মঙ্গলবার, ১১ অক্টোবর ২০১৬
জাতীয় ঐক্য ছাড়া বিজয় সম্ভব নয় : মির্জা আলমগীর
Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » জাতীয় ঐক্য ছাড়া বিজয় সম্ভব নয় : মির্জা আলমগীর
বঙ্গ-নিউজঃ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতে জাতীয় ঐক্য দরকার। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে জনগণের অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে কোনো বিজয় অর্জন সম্ভব হয়নি যতক্ষণ না একটি জাতীয় ঐক্য তৈরি হয়েছে। এটাই ইতিহাস। সেই ঐক্য আমাদের সৃষ্টি করতে হবে। এজন্য ক্ষমতাসীনদের অত্যাচার থেকে রক্ষার জন্য তরুণ-যুবকদের এগিয়ে আসতে হবে। মনে হচ্ছে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার কাউকেই ছাড়বে না। তাই সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে। জাতীয় সংসদে সদ্য পাস হওয়া বৈদেশিক অনুদান সম্পর্কিত আইনের ধারা সংশোধনে উদ্বেগ প্রকাশ করে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহবান জানান মির্জা ফখরুল।আজ ছিল শহিদ নাজিরউদ্দিন জেহাদের ২৬তম শাহাদাৎবার্ষিকী। এ উপলক্ষে বিকালে ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আলোচনার সভার আয়োজন করে জেহাদ স্মৃতি পরিষদ।
এর আগে সকালে দৈনিক বাংলা মোড়ে জেহাদ স্কোয়ারে জেহাদের স্মৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে বিএনপি, ছাত্রদল, সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন সংগঠন।
বিকালের আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন নব্বইয়ের ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের নেতা এবং সংগঠনের সভাপতি আমান উল্লাহ আমান।
বিএনপি নেতা নাজিম উদ্দিন আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন- আশির দশকের ছাত্রনেতা ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, মুস্তাফিজুর রহমান বাবুল, খন্দকার লুৎফর রহমান, সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, আসাদুর রহমান খান, এবিএম মোশাররফ হোসেন প্রমুখ। এ ছাড়া যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ক ম মোজাম্মেল হক, যুবনেতা এসএম জাহাঙ্গীর, শ্রমিক দলের সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম খান নাসিম প্রমুখ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
সরকারকে ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারী আখ্যা দিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ পছন্দ করে না। কিন্তু এরপরও বিশ্বের যেসব দেশ গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলে, তারা তাকে খুব একটা অপছন্দ না করায় বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, পরিবর্তীত বিশ্ব প্রেক্ষাপটে আন্দোলনের নতুন কর্মকৌশল নির্ধারণ করে আমাদের সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে। না হলে ফ্যাসিবাদীদের হাত থেকে কেউ রেহাই পাবে না।
মির্জা আলমগীর অভিযোগ করে বলেন, আমাদের মারছে, ধরছে, জেলে নিচ্ছে। এখন এনজিও যারা কিছুদিন আগেও বিভিন্ন রকম কথা বলেছে- আইনের শাসনের কথা, সৎ মানুষ খোঁজা, সৎ নেতৃত্ব খোঁজা, যোগ্য নেতৃত্ব খোঁজা। এখন তাদের ওপরেও এরা চড়াও হয়েছে যে, তোমরা আমাদের বিরুদ্ধে একটা কথাও বলতে পারবা না। অর্থাৎ এরা কাউকে ছাড়বে না। ফ্যাসিবাদীরা কাউকেই ছাড়ে না। সুতরাং জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি না করলে, সবাই রুখে দাঁড়াতে না পারলে কেউই রেহাই পাবে না।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, এই দেশটা খালেদা জিয়ার একার নয়। শেখ হাসিনা বা এরশাদেরও একার নয়। দেশটা ষোল কোটি মানুষের। এদেশের মালিক জনগণ। অধিকার আদায়ের জন্য আমাদেরকেই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
সরকারের অপশাসনের কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, মানবসভ্যতার ইতিহাসে বহু নিদর্শন আছে, নিজেদের ব্যর্থতার কারণে একটা জাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, মানচিত্র থেকে সরে গেছে। আজকে কিন্তু আমাদের এই অবস্থা তৈরি হয়েছে, আমরা যদি নিজেরাই সংগঠিত হতে না পারি, আমাদের যদি নিজেদের সমস্যাগুলো বুঝতে না পারি, কী করতে হবে, তা যদি বুঝতে না পারি তাহলে মানচিত্র থেকে সরে যাওয়া আমাদের জন্য কিন্তু বিস্ময়কর ব্যাপার হবে না। এই বিষয়গুলো আমাদের মাথার ভেতরে রাখতে হবে।
তিনি বলেন, এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে এক হাজারের ওপরে আমাদের নেতাকর্মী প্রাণ দিয়েছেন। আমাদের কাছে তালিকা আছে। ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, পারভেজসহ ৫শ’ নেতাকর্মী নিখোঁজ হয়ে গেছে। দেশটা একটা হত্যাপুরীতে পরিণত হয়েছে। এখানে মানুষকে মেরে ফেললে জবাবদিহিতা করতে হয় না। অবলীলায় হত্যা করে কোনো জবাবদিহিতা নেই। এখানে তুলে নিয়ে গিয়ে আমার ছাত্র নেতাকে থানার মধ্যে বসিয়ে পায়ে গুলি করে পঙ্গু করে দেয়া হচ্ছে, কোনো জবাবদিহিতা করতে হয় না। বাবা-মাকে তুলে নিয়ে গিয়ে তাদের বেজ্জতি করা হচ্ছে, কোনো জবাবহদিহি নেই। অপরাধ একটাই ও তোমার ছেলে।
মির্জা আলমগীর বলেন, আমাদেরকে ক্ষুদ্র বিভেদ ভুলে গিয়ে সঠিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আগে নিজেদের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে এরপর জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। তাহলে আমরা এই দানবকে পরাজিত করতে পারবো। আমাদের মনে রাখতে হবে, আমাদের একমাত্র শক্তি জনগণ। সেই শক্তিকে নিয়ে এগুতে হবে। অন্য কেউ কোনো কিছু করে দেবে না। ঘরে ঘরে গিয়ে মানুষের মধ্যে বোধ তৈরি করতে হবে, মানুষের মধ্যে প্রতিবাদ করার ক্ষমতা তৈরি করতে হবে-এটাই হবে আমদের কাজ। শুধু কমিটি করে দিলাম, কমিটি হয়ে গেলো, কমিটি নিয়ে বসে থাকলাম, তারপরে সব ভুলে গেলাম-এটা করলে কিন্তু চলবে না।
মির্জা আলমগীর আরো বলেন, ২০১৪ সালে একটি জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচনে না যাওয়া। ৫ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে একটা জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছিল। এরশাদ ছাড়া কোনো রাজনৈতিক দল ওই নির্বাচনে যায়নি। কিন্তু আমাদের চূড়ান্ত বিজয় অর্জন সম্ভব হয়নি। সেই সারাদেশ বিছিন্ন হয়ে গিয়েছিল।
জেহাদের স্মৃতিচারণ করে মির্জা আলমগীর বলেন, জেহাদ গণতন্ত্রের জন্যই প্রাণ দিয়ে গেছেন। তিনি আমাদের শিখিয়েছেন আমরা তার আত্মত্যাগকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। অধিকার আদায়ে তার মতো আরো আত্মত্যাগ প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।
বাংলাদেশ সময়: ০:৪০:১৩ ৪৬৯ বার পঠিত