রবিবার, ৯ অক্টোবর ২০১৬
দাপুটে জয়ে সিরিজে ফিরল বাংলাদেশ
Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » দাপুটে জয়ে সিরিজে ফিরল বাংলাদেশবঙ্গ-নিউজঃ ব্যবধানটা খুব বড় নয়। স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল প্রথম ম্যাচেই। এবার সেটির বাস্তব প্রদর্শনীও দেখালো টাইগাররা। সিরিজে ফিরতে মরিয়া বাংলাদেশ রোববার বিপুলবিক্রমে চেপে ধরলো ইংল্যান্ডকে। তাতেই চিড়েচ্যাপ্টা ইংলিশরা। অধিনায়ক মাশরাফির অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইংল্যান্ডকে ৩৪ রানে হারিয়ে দিল বাংলাদেশ। এই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ফিরল স্বাগতিকরা। দুই ম্যাচ শেষে সিরিজের স্কোরলাইন ১-১।
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে এদিন প্রথমে ব্যাট করে ৮ উইকেটে ২৩৮ রান তোলে বাংলাদেশ। জবাবে ৪৪.৪ ওভারে ২০৪ রানে অলআউট হয় ইংল্যান্ড। সিরিজের ফয়সালা তাই তোলা রইল শেষ ম্যাচের জন্য। টাইগারদের পয়মন্ত মাঠ চট্টগ্রামের সাগরিকায় ১২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ। অলরাউন্ড নৈপুণ্যে মাশরাফি ম্যাচ সেরা হন।
পুঁজিটা খুব বড় ছিল না। তাই বল হাতে প্রতিমুহূর্তে আক্রমণই ছিল বাংলাদেশের শেষ আশ্রয়। বোলিংয়ের শুরুতে একপ্রান্তে সাকিব, অন্যপ্রান্তে মাশরাফি। ইংল্যান্ডের ব্যাটিং মেরুদন্ড ভেঙে দেন তারা দুজনই। ২৬ রানেই সাজঘরে ইংলিশ চার টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান। চতুর্থ ওভারেই সাফল্য আসে অধিনায়কের হাত ধরে। ভিন্স (৫) ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দেন মোসাদ্দেকের হাতে। পরের ওভারে সাকিবের বলে বোল্ড ডাকেট (০)। নিজের পরপর দুই ওভারে ২ রানের ব্যবধানে মাশরাফির তুলে নেন জ্যাসন রয় (১৩) ও বেন স্টোকসের (০) উইকেট।
পঞ্চম উইকেট অধিনায়ক বাটলার ও বেয়ারস্টো প্রতিরোধ গড়েন। তাদের আগ্রাসী ব্যাটিং ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল সবার মনে। ওই সময় ভরসা হয়ে দাঁড়ান তাসকিন। ২ ওভারে ১৯ রানের প্রথম স্পেলের পর দ্বিতীয় স্পেলেই আগুনে বোলিং করেন এই তরুণ পেসার। ২৪তম ওভারে বেয়ারস্টো উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন। প্রাণ ফিরে আসে মিরপুর স্টেডিয়ামে। দলীয় ১০৫ রানে বেয়ারস্টো আউট হন ৩৫ রান করে।
তারপর চলতে থাকে বাংলাদেশের উইকেট উৎসব। যার নেতৃত্বেও তাসকিন। মঈন আলী (৪) ফিরেন নাসিরের সাকিবের দুর্দান্ত ক্যাচের বলি হয়ে। বাংলাদেশের পথের কাঁটা বাটলারকে থামিয়ে দেন তাসকিন। আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা সৈকত এলবির আবেদনে সাড়া না দেয়ায় রিভিউ নেয় বাংলাদেশ। তাতে জয় পান তাসকিন। বাটলারের সংগ্রামের ইতি ঘটে ৫৭ রান করে। ইংল্যান্ডের শেষ ভরসা ক্রিস ওকসও (৭) তাসকিনের শিকার। বলটা ওকসের ব্যাটে চুমো দিয়ে জমা পড়ে মুশফিকের গ্লাভসে।
৯ম উইকেটে উইলি-রশিদের ২৭ রানের জুটি ও শেষ উইকেটে রশিদ-জ্যাক বলের ৪৫ রানের জুটি শুধু বাংলাদেশের জয়ই বিলম্বিত করতে পেরেছে। উইলিকে (৯) মোসাদ্দেক ও জ্যাক বলকে নাসিরের ক্যাচ বানিয়ে ইংল্যান্ডের ইনিংসের লেজটা মুড়ে দেন মাশরাফি। জ্যাক বল ২৮ ও রশিদ অপরাজিত ৩৩ রান করেন। ২৯ রানে ৪ উইকেট নেন মাশরাফি। তাসকিন ৩টি, সাকিব-নাসির-মোসাদ্দেক ১টি করে উইকেট নেন।
এর আগে কিছুটা স্পিন সহায়ক ও ব্যাটিংয়ের কঠিন উইকেটে সংগ্রাম করেছেন বাংলাদেশের টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানরা। ইংল্যান্ডের পরিকল্পিত শর্ট বলের ফাঁদে পা দিয়ে আউট হয়েছেন ইমরুল, তামিম ও মুশফিক। কম্পমান ব্যাটিংয়ের খোলস ছাড়িয়ে দাপুটে ব্যাটিং করেছেন শুধু মাহমুদউল্লাহ ও অধিনায়ক মাশরাফি। মাহমুদউল্লাহর ১৬তম হাফ সেঞ্চুরির পরও একটা সময় দুশো রানই দূরের গন্তব্য মনে হচ্ছিল। মাশরাফির উজ্জীবিত, বেপরোয়া ব্যাটিংয়ে সেই দূরত্ব পাড়ি দিয়েছিল বাংলাদেশ।
ম্যাচের বয়স এক ঘন্টা না পার হতেই ক্রিস ওকসের শর্ট বলের শিকার হয়ে ফিরেন দুই ওপেনার ইমরুল (১১) ও তামিম (১৪)। ব্যাটে লেগে বোল্ড হওয়া সাব্বিরের (৩) বিদায়ে ৩৯ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। সেই ধাক্কা সামাল দেন মাহমুদউল্লাহ-মুশফিকের ৫০ রানের জুটি। ইনিংসে ১২ রান করতেই সাকিব, তামিমের পর বাংলাদেশের তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে মুশফিক নাম লেখান ৪ হাজারী রানের ক্লাবে। মাইলফলক অতিক্রম করার দিনে ২১ রানেই ফিরেন মুশফিক। দলীয় ১১৩ রানে সাকিব (৩) ফিরলে পঞ্চম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। দ্রুত উইকেট পতনে রানের গতিও শ্লথ হয়ে আসে।
অবশ্য একপ্রান্তে মাহমুদউল্লাহর দর্শনীয় ব্যাটিং বিনোদন দিয়েছে দর্শকদের। ৫১ বলে তুলে নেন ক্যারিয়ারের ১৬তম হাফ সেঞ্চুরি। ষষ্ঠ উইকেটে মোসাদ্দেকের সঙ্গে তার জুটি থামে ৪৮ রান যোগ করে। ৪০তম ওভারে রশিদের বলে এলবির ফাঁদে পড়া মাহমুদউল্লাহ খেলেন ৮৮ বলে ৭৫ রানের (৬ চার) ইনিংস। মোসাদ্দেকের ৪৯ বলে ২৯ রানের সংগ্রামী ইনিংসেরও ইতি ঘটে রশিদের বলে। কাঁপতে কাঁপতে এগিয়ে চলা বাংলাদেশের ব্যাটিং তারপরই গর্জন তোলে অধিনায়ক মাশরাফির ব্যাটে। মঈন আলীকে দুটি ছক্কা মেরে শুরু করেন তিনি। মাশরাফির ব্যাটের তোপ সামলাতে হয়েছে উইলি, ওকসকেও। নাসিরের সঙ্গে ৮.১ ওভারে গড়েছেন ৬৯ রানের জুটি। তাতেই দুশো পার হয় বাংলাদেশ।
ইনিংসের এক বল বাকি থাকতে রান আউট হওয়ার আগে বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে মাশরাফি খেলেছেন ২৯ বলে মহামূল্যবান ৪৪ রানের (২ চার, ৩ ছয়) ইনিংস। অনেকদিন পর সুযোগ পাওয়া নাসির খেলেছেন অপরাজিত ২৭ রানের কার্যকর ইনিংস। ইংল্যান্ডের ওকস, আদিল রশিদ ও জ্যাক বল ২টি করে উইকেট নেন।
বাংলাদেশ সময়: ২২:৪৪:১২ ৩৮২ বার পঠিত