মঙ্গলবার, ৪ অক্টোবর ২০১৬

রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা স্থগিত করলো যুক্তরাষ্ট্র

Home Page » বিশ্ব » রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা স্থগিত করলো যুক্তরাষ্ট্র
মঙ্গলবার, ৪ অক্টোবর ২০১৬



102.jpgবঙ্গ-নিউজঃ  জন কারবি
রাশিয়ার সঙ্গে সিরিয়া-বিষয়ক আলোচনা স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সিরিয়ায় চলমান সহিংসতা বন্ধে অস্ত্রবিরতি চুক্তির শর্তাবলি মেনে চলতে রুশ কর্তৃপক্ষ আন্তরিক নয় বলে ওয়াশিংটন অভিযোগ করেছে।
সোমবার (৩ অক্টোবর) মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র জন কারবি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘সিরিয়ায় সহিংসতা বন্ধের লক্ষ্যে রাশিয়ার সঙ্গে যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা চলছিল, তা যুক্তরাষ্ট্র স্থগিত করছে।’ তিনি সতর্ক করে জানান, ‘এই সিদ্ধান্তকে হালকাভাবে নেওয়ার অবকাশ নেই।’
ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে রাশিয়া তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা আসাদ সরকারকে অস্ত্রবিরতি মেনে চলতে চাপ সৃষ্টি করতে পারেনি।’
রুশ বিমান হামলা এবং ইরানি মিলিশিয়াদের সহায়তায় সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অনুগত বাহিনী আলেপ্পোর বিদ্রোহী অধ্যুষিত এলাকার একটি হাসপাতাল এবং নগরীর পানি সরবরা ব্যবস্থায় হামলা চালানোর প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্র এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে।
রুশ-মার্কিন আলোচনা ভেঙে যাওয়ায় সাড়ে পাঁচ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধ বন্ধের কূটনৈতিক সমাধানে আরেকটি ধাক্কা আসলো। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র বিদ্রোহীদের ঘাতক সমরাস্ত্র, রসদ ও প্রশিক্ষণ সহযোগিতা বাড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাশিয়াও সামরিক সহযোগিতা বাড়াতে পারে। যার ফলাফল হতে পারে, আরও ভয়াবহ।
গত সপ্তাহেই রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা ভেঙে যেতে পারে বলে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি সতর্ক করেছিলেন।

সের্গেই লাভরভ ও জন কেরি

গত ১০ সেপ্টেম্বর গৃহযুদ্ধ কবলিত সিরিয়ায় কয়েক বছর ধরে চলে আসা সহিংসতা বন্ধে প্রেসিডেন্ট আসাদের ঘনিষ্ট মিত্র রাশিয়া এবং বিদ্রোহীদের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র একমত হয়। দীর্ঘ আলোচনার পর জেনেভায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি এবং রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ অস্ত্রবিরতি চুক্তির ঘোষণা দেন। ওই চুক্তির শর্ত ছিল, ১২ সেপ্টেম্বর সূর্যাস্তের পর থেকে সিরিয়ার সরকারি বাহিনী এবং বিদ্রোহীরা পরস্পরের ওপর হামলা চালানো থেকে বিরত থাকবে। এছাড়া অস্ত্রবিরতি সফল হলে আইএস ও জাবাথ ফাতেহ আল-শাম (সাবেক আল-নুসরা ফ্রন্ট) প্রতিরোধে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া যৌথভাবে হামলা চালাবে। সেই সঙ্গে আসাদ বাহিনী ও বিদ্রোহীরা নিজেদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় কোনও হস্তক্ষেপ করবে না। শর্ত মোতাবেক সেই অস্ত্রবিরতি শুরুও হয়। তবে ওই অস্ত্রবিরতি কার্যকর হওয়ার একদিনের মাথায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে সেই চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। একইসঙ্গে শুরু হয় রুশ-মার্কিন পারস্পরিক অভিযোগ। সে সময়ে জাতিসংঘ অভিযোগ করে, আলেপ্পোতে ত্রাণ পৌঁছাতে বাধা দিচ্ছে আসাদ সরকার। বিপরীতে রাশিয়ার অভিযোগ, মার্কিন সমর্থিত বিদ্রোহীরা চুক্তিভঙ্গ করছে। জাতিসংঘের সঙ্গে সুর মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, সরকার ও কুর্দি বিদ্রোহীরা ত্রাণ সরবরাহে বাধা দিচ্ছে।

বিধ্বস্ত আলেপ্পো

উল্লেখ্য, ২০১১ সালের মার্চে সিরীয় গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে সরকারি হিসেবেই সেখানে নিহতের সংখ্যা ৩ লাখের কিছু কম হলেও সিরীয় যুদ্ধ পর্যবেক্ষণে নিয়োজিত যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস তাদের নিজস্ব পর্যবেক্ষণ সূত্রে ৪ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কার কথা জানিয়েছে। সিরিয়ান অবজারভেটরি বলছে, ওই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত প্রাণহানির সংখ্যা ৪ লাখ ৩০ হাজারের মতো।

সিরিয়ার চলমান সংকট নিয়ে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান বিপরীতমুখী। বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এ জন্য তারা আসাদ সরকারের বিদ্রোহ ঘোষণাকারী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সামরিক সহযোগিতা করছে। অভিযোগ রয়েছে, তারা মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে বিমান হামলার নামে সরকারি বাহিনীর ওপর হামলা চালাচ্ছে। আর রাশিয়া বাশার আল-আসাদকেই ক্ষমতায় দেখতে চায়। তারা আসাদ সরকারের সমর্থনে আইএস ও বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধকে মার্কিন-রুশ ‘ছায়াযুদ্ধ’বলেও মনে করছেন অনেকে।

বাংলাদেশ সময়: ৯:৩১:৫২   ৩৭৪ বার পঠিত