বুধবার, ১২ অক্টোবর ২০১৬
জিকার ঝুঁকিতে এশিয়া
Home Page » এক্সক্লুসিভ » জিকার ঝুঁকিতে এশিয়াবিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) সতর্ক করে বলেছে, এশিয়ার বিভিন্ন দেশে মশাবাহিত জিকা ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা অনেক বেশি। ডাব্লিউএইচওর সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। গত সোমবার ম্যানিলায় সংস্থার বার্ষিক আঞ্চলিক বৈঠকে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভাইরাসটি আরো ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। এই অঞ্চলের মধ্যে আছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশির ভাগ দেশ, চীন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া। প্রতিবেদনটি এমন সময়ে প্রকাশ করা হয়েছে যখন সিঙ্গাপুরে কয়েক শ লোক এবং থাইল্যান্ডে দুই শিশুর জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।সারা বিশ্বে ৭০টি দেশে জিকায় আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। এর মধ্যে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কমপক্ষে ১৯টি দেশে এ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে ডাব্লিউএইচওর পরিচালক মার্গারেট চ্যান বলেন, এখনো এই ভাইরাস প্রতিরোধের উপায় খুঁজছেন বিশেষজ্ঞরা। ম্যানিলায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত, বিজ্ঞানীদের কাছে এখনো জটিল অনেক প্রশ্নের উত্তর নেই।’
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশির ভাগ দেশসহ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মশাবাহিত এই ভাইরাস আরো ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ডাব্লিউএইচও ব্যক্ত করার আগে থেকে অবশ্য এ বিষয়ে সতর্ক অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে গত ১ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে অন্য দেশের নাগরিকদের সঙ্গে ১০ জনের বেশি বাংলাদেশি জিকায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়ার পর থেকেই তৎপর হয়ে ওঠে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো। গত ৩ সেপ্টেম্বর থেকে সিঙ্গাপুরফেরত সব যাত্রীর নাম-পরিচয়সহ শারীরিক অবস্থার সার্বিক তথ্য সংরক্ষণ শুরু করা হয় বিমানবন্দরে স্থাপিত বিশেষ স্বাস্থ্য ক্যাম্পে। পরে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় জিকার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে ওই সব দেশ থেকে আসা যাত্রীদেরও প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। গত ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে এ পদক্ষেপ কার্যকর করা হয়েছে। এসব দেশ থেকে আসা সব যাত্রীকে বিমান থেকে নেমে ইমিগ্রেশন লবিতে প্রবশ করার পথেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিশেষ টিমের মুখোমুখি হতে হয়। সেখানে নির্দিষ্ট দেশগুলো থেকে আসা যাত্রীদের বিশেষ স্বাস্থ্য ফরম পূরণ করে শরীর স্ক্যান করে ভেতরে ঢুকতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। জিকা ভাইরাস থেকে সুরক্ষার স্বার্থে সতর্কতা হিসেবে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড থেকে আসা সব যাত্রীর প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আর ৩ সেপ্টেম্বর থেকে একই পদক্ষেপ নেওয়া হয় সিঙ্গাপুর থেকে আসা যাত্রীদের ক্ষেত্রে। অবশ্য এর আরো আগে থেকেই জিকা নিয়ন্ত্রণে প্রস্তুতি ছিল। বিশেষ করে ব্রাজিল ও আফ্রিকার তালিকাভুক্ত দেশগুলো থেকে আসা যাত্রীদের ক্ষেত্রে একই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। আগের মতো এখনো সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড থেকে আসা সব যাত্রীকে তাদের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রশিক্ষিত চিকিৎসকদের আওতায় পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। কারণ অনেকের শরীরে তাৎক্ষণিক কোনো উপসর্গ বা লক্ষণ নাও থাকতে পারে, কিন্তু শরীরে বয়ে আনা বাহক থেকে পরবর্তী সময়েও এর প্রকাশ ঘটতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত জিকা ভাইরাসের উপসর্গ ধরা পড়েনি। এ ছাড়া দেশে প্রবেশ করা কারো শরীরে যদি জিকা শনাক্ত হয় তবে তাদের চিকিৎসার জন্য কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে বিশেষ ব্যবস্থা আছে। শনাক্ত করা রোগীদের দ্রুত ওই হাসপাতালে নিয়ে আসা হবে।
একই সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের শুরুর দিকে বিশ্বের ২৩টি দেশে মশকবাহিত ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া নিয়ে উৎকণ্ঠায় পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশও। তবে তখন বাংলাদেশে বা প্রবাসী কোনো বাংলাদেশি জিকায় আক্রান্ত না হলেও নানামুখী সতর্কতা ও প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নেয় সরকার। পরে গত মার্চ মাসে চট্টগ্রামে জিকায় আক্রান্ত এক রোগী শনাক্ত হন। চিকিৎসায় তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। ফলে জিকা ইস্যুটি অনেকটাই চাপা পড়ে যায়। এমনকি ঢাকায় বিমানবন্দরসহ আরো কয়েকটি স্থলবন্দরে বসানো বিশেষ স্ক্যানার অচল হয়ে পড়ে আছে। বিশেষ করে ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্থাপন করা তিনটি স্ক্যানারের একটি অনেক দিন ধরেই নষ্ট। ফলে দুটি চালু রাখা হয়েছে, যা দিয়ে সব যাত্রীর স্ক্যান করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
সূত্র মতে, ডেঙ্গুর মতোই জিকা ভাইরাস নিয়ে এ বছরের শুরুতে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও। সংস্থাটি ওই সময়ই গঠন করেছে বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে বিশেষ টিম। বেশির ভাগ দেশেই জারি করা হয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। এমন পরিস্থিতির মধ্যে এডিস মশা ও ডেঙ্গুপ্রবণ বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে এ রোগ নিয়ে দেখা দিয়েছিল উদ্বেগ।
বিশেষজ্ঞরা জানান, জিকা আর ডেঙ্গুর বাহক ও উপসর্গ অনেকটা একই হওয়ার কারণে বাংলাদেশে এক ধরনের ভীতি তৈরি হতে পারে। তবে জিকা আক্রান্ত হলেই সঙ্গে সঙ্গে তা ধরা মুশকিল। এটা মানুষের শরীরে দীর্ঘদিন ধরে সংক্রমিত হয়। শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ ক্ষেত্রেই এটা সময়মতো ধরা যায় না। যদি এ ভাইরাসের কারণে কারো জ্বর থেকে থাকে তবে পরীক্ষায় তা ধরা পড়ে। এ ছাড়া ডেঙ্গু আর জিকার মধ্যে পার্থক্য হলো ডেঙ্গুতে মৃত্যু ঘটলেও জিকায় মৃত্যুর ভয় নেই। এ ক্ষেত্রে বেশি ভয় নারীদের গর্ভের সন্তান নিয়ে। বিশেষ করে এ ভাইরাসে আক্রান্ত নারীদের ভ্রূণ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুদের মাথা ছোট হয় বা বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম নেয়। এ ছাড়া ডেঙ্গু আর জিকার লক্ষণও প্রায় একই। সাধারণত জ্বর, লালচে র্যাশ, শরীরে গিঁটে গিঁটে ব্যথা, চোখ লাল ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়। তবে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের উপসর্গ সাধারণত আগে দেখা যায় না। আর এ ভাইরাসে আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে ‘মাইক্রোসেফালি’ রোগ দেখা দেয়। তবে ডেঙ্গুর মতোই জিকার ঝুঁকিমুক্ত থাকতে মশা থেকে নিরাপদে থাকতে হবে। বিশেষ করে এডিস মশার বিস্তার রোধ ও নিধনে বেশি নজর দিতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪:১৩:০৬ ৩৯২ বার পঠিত