোক্র্যাটদের প্রতি অধিক ঝুঁকেছেন। অন্যদিকে ইতিপূর্বে যেসব চাঁদাদাতা রিপাবলিকানদের জন্য নির্ভরশীল বলে প্রমাণিত হয়েছিলেন, তাঁদের অনেকে এবার হাত গুটিয়ে বসে আছেন।

মূল লড়াইটা হবে সেই সব অঙ্গরাজ্যে, যারা এখনো পুরোপুরি ‘লাল’ (অর্থাৎ রিপাবলিকান) বা ‘নীল’ (অর্থাৎ ডেমোক্র্যাট) রাজ্যে পরিণত হয়নি। গত আট বছরে রিপাবলিকান দল ক্রমশ দক্ষিণপন্থী হয়েছে, কিন্তু জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের কারণে ইতিপূর্বে ‘নিরাপদ লাল’ এমন একাধিক রাজ্য নীলমুখী হওয়া শুরু করেছে। অভিবাসী, নারী ও আফ্রিকান-আমেরিকান, ডেমোক্র্যাটরা এই তিন ধরনের ভোটারদের ওপর তাঁদের মনোযোগ নিবদ্ধ করেছেন। তাঁদের অধিকাংশ ট্রাম্পের প্রতি বিরূপ, সে কারণে যেখানে সম্ভব তাঁরা স্থানীয় রিপাবলিকান প্রার্থীকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে যুক্ত করে ব্যাপক প্রচারণায় নেমেছেন।

উদাহরণ হিসেবে নিউ হ্যাম্পশায়ারের কথা ধরা যাক। এখানে মধ্যপন্থী রিপাবলিকান সিনেটর কেলি আয়োটকে লড়তে হচ্ছে একই রাজ্যের ডেমোক্রেটিক গভর্নর ম্যাগি হ্যাসানের বিরুদ্ধে। আয়োট একসময় ট্রাম্পকে তাঁর ‘রোল মডেল’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন, যদিও পরে ট্রাম্প থেকে তিনি নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান নেন। কিন্তু ডেমোক্র্যাটরা আয়োটের সেই ভুলকে পুঁজি করে এখানে বড় ধরনের প্রচারে নেমেছেন।

বিপদের আশঙ্কা টের পেয়ে রিপাবলিকান নেতৃত্ব জোরেশোরে নেমেছেন চাঁদা সংগ্রহে। তাঁরা যুক্তি দেখাচ্ছেন, হিলারি হোয়াইট হাউসের দখল নিলে ডেমোক্র্যাটদের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ঠেকাতে যেভাবেই হোক কংগ্রেসে রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে হবে। স্পিকার পল রায়ান যুক্তি দেখিয়েছেন, আগামী চার বছরের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির মনোনয়ন। এই মুহূর্তে কোর্টের একটি আসন শূন্য, আগামী এক-দুই বছরে অবসর গ্রহণের কারণে আরও তিনটি আসন শূন্য হতে পারে। হিলারি এসব আসনে তাঁর পছন্দের উদারনৈতিক বিচারপতিদের মনোনয়ন দেবেন। সিনেট রিপাবলিকানের নিয়ন্ত্রণে থাকলে তাঁকে ঠেকানো সম্ভব হবে।

কোনো কোনো রিপাবলিকান চাঁদা প্রদানকারী রায়ানের যুক্তি মেনে কংগ্রেসের নির্বাচনের জন্য অধিক উদার হাতে চাঁদা দেওয়া শুরু করেছেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন কোক ভ্রাতৃদ্বয়। রক্ষণশীল বলে পরিচিত এ দুই ধনকুবের কংগ্রেসে রিপাবলিকান আসন রক্ষায় ১০ কোটি ডলারের বেশি খরচের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু তাতে শেষ রক্ষা হবে কি না, তা নিয়ে রিপাবলিকানদের নিজেদের মধ্যেই সন্দেহ রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ৮:০৫:৫৫   ৩০৪ বার পঠিত