সোমবার, ১৭ অক্টোবর ২০১৬

ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বহীনতায় ভোগান্তি হলো মানুষের

Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বহীনতায় ভোগান্তি হলো মানুষের
সোমবার, ১৭ অক্টোবর ২০১৬



324.jpg
বঙ্গ-নিউজঃ ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বহীনতায় ভোগান্তি হলো মানুষের
শফিকুর রহমান যাবেন ইতালিতে। তার ফ্লাইট ছিল শুক্রবার বেলা তিনটায়। বরিশাল থেকে তিনি ওই দিন সকালে ঢাকায় এসেছিলেন বিমানবন্দর যাবেন বলে। কিন্তু শফিকুর যেতে পারেনি। কারণ সদরঘাট থেকে মগবজার যেতেই সন্ধ্যা পেরিয়ে যায়। বিমানবন্দরমুখী সড়ক বন্ধ থাকায় নির্ধারিত সময়ে বিমানবন্দরে যেতে না পারায় তার টিকেট বাতিল হয়ে যায়।

শফিকুল জানতেন না এদিন বিমানবন্দর সড়ক যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। জানলে আগের দিনই চলে আসতেন ঢাকায়।

শফিকুল তো বরিশাল থেকে এসেছেন, তিনি না হয় জানতেন না, কিন্তু উত্তরার মাহতাব উদ্দিন কিংবা মগবাজারের রায়হান যে জানলেন পথে বেরিয়ে যখন আটকা পড়লেন বাসে।

ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বহীনতার কারণে এভাবে শুক্রবার দিনটি ভোগান্তির চরম নিদর্শন হয়েছে ঢাকাবাসীর জন্য।

পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনা প্রেসিডেন্ট ঢাকা সফরে কোথায় অবস্থান করবেন, কোন কোন পথে তার গাড়িবহর যাবে এগুলো আগে থেকে নির্ধারিত ছিল। ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্ব ছিল অন্তত দুই দিন আগে থেকে জনগণকে এটি জানিয়ে রাখা। তা হলে মানুষ ওই দিনটির জন্য সেভাবেই পরিকল্পনা করত।

তা না হওয়ায় অহেতুক ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়েছে মানুষকে। চীনা প্রেসিডেন্টের দুই দিনের সফরের প্রথম দিন কার্যত পুরো ঢাকায়ই ছিল স্থবির। রাজধানীবাসীকে গন্তব্যে যেতে হয়েছে পায়ে হেঁটে। সদূর টঙ্গী থেকে অনেককে পায়ে হেঁটে গুলিস্তান কিংবা ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে আসতে হয়েছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামছুল হক ঢাকাটাইমসকে বলেন, “চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফরে এসেছেন। এটি বাংলাদেশের জন্য অনন্য এক সুযোগ। কিন্তু তার আগমনকে কেন্দ্র করে মানুষের ভোগান্তি দেখে মনে হচ্ছে ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট কেমন হবে সেই বিষয়ে আমাদের পুলিশ বিভাগ উদাসীন ছিল। তারা কোনো নির্দেশনাই আগেভাগে জনসাধারণকে দেয়নি। মানুষ জানত না তারা কোন সড়কে যেতে পারবে, আর কোন সড়কে যেতে পারবে না।’

নিজের উদাহরণ দিয়ে ড. শামছুল হক বলেন, “আমি মহাখালী যাব, শাহবাগে এসে দেখি রাস্তা বন্ধ। আমি তো আগাম জানতাম না এই সড়ক বন্ধ থাকবে। আমি জানলে অন্য সড়ক ব্যবহার করতাম। কিংবা বিকল্প ভাবতাম। বিশ্বের অন্যান্য দেশে এ রকম বড় ইভেন্ট হয়। অনেক সড়ক বন্ধ থাকে। সেটা কিন্তু জনসাধারণ জানে। সেভাবেই তারা পদক্ষেপ নেয়।’

এই পরিবহন বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘মানুষ জানলেও হয়তো কষ্ট হতো, কিন্তু সেটা নিয়ে মানুষের মধ্যে কোনো ক্ষোভ থাকত না। তারা সাময়িক কষ্ট মেনে নিয়েই বিকল্প ব্যবস্থা করত।’

এক প্রশ্নের জবাবে ড. শামছুল হক বলেন, ‘ট্রাফিক পুলিশকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টে আরও স্মার্ট ও ডায়নামিকের পরিচয় দিতে হবে তাদের। স্মার্ট ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট মানেই হলো মানুষকে আগাম তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সাহায্য করা, তাদের সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করা।’ দক্ষ ও স্মার্ট ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টে অনেক সমস্যাই সহজে সমাধান করা যায় বলে মনে করেন তিনি।

ক্ষোভ প্রকাশ করে বুয়েটের সিনিয়র এই অধ্যাপক বলেন, ‘তাৎক্ষণিক রাস্তা বন্ধ করে দেয়ার মধ্যে কোনো ক্রেডিট নেই। বরং এতে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। জনগণের কাছে সরকারের বিরুদ্ধে ভুল বার্তা যায়। বরং পেশাদারি বজায়ে রেখে জনগণের সেবার মন নিয়ে কাজের মধ্যেই আসল কৃতিত্ব।’

গত শুক্রবার দুই দিনের সফরে ঢাকা আসেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তার এই সফরে তিনি রাজধানীর খিলক্ষেতে হোটেল লা মেরেডিয়ানে অবস্থান করেন। এ কারণে ওই এলাকার দুই কিলোমিটার রাস্তায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশ। এর প্রভাবে রাজধানীর সঙ্গে উত্তরা, টঙ্গী, গাজীপুরের যোগাযোগ এক রকম স্থবির হয়ে পড়েছিল। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং এরপর বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের নৈশ ভোজসভায় যোগদান ঘিরে বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হলে পুরো ঢাকা শহর স্থবির হয়ে পড়ে। ব্যাহত হয় মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।

বাংলাদেশ সময়: ১০:২৯:১৪   ৩৮০ বার পঠিত