শনিবার, ১ অক্টোবর ২০১৬

বংশীনদীতে নৌকা ভ্রমণ

Home Page » বিনোদন » বংশীনদীতে নৌকা ভ্রমণ
শনিবার, ১ অক্টোবর ২০১৬



1.JPG
বঙ্গ নিউজ ঃ সাভারের বংশীনদীতে নৌকা ভাড়া করে এই সময় ঘুরে বেড়াতে বেশ লাগে। রাজধানীর কোলাহল ছাপিয়ে এই আনন্দ উপভোগ করা যায় যে কোনো দিন।
সাদা পাথরের দেশে

পদ্মাপাড়ের মৈনট ঘাট

পাংখোয়াদের স্বর্গপল্লী

আর সেই আনন্দভ্রমণ করে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নিয়ে এবারের বেড়ানোর আয়োজন জানাচ্ছেন পরিব্রাজক ও চিত্রগ্রাহক ফারুখ আহমেদ।

ছোট বেলায় বাব-মায়ের সঙ্গে লঞ্চে চড়ে বুড়িগঙ্গা হয়ে কাঠপট্টি নানীবাড়ি চলে গেছি। আবার কখনও একা চলে গেছি বহুবার। সেই সময়কার বুড়িগঙ্গা হয়ে ধলেশ্বরী শীতলক্ষ্যার স্বপ্নতুল্য ভ্রমণ আমার মনে এমনভাবে গেঁথে গেছে যে নদী দেখলেই মনে হয় ভেসে চলি।

আর নদীও আমায় নিরাশ না করে ভাসিয়ে নিয়ে চলে!

বর্ষাকাল শেষ হয়ে এখন মধ্য শরত শুরু হলেও আকাশে মেঘেদের ঘনঘটা কমেনি। মেঘ-বৃষ্টির সঙ্গে পেঁজাতুলোর মেঘ ভাসা নীলাকাশ। বর্ষার মতোই শরতের সঙ্গে আমাদের নাড়ির টান।

আরেক টান আমাদের নদীর সঙ্গে। বর্ষায় নদী পূর্ণ যৌবনবতী। তার সে রূপ এখনও ঠিক ঠিক রয়েছে। এই সময় নৌকায় চড়ে নদীতে ঘুরে বেড়ানোর মজাই আলাদা।

এমন এক বৃষ্টিভেজা দিনে বের হলাম নদী ভ্রমনের জন্য।

মটরবাইক শাহাবাগ আর গাবতলির কাছে দুইবার দাঁড় করিয়ে এক ঘণ্টায় সাভার চলে আসি। আসলে বাসা থেকে বের হয়েই মাঝি নূরুল ইসলামের কথা মনে পড়ে যায়।

বংশীনদীতে তার বাসায় গুড়-মুড়ি আর বড়ই খাওয়ার মধুর স্মৃতি ভুলি কী করে! আমরা আজ সাভারের কাছে বংশী বা বংশাই নদীতে ঘুরে বেড়াবো!

বংশাই ইতিবৃত্ত: সাভার একটি প্রসিদ্ধ এলাকা। এখানকার মিষ্টির সুনাম সারা দেশে। সাভারের সাপের গ্রামের মতো এমন আরেকটি গ্রাম নেই দেশে।

সাভার বংশীনদের তীরে অবস্থিত। এই এলাকার মডেল থানার সামনের বংশীনদীর তীরে বিকালে বেশ লোক সমাগম ঘটে। বর্ষা আর শরতে আরও বেশি।

এখানে নৌকা ভ্রমণের মজাই অন্য রকম। বেদের বহর আর চমৎকার নৌকা অহরহ চোখে পড়বে। সুতরাং পানি থাকতে থাকতে আপনারাও একবার নৌকায় করে বংশীনদীতে বেড়িয়ে আসতে পারেন।

বংশীনদীতে: পোড়াবাড়ি থেকে সাভার মডেল থানা যাওয়ার পথটি মেঠোপথ। প্রাকৃতিক শোভা সে অর্থে এখানে মনকাড়ে না। তবে পাশের বংশীনদীর শোভা ভারি সুন্দর।

আমরা দশ মিনিটে মডেল থানার কাছে চলে আসি। এখানে নদীতে বেড়াতে আসা মানুষের ভীড় চোখে পড়ার মতো। নূরুল ইসলাম মাঝিকে খুঁজে পাওয়া গেল না, অন্য একজন মাঝির সঙ্গে নৌকা ভাড়া দরদাম করে সে নৌকায় চড়ে বসি।

নৌকা গতি পেতেই সামনে চেয়ে দেখি একটি বাঁশের ভেলা এগিয়ে আসছে। মুখ থেকে অস্ফুট সুর- বাহ! এভাবেই আমাদের নৌকা তরতর করে এগিয়ে চলে।

উচ্ছাসে ভরা বংশাইর সৌন্দর্য অবর্ণনীয়। এপথে আামি শীতের প্রচণ্ড রূপ দেখেছিলেম। এবার এসেছি বর্ষায়।

নদীর একপাশে অনেক গাছের খড়ি, এসব দিয়ে কাঠ করা হবে। পানকৌড়ির দল আর ছুটে চলা মাছরাঙা অতিমনোহর। চলতি পথে অনেক ভেসাল দৃশ্যত; হল। আর জাল নিয়ে ছুটে চলা একদল শিশু-কিশোর। বালুর নৌকা, জেলে নৌকা, মাছের ডিঙ্গি নাও, সাম্পান, কোসা নৌকা। আসলে কি রেখে কি বলি, সঙ্গে পিকনিকের নাও তো ছিল অনেক।

তবে স্পিকারে সেই নৌকা থেকে হিন্দি গান আর উদ্ভট নাচ ভালো লাগলো না, মনে হল পরিবেশটাই শেষ হয়ে গেল, আর এভাবেই আমাদের নৌকা এগিয়ে চলে।

এরইমধ্যে হঠাৎ আকাশ কালো হয়ে এল। তারপর ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে বাতাসের তীব্রতা। একটু পরই আকাশ থেকে মেঘ সরতে শুরু করলে আমরাও ফেরার পথ ধরলাম।

ফিরতি পথে চোখে পড়ল একঝাঁক বেদেনৌকা। বংশীপাড়ের বেদেপল্লি কিন্তু সারাদেশ খ্যাত!

বংশীনদীতে বেড়াতে চাইলে: গুলিস্তান বা গাবতলি থেকে সাভারগামী বাসে চড়ে বসুন। সাভার বাসস্ট্যান্ডে নেমে রিকসায় সাভার মডেল থানার কাছে চলে এলেই হবে।

এখান থেকে আপনার পছন্দের নৌকাটি বেছে নেন। বিপদে পড়বেন না। তবু নৌকায় চড়ার আগে ঘণ্টা চুক্তি করে ফেলুন। মনে রাখবেন বংশীনদীতে বেড়ানোর মজাই আলাদা।

বাংলাদেশ সময়: ১০:৩৬:০৪   ৩৯০ বার পঠিত