শনিবার, ৮ অক্টোবর ২০১৬
আজ মহাসপ্তমী দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখরিত মণ্ডপগুলো
Home Page » জাতীয় » আজ মহাসপ্তমী দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখরিত মণ্ডপগুলোবঙ্গ-নিউজঃ ধরাধামের চারদিক মুখরিত ‘আনন্দময়ী’ দেবী দুর্গার আগমনী গানে। মহাষষ্ঠী তিথিতে বিল্বতলে (বেলগাছ তলায়) দেবী দুর্গার বোধন, আবাহনের মাধ্যমে শুক্রবার সকাল ৮টা ২৩ মিনিটে শুরু হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। সার্বজনীন এ উৎসবে সকাল থেকে বিপুলসংখ্যক ভক্ত-পূজারীর পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে একেকটি পূজামণ্ডপ।
পুরান ঢাকার বাংলাবাজার, শাঁখারী বাজারসহ আশপাশ এলাকায় এবার বেশকিছু স্থানে পূজামণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে বাংলাবাজারের শ্রীশ্রীলক্ষ্মীনারায়ণ জিউ ঠাকুর মন্দিরে স্থাপিত মণ্ডপে গিয়ে দেখা যায় ভক্তদের প্রচণ্ড ভিড়।
শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা বাণীতে দেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এবার পূজার সরকারি ছুটি ১১ অক্টোবর।
দুর্গোৎসব উপলক্ষে সরকার ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। পূজার প্রথম দিন র্যাবের মহাপরিচালক ঢাকার একটি পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি শান্তিপূর্ণভাবে উৎসব উদযাপনে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পূজার প্রধান পুরোহিত রঞ্জিত চক্রবর্তী বলেন, শুক্রবার প্রাতঃকালে ষোড়শ উপচারে দেবীর আবাহন করেছি আমরা। পুরান ঢাকার শ্রীশ্রীলক্ষ্মীনারায়ণ জিউ ঠাকুর মন্দিরের পুরোহিত বিশ্বনাথ চক্রবর্তীও জানালেন তেমনটাই। তিনি বলেন, বিল্ববৃক্ষ মহাদেবের ভীষণ প্রিয়, পদ্মযোনী ব্রহ্মাও বিল্ববৃক্ষে দেবীকে প্রথম দর্শন করেন। তাই আমরা প্রথমেই দেবীকে বিল্ববৃক্ষ তলেই আবাহন করছি। আজ (শুক্রবার) দেবী আবাহনের মধ্যে সংকল্প করেছি, দশমী পর্যন্ত যথাবিধ উপায়ে আমরা মায়ের পূজা করব।
সারা দেশে এবার ২৯ হাজার ৩৯৫টি মন্দিরে একই লগ্নে পূজা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে ২২৯টি মণ্ডপে পূজা হচ্ছে। শুক্রবার সকালে এক সাংবাদিক সম্মেলনে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি জানায়, মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় হবে বিজয়া শোভাযাত্রা। পুরান ঢাকার ওয়াইজঘাটে হবে প্রতিমা বিসর্জন। বিকাল ৪টার মধ্যেই নিজ নিজ মণ্ডপের প্রতিমা নিয়ে শোভাযাত্রায় যোগ দেয়ার আহ্বান জানানো হয়।
মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার রায় বলেন, সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকে মানুষ অসুর শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে বিজয় অর্জন করছে। শারদীয় দুর্গোৎসবের মধ্য দিয়ে মানবজাতির এই শাশ্বত সংগ্রামের বার্তাই ঘোষিত হয়। দেবী দুর্গা মাতৃস্বরূপা, শক্তিরূপিণী। অসুর নিধন করে তিনি শুভবুদ্ধির পথ দেখান। তিনি বলেন, শুক্রবার আবাহনের মাধ্যমে মূল মণ্ডপে দেবী আসীন হওয়ার পর সন্ধ্যায় দেবীর অধিবাস।আজ সকাল ৮টা ৫৭ মিনিটে দেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপনের মাধ্যমে মহাসপ্তমী পূজা হবে। রোববার মহাঅষ্টমী পূজার পর হবে কুমারী পূজা। সেদিন সন্ধ্যায় সন্ধিপূজা। এরপর সোমবার মহানবমী। মঙ্গলবার সকালে দশমীবিহিত পূজা ও বিসর্জনে শেষ হবে দুর্গোৎসব।
পূজার সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে শ্যামল কুমার রায় বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনশৃংখলা পরিস্থিতি কঠোরভাবে মনিটর করছে। পুলিশ ও আইনশৃংখলা বাহিনীর পাশাপাশি পূজা কমিটির স্বেচ্ছাসেবকরা প্রতিটি মণ্ডপে নিয়োজিত রয়েছেন। তিনি বলেন, সমাজ ও রাজনীতি থেকে সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মান্ধতা নির্মূল করতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারের পাশাপাশি সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে একযোগে কাজ করতে হবে।
বাংলাবাজার সার্বজনীন দুর্গোৎসব সমিতির সভাপতি শ্যামল পাল দুর্গাপূজার সার্বজনীনতা সম্পর্কে বলেন, আমরা বাংলাবাজারের হরিশচন্দ্র বসু স্ট্রিটে শ্রীশ্রীলক্ষ্মীনারায়ণ জিউ ঠাকুর মন্দিরে গত ৮৩ বছর ধরে শারদীয় দুর্গোৎসব পালন করে আসছি। এটি সার্বজনীন এক উৎসব। পুজো উপলক্ষে অতিথি আপ্যায়ন, প্রসাদ বিতরণ, গরিব-দুঃখী মানুষের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ ইত্যাদি কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে। পূজা মানেই সবাই মিলে আনন্দ করা। আমরা চাই এ উৎসবের মধ্যে দিয়ে সারা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।
দুর্গোৎসব চলাকালে পূজা মণ্ডপগুলোতে প্রতিদিনই অঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও ভোগ-আরতি হবে। এছাড়া আলোকসজ্জা, আরতি প্রতিযোগিতা, স্বেচ্ছায় রক্তদান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, দশভূজা দেবী দুর্গা অসুর বধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতি শরতে কৈলাস ছেড়ে কন্যারূপে মর্ত্যলোকে আসেন। সন্তানদের নিয়ে পক্ষকাল পিতার গৃহে কাটিয়ে আবার ফিরে যান দেবালয়ে। আশ্বিনের শুক্লপক্ষের এ ১৫টি দিন দেবীপক্ষ।
ঢাবির জগন্নাথ হল : শারদীয় দুর্গোৎসব বয়ে আনুক শান্তি, সম্প্রীতি ও সমৃদ্ধি- এ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে শুরু হয়েছে দুর্গাপূজা উৎসব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জগন্নাথ হল সার্বজনীন পূজা কমিটি-১৪২৩ উৎসবের আয়োজন করেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দেবীর বোধনের মধ্য দিয়ে উৎসব শুরু হয়। মঙ্গলবার পর্যন্ত হলের উপাসনালয়ে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা চলবে।
পূজায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা, হেলিকপ্টারে টহল : শুক্রবার সকালে রাজধানীর বনানী খেলার মাঠে স্থাপিত পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন করেন র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। এ সময় তিনি বলেন, আইএসের সাময়িকীতে বাংলাদেশে আরও হামলার হুমকি এক ধরনের অপপ্রচারণা। এদেশে আইএসের কোনো অস্তিত্ব নেই। তিনি বলেন, সবার সহযোগিতায় শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ, উৎসবমুখর পরিবেশে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন হবে। পূজামণ্ডপের নিরাপত্তায় র্যাবের হেলিকপ্টার ইউনিট টহল দেবে। এছাড়া র্যাবের গোয়েন্দা সদস্য, পেট্রোল টিম, ডগ স্কোয়াড, বোমা ডিসপোজাল ইউনিট ও পূজা কমিটির নিজস্ব নিরাপত্তা সংশ্লিষ্টরা একসঙ্গে কাজ করবে।
বেনজীর আহমেদ বলেন, সারা দেশে ২৯ হাজারের বেশি পূজামণ্ডপের নিরাপত্তায় র্যাবের ১৪টি ব্যাটালিয়ন ও ৫৪টি ক্যাম্প কাজ করবে
বাংলাদেশ সময়: ১২:৩২:৩৯ ৪৪১ বার পঠিত