শুক্রবার, ৭ অক্টোবর ২০১৬
বদরুলের কেমন শাস্তি চায় দেশবাসী?
Home Page » জাতীয় » বদরুলের কেমন শাস্তি চায় দেশবাসী?বঙ্গ-নিউজঃ বদরুলের নির্মম চাপাতির কোপের আঘাতে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে খাদিজার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে তিনি এখনো লাইফসাপোর্টে লড়ছেন। এভাবে তাকে রাখা হবে আরো একদিন।
শনিবার খাদিজা আক্তার নার্গিসের বাঁচা না বাঁচার হয়তো কিছু ধারণা দিতে পারবেন তার চিকিৎসকরা। এমনটাই জানিয়েছেন খাদিজার সঙ্গে থাকা তার স্বজনরা।
এদিকে সিলেটসহ দেশের সচেতন প্রতিবাদী জনতা বদরুলের বর্বর হামলার জন্য তার ফাঁসির দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। সর্বস্তরের মানুষ তার নৃশংস ও নিষ্ঠুর হামলায় হতভম্ব ও হত বিহব্বল। যা তার নিজ গ্রামবাসীকেও হতবাক করেছে। তার মা, ভাই, চাচা ও স্কুলশিক্ষকসহ পুরো গ্রামের মানুষকে করেছে লজ্জিত। ছোটবেলার তার স্কুল শিক্ষক সাংবাদিকদের এমনটাই বলেছেন।
বিশেষ করে যারা খাদিজাকে কোপানোর ধারনকৃত ভিডিওটি দেখেছেন তারা বদরুলের নৃশংসতায় বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন। অনেকে এ দৃশ্য দেখে রিতিমতো হাউমাউ করে কেঁদেছেন, এখনো কাঁদছেন।
বর্বর বদরুলের চাপাতির আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়া অসহায় খাদিজার ‘মাইগো’ ‘মাইগো’ চিৎকারের সাথে কোপের পর কোপ মারতে দেখে বুকটা কেঁপে উঠেছে সবার।
সোমবার (০৩ অক্টোবর) এমসি কলেজের পুকুরপারে সংগঠিত এ জঘন্য বর্বরতার প্রতিবাদে গত চার দিন থেকে সিলেট মহানগরী উত্তাল। মানুষ প্রতিবাদ করছেন, বদরুলের ফাঁসির দাবি জানাচ্ছেন।
সেই সাথে ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমেও এর কঠোর শাস্তির দাবি তুলেছেন দেশ-বিদেশের লাখো মানুষ।
একই সাথে মোবাইল ফোনে কেউ কেউ সংবাদ মাধ্যমের কাছে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। আতঙ্ক আর হতাশা নিয়ে বদরুলের প্রতি প্রকাশ করেছেন হৃদয়ের সবটুকু ঘৃণাও।
বিক্ষুব্দ কেউ কেউ অভিনব কিছু শাস্তির আইডিয়া দিয়েও প্রকাশ করছেন নিজেদের দুঃখ ক্ষোভ আর ঘৃণা।
সাংবাদিক মাইদুর রহমান রুবেল তার ফেসবুক এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ”কী সাজা হওয়া দরকার এ বদটার?
ওর মাংস কুচি কুচি করে কিমা করে বিফ বার্গারের মতো করে কুত্তারে খাওয়ালে কেমন হয়? অথবা চিড়িয়াখানায় বাঘ কিংবা সিংহের খাচায় ঝুলিয়ে দিলে কেমন হয়? কোমর অবদি যাতে খেতে পারে, বাকিটা ঝুলে থাকলো। অনেক দিন তাজা মাংস খায় না প্রানীগুলো।”
সাংবাদিক সালমান ফরিদ ঘটনার পরদিন এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, তার সারমর্ম হচ্ছে বদরুলকে ফাঁসি দেওয়া মানে করুণা করা। তার দরকার নেই। সিলেটবাসীকে দাওয়াত দিয়ে তাকে কোর্ট পয়েন্টে এনে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত কেবল কোপাতে থাকলেও তার বর্বতার যথেষ্ট শাস্তি হবেনা।
সুনামগঞ্জ জেলা শহরের আব্দুল করিম (৪৫)। বদরুলের নিজের জেলার এই মানুষটা মঙ্গলবার রাতে এক সংবাদকর্মীল সঙ্গে মোবাইলে আলাপকালে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন।
তিনি বলছিলেন, ‘মানুষ নয়, এইটা মানুষ নয়। মাইনষে মাইনষেরে এইভাবে কোপাতে পারে? ফাঁসি চাই, এই জানোয়ারের ফাঁসি চাই।’
গোলাপগঞ্জ উপজেলা সদরের ব্যবসায়ী হাসানুজ্জামান (৩৩)। বুধবার সকালে বলেন, ‘দুনিয়ার সবতাকি জঘন্য কাম করলো এই পশুটায় (বদরুল)। তারে এমসি কলেজ তাকি গলাত দড়ি বান্দিয়া, পিছর উফরেদি টানি টানি নিত শাবি ক্যাম্পাসো, এর বাদে সিলেটর সব রাজপথ ঘুরাইয়া খালি পাথর মারলেও ভাই আমার দুখ মিটতনায়। আমারও এগু বইন কলেজো ফড়ে’ বলতে বলতে কেঁদে ফেললেন হাসান।
গোয়াইনঘাটের কলেজ ছাত্রী নাবিলা জান্নাত অমির (২০) মনের অবস্থা একেবারে কাহিল। বুধবার খুব ভোরে ফোন করে তিনি খাদিজার সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলেন। তারপর কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘ভাই, ভয় পেয়ে আমাকে কলেজ ছাড়ানোর চিন্তা করছেন মা-বাবা। খাদিজা সুস্থ হলে এমসি কলেজের পুকুর পারের ওই জায়গাটায় নিয়ে ওই রকম চাপাতি দিয়ে খাদিজা নিজ হাতে যদি কয়েকটা কোপ দিতে পারত!’ বলেই কাঁদতে কাঁদতে ফোনের লাইনটা কেটে দেন অমি।
এদিকে বদরুলের শাস্তির আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংসদে তিনি এমন পৈশাচিক হামলার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, মানুষের মূল্যবোধ ও মানবিকতা কেন হারিয়ে গেল। কেউ এগিয়ে গেল না খাদিজাকে বাঁচাতে! অপরাধীর শাস্তি হবেই। সে রাজনৈতিক প্রশ্রয় পাবে না।
প্রধানমন্ত্রীর এ আশ্বাসের পর দেশবাসীর মনে বদরুলের শাস্তির ব্যাপারে আশার আলো জ্বলেছে বলে সামাজিক মাধ্যমে অনেকে মন্তব্য করেছেন।
এছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও বদরুলকে ছাড় না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
অপরদিকে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়ও বৃহস্পতিবার রাতে তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে খাদিজার ওপর আক্রমণকারী পাড় পাবে না বলে মন্তব্য করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০:৫৯:৪৭ ৪০৪ বার পঠিত