শুক্রবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ভালুকায় বাণিজ্যিকভাবে কুমির চাষ

Home Page » বিজ্ঞান-প্রযুক্তি » ভালুকায় বাণিজ্যিকভাবে কুমির চাষ
শুক্রবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬



full_1859956896_1440154765.jpgবঙ্গ নিউজ ঃ ময়মনসিংহের ভালুকায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উভচর সরীসৃপ প্রাণী কুমিরের চাষ হচ্ছে ১২ বছর ধরে। ইতোমধ্যে উৎপাদিত কুমিরের চামড়া রপ্তানি হয়েছে বিভিন্ন দেশে। এবার মাংস রপ্তানির ঘোষণা দিলেন উৎপাদকারী প্রতিষ্ঠান। সবমিলিয়ে রপ্তানিবাণিজ্যে কুমিরের উজ্জল সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ভালুকা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরে ভরাডোবা-সাগরদিঘী সড়কের উপজেলার উথুরা ইউনিয়নের হাতীবেড় গ্রামে রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেড নামে প্রতিষ্ঠান কুমির চাষ ও রপ্তানি করছে।

সূত্রে জানা যায়, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় বিগত ২০০৪ সালের ৫ মে খামারটি প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেয় এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা সিআইটিইএস’র অনুমোদন নিয়ে ওই বছরের ডিসেম্বর মাসে মালয়েশিয়ার সারওয়াত থেকে এক কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৫টি পুরুষ এবং ৬০টি মা কুমির আমদানি করেন। পরে ২২ ডিসেম্বর কুমিরগুলোকে খামারে অবমুক্ত করা হয়। তখন আমদানি করা কুমিরগুলোর বয়স ছিল গড়ে ১০-১৪ বছর আর কুমিরগুলো লম্বায় ছিল ৭-১২ ফুট।

পরবর্তী সময়ে ২০০৬ সালের আগস্ট মাসে ওই খামারের প্রথম দুটি মা কুমির ডিম দেয়া শুরু করে। ক্রমান্বয়ে কুমিরের বংশ বিস্তারের মাধ্যমে ওই খামারে প্রায় ৮০০ কুমিরে উন্নীত হয়। সরকারের কাছ থেকে কুমির রপ্তানির চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়ে ২০০৯ সালের অক্টোবর মাসে জার্মানের হাইডেল বার্ড ইউনিভার্সিটি কুমিরের শরীরের অংশ বিশেষ থেকে মানবদেহের রোগ প্রতিরোধক মেডিসিন আবিষ্কারের জন্য ওই রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেড থেকে কুমির রপ্তানির চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। ২০১০ সালে ওই খামারের রপ্তানিযোগ্য ৩০০ কুমিরের মধ্য থেকে ৬৯টি কুমির জার্মানে রপ্তানি করেন। বাকি ২৩১টি কুমির ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানির প্রক্রিয়া চালান। জার্মানিতে ৭০ লাখ টাকায় ৬৯টি কুমির বিক্রির মধ্য দিয়ে লাভের মুখ দেখে প্রতিষ্ঠানটি। একই সঙ্গে কুমির রপ্তানির দেশ হিসাবে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের নাম লিপিবন্ধ হয়।

কুমিরের গড় আয়ু ১০০ বছর। আমদানিকৃত কুমিরের মধ্যে বর্তমানে ২৫টি বড় পুরুষ রয়েছে। ডিম দেয়ার মতো বড় কুমিরদের প্রতি মাসে এদের ২ টন মাংস খাবার হিসেবে দেয়া হয়। বন্য অবস্থায় ১০/১২ বছর বয়সে এবং ফার্মে ৬/৭ বছর বয়সের একটি স্ত্রী কুমির বছরে একবার (এপ্রিল-মে) মাসে ৪০থেকে ৫০টি করে ডিম দেয়। ডিম ফুটতে সময় লাগে ৭০ থেকে ৮০ দিন। এখানে কূত্রিম উপায়ে ডিম ফুটানোর ব্যবস্থা রয়েছে। বর্তমানে খামারে ৪০টি পুকুর ও ১০টি হ্যাচারি রয়েছে। ২০১৩ সালে মালয়েশিয়ার সারওয়াত কুমির ফার্ম থেকে দের কোটি টাকা দিয়ে আরো ৪০টি ব্রিডার কুমির ক্রয় করে আনা হয়েছে।

সবমিলে বর্তমানে এ খামারে ৬০টি মা কুমির রয়েছে। এছাড়া এ খামারে নিজস্ব উৎপাদিত ছোট বড় মিলে প্রায় ২ হাজার কুমির রয়েছে যেগুলোর দৈর্ঘ্য তিন ফুট থেকে সারে ছয় ফুট পর্যন্ত লম্বা।

কুমিরের কোনো কিছুই ‘ফেলনা’ নয় বলে চামড়া, গোশত, দাঁত ও হাড় বিপণন করা যায়। চীন, জাপান, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, পাপুয়া নিউগিনি ও থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৭০ থেকে ৭৫ হাজার মার্কিন ডলার মূল্যমানের কুমিরের গোশতের চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে ব্যাংকক, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া চীনসহ অর্ধশত দেশে কুমিরের চাষ হচ্ছে।

রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার ডা. আবু সাইম মোহাম্মদ আরিফ জানান, ২০০৪ সালে এটি দেশের প্রথম প্রতিষ্ঠান হিসাবে কুমিরের প্রজনন শুরু করে। ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে তারা কুমিরের চামড়া রপ্তানি শুরু করে। এখন পর্যন্ত মূলত জাপানে ২০১৪ সালে ৪৩০ ও ২০১৫ সালে ৪০০ চামড়া রপ্তানি হয়েছে। এর পরিমাণ বাড়িয়ে বছরে দুই হাজার করার লক্ষ্যে কাজ চলছে। পাশাপশি খুব শিগগিরই আমরা মাংস রপ্তানির চিন্তা ভাবনা করছি।

তিনি আরো জানান, শুরুতে খামারে দর্শনার্থী প্রবেশ করতে দেয়া হলেও এখন প্রজননের স্বার্থে কোনো দর্শনার্থী প্রবেশ করতে দেয়া হয় না।

বাংলাদেশ সময়: ২২:৩১:৩৬   ৪০১ বার পঠিত