রবিবার, ১৬ অক্টোবর ২০১৬
ধানমণ্ডির ইরফানুল ও হাসান হত্যার রহস্য এখনও অজানা
Home Page » এক্সক্লুসিভ » ধানমণ্ডির ইরফানুল ও হাসান হত্যার রহস্য এখনও অজানাবঙ্গ-নিউজঃরাজধানীর ধানমণ্ডি এলাকা থেকে চলতি বছর এপ্রিল ও জুলাইয়ে দুই ‘হাইপ্রোফাইল’ ব্যক্তি নিখোঁজের পর লাশ হয়েছেন। দুটি হত্যাকাণ্ডের ধরন ছিল একই। পরিবারের ভাষ্য মতে, দুজনের কোনও শত্রু ছিল না। তারা কাউকে সন্দেহও করছেন না। এ অবস্থায় কারা তাদের হত্যা করেছে-দীর্ঘদিন তদন্তের পরও এই প্রশ্নের উত্তর পায়নি পুলিশ।
গত ২ এপ্রিল ধানমণ্ডির ৮ নম্বর সড়কের ডাচ-বাংলা ব্যাংকে টাকা তুলতে গিয়ে নিখোঁজ হন দৃক পিকচার লাইব্রেরির প্রশাসনিক ও হিসাব কর্মকর্তা ইরফানুল ইসলাম। ওই দিনই দৃকের জেনারেল ম্যানেজার এসএম রেজাউর রহমান থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। একই দিন বিকালে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের জালকুঁড়ি এলাকায় তার লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় কলাবাগান থানায় নিহতের ভাই একটি মামলা করেন। এর তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পরিদর্শক মোহাম্মদ ইউসূফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই ঘটনার পর ধানমণ্ডি এলাকা থেকে সোহেল ও তুহিন নামের দুই সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে কিছু পাওয়া যায়নি। একজনের বিষয়ে নিশ্চিত যে, সে জড়িত নয়। আরেকজন মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে। তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘নিহতের স্বজনেরা আমাদের কোনও সহায়তা করছে না। তারা মামলার খোঁজও নেয় না। এমনকি তাদের সন্দেহের কথাও আমাদের জানায়নি। তারপরও তদন্ত চলছে। দেখি কী হয়।’
নিহত ইরফানুলের বড় ভাই ইমদাদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের কাউকে সন্দেহ হচ্ছে না। কারণ, ইরফানুল খুবই নীরব প্রকৃতির ছিলেন। তার কোনও শত্রু নেই। আমার ধারণা, এটা ছিনতাইয়ের ঘটনা। তবে তাকে ঢাকা থেকে কীভাবে নারায়ণগঞ্জ নেওয়া হলো, বুঝতে পারছি না। পথে কারও চোখে পড়লো না!’
তিনি বলেন, ‘মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কয়েকবার এসেছিলেন। তিনি আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। কথা বলেছেন দৃকের সঙ্গেও।’
দৃক কর্মকর্তারা জানান, অফিসের জন্য টাকা তুলতে প্রাইভেটকার নিয়ে ধানমণ্ডি-৮ নম্বর সড়কের ডাচ-বাংলা ব্যাংকে গিয়েছিলেন ইরফানুল। ব্যাংক থেকে তিনি ৩ লাখ ৮ হাজার টাকা তোলেন। ব্যাংকের সামনে গাড়িচালক তাকে নামিয়ে দিয়ে পাশের ৭ নম্বর সড়কে গাড়ি পার্কিং করে। ব্যাংকের সিসি ক্যামেরায় দেখা যায়, টাকা তুলে ইরফান স্বাভাবিকভাবেই বের হন।
পুলিশ কর্মকর্তাদের ধারণা, ছিনতাইয়ের কারণে ঘটনাটি ঘটেছে। ছিনতাইকারীরা হয়তো আগে থেকেই জানত যে, তিনি টাকা তুলবেন। ব্যাংকের সামনে ওঁৎ পেতে থাকা ছিনতাইকারী চক্রের কোনও দল ইরফানকে জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। এরপর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি এলাকায় ফিরোজ ফিলিং স্টেশন সংলগ্ন একটি বিলের পাশে লাশ ফেলে যায় তারা।
অপরদিকে, গত ২৩ জুলাই ডাচ-বাংলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিবিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট মো. হাসান খালিদ ধানমণ্ডির বাসার সামনে থেকে নিখোঁজ হন। নিখোঁজের তিনদিন পর বুড়িগঙ্গা নদী থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহতের ভগ্নিপতি আশরাফুল ইসলাম জানান, হাসান খালেদ স্ত্রী ও একমাত্র মেয়েকে নিয়ে ধানমণ্ডির ৪/এ নম্বর রোডে ৪৫ নম্বর বাসায় থাকতেন। সকালে নাস্তার আগে তার ওষুধ খেতে হয়। নাস্তার টেবিলে বসার সময় তিনি দেখেন, ওষুধ শেষ হয়ে গেছে। তখন নাস্তা না করেই তিনি ওষুধ কিনতে নিচে নামেন। এরপর তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ওই দিন রাতে তার স্বজনেরা ধানমণ্ডি থানায় জিডি করেন। জিডিতে অপহরণের আশঙ্কার কথা উল্লেখ করা হয়। ঘটনার দিন সকাল ৯টা পর্যন্ত ব্যবসায়ী হাসান খালেদের মোবাইল ফোনের লোকেশন ছিল ধানমণ্ডির ২৪/এ নম্বর রোড। এর পরপরই মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর ২৬ জুলাই দুপুরে কেরানীগঞ্জ থানাধীন বুড়িগঙ্গা এলাকায় তার লাশ মেলে।
নিহতের ভাই মুরাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মামলার কোনও অগ্রগতি নেই। ডিবি পুলিশ মামলা তদন্ত করছেন। গত সপ্তাহে ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।’
নিখোঁজের দুটি ঘটনাই ঘটে দিনের বেলা। তারপরও এর কোনও কুলকিনারা করতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অপহরণ কিংবা হত্যার কোনও ‘ক্লু’ পাচ্ছেন না তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
এই ঘটনায় ধানমণ্ডি থানায় দায়ের করা মামল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পশ্চিম বিভাগ তদন্ত করছে। উপ-কমিশনার (ডিসি) মাশরুকুর রহমান খালেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা তদন্ত করছি। সব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। ময়নাতদন্তে বলা হয়েছে, পানিতে ডুবে তার মৃত্যু হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা এখনও কোনও উপসংহারে আসেননি। তদন্ত চলছে।’
বাংলাদেশ সময়: ০:০৭:৩০ ৪১২ বার পঠিত