সোমবার, ২৯ আগস্ট ২০১৬

রাজধানীতে বসছে ২৩ হাট আসতে শুরু করেছে কোরবানির গরু

Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » রাজধানীতে বসছে ২৩ হাট আসতে শুরু করেছে কোরবানির গরু
সোমবার, ২৯ আগস্ট ২০১৬



2d073f52cdb5a7b1ff69a46f923683f1-2.jpgএম,কে,এইচ মাসুদ:
কোরবানির পশু আসতে শুরু করেছে রাজধানীতে। গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া, উট, দুম্বা, ‘হরিণা গরু’ গাবতলী হাটে আসছে। রাজধানীতে এবার স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে ২৩টি কোরবানির পশুর হাট বসছে। এর মধ্যে দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় অস্থায়ী হাটের সংখ্যা ২২টি। ১৪টি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ও ৯টি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায়। দুই সিটি করপোরেশন এলাকার অস্থায়ী হাটগুলো কোরবানির ঈদের তিন দিন আগ বসবে।

গতকাল রাজধানীর সর্ববৃহৎ গাবতলী হাট ঘুরে জানা গেছে, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে এ হাটের পরিধি আরও বাড়বে। মহানগরীর হাটগুলোয় এবার ২০ থেকে ২২ লাখ গবাদিপশু ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা মনে করছেন। তারা বলেছেন, বন্যা উপেক্ষা করে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রচুর গবাদিপশু ইতিমধ্যে গাবতলী হাটে আসতে শুরু করেছে। ঈদুল আজহার দিন যতই ঘনিয়ে আসবে পাল্লা দিয়ে আমদানি তত বাড়বে। একই সঙ্গে পাশের ভুটান, নেপাল ও মিয়ানমার থেকে কোরবানির গবাদিপশু আসবে মহানগরীর হাটগুলোয়। গাবতলী হাটের ইজারাদার প্রতিনিধি মিলন মিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কোরবানি ঈদের ১৫ দিন বাকি থাকতেই গতকাল গাবতলী হাটে গরু-ছাগল-মহিষের পাইকারি বিক্রি শুরু হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শতাধিক বেপারী এ হাটে কেনাকাটা করছেন। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, দাম স্বাভাবিক রয়েছে। জানতে চাইলে বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলেন, ‘আমরা দেশি গবাদিপশুর ওপর সব সময় নির্ভরশীল। স্বাভাবিক সময়ের চাহিদা পূরণ হচ্ছে দেশি গরু-ছাগলে। তবে কোরবানির সময় কিছুটা টানাটানি হয়। ভারত গরু রপ্তানি বন্ধ করায় বিকল্প হিসেবে নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার থেকে পশু আমদানি করা হচ্ছে।’ এবার সহনীয় দামে মানুষ পশু কিনতে পারবে বলে তিনি আশাবাদী। ঢাকার সবচেয়ে বড় স্থায়ী পশুর হাট গাবতলীতে কোরবানি উপলক্ষে পাইকারিতে পশু বেচাকেনা শুরু হয়েছে। ঢাকার আশপাশের খামারিরা এরই মধ্যে পশু আনতে শুরু করেছেন এই হাটে। গবাদিপশুর মধ্যে দেশি জাতের গরু-মহিষ ছাড়াও আছে নানা জাতের ছাগল, ভারতের রাজস্থান ও সিন্ধির বড় শিংয়ের গরু, নেপালি হরিণা জাতের গরু, ভুটানের ভুটিয়া, পাকিস্তানি দুম্বা, মরুভূমির বাহন বলে খ্যাত রাজস্থানি উট, কাশ্মীরি ভেড়া। তবে এত কিছুর ভিড়ে হাটের মধ্যমণি হিসেবে স্থান করে নিয়েছে নেপালি ‘হরিণা গরু’। অবিকল চিত্রা হরিণের মতো দেখতে নেপালি হরিণা গরুটি নজর কাড়ছে সবার। গরু ব্যবসায়ী মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার বাসিন্দা জয় মাহমুদ জানান, এই গরুটির বয়স সাড়ে চার বছর। গত বছর একই উপজেলার বাঁচামরা ইউনিয়নের খামারি আবিদ হোসেন এই গরুটি লালমনিরহাটের এক গরু ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কিনে আনেন। পরে তার খামারে এক বছর লালন-পালনের পর কোরবানি উপলক্ষে এবার হাটে এনেছেন। এরই মধ্যে প্রতিদিন গরুটি দেখতে প্রচুর ক্রেতা হাটে আসছেন। কেউ কেউ দরদাম করছেন। তবে এখনই এই হরিণা বিক্রিতে রাজি হচ্ছেন না আবিদ হোসেন। তিনি বলেন, একসময় নেপাল থেকে হামেশাই এ জাতের গরু নিয়ে আসতেন পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রামের ব্যবসায়ীরা। কিন্তু বর্তমানে ভারতীয় সীমান্তে গরু পারাপার বন্ধ থাকায় এ জাতের গরু কম দেখা যায়। চিত্রা হরিণের মতো দেখতে মাঝারি সাইজের এই গরুটির সারা শরীরে লাল রঙের মধ্যে গোল গোল সাদা ছাপে ভরা। বর্তমানে গাবতলী হাটে ছোট আকৃতির ৩-৪ মণ ওজনের গরু পাওয়া যাচ্ছে ৪০-৪২ হাজার টাকায়। ৫-৬ মণ মাংস হবে এসব গরু গতকাল বিক্রি হয়েছে ৪৪ হাজার টাকায়। এ ছাড়া মাঝারি আকৃতির গরু পাওয়া যাচ্ছে ৭০-৭৫ হাজার টাকায়। বড় আকৃতির গরু সোয়া থেকে দেড় লাখ টাকায়। মাংস হবে ১৪-১৫ মণ। কোরবানির হাটে গরুর রং ও দৈহিক সৌন্দর্যের কারণে দাম কিছুটা হেরফের হয়। এ হাটে কোরবানির জন্য ইতিমধ্যে বেশ কিছু মহিষ বিক্রির জন্য এনেছেন ব্যবসায়ীরা। ছোট আকৃতির মহিষ মিলছে ৫০-৬০ হাজার টাকায়। ১৮০-২০০ কেজি মাংস হবে এসব মহিষের। মাঝারি আকৃতির মহিষ পাওয়া যাচ্ছে ৮৫-৯০ হাজার টাকায়। যেগুলোর মাংস হবে ২৪০-২৫০ কেজির মতো। বড় আকৃতির মহিষ পাওয়া যাচ্ছে ১ লাখ থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকার মধ্যে। প্রতি বছর গাবতলী হাটের বিশেষ আকর্ষণ থাকে ‘উট’। গতকাল এ হাটে ৭টি উট এসেছে। প্রতিটি উটের আকৃতি একই রকমের। ডিপজল এন্টারপ্রাইজ এসব উটের দাম হাঁকছে ৭ লাখ টাকা করে। ২০০ থেকে ২২০ কেজি মাংস হবে প্রতিটি উটের। সারা বছরই গাবতলী হাটে খাসি পাওয়া যায়। কোরবানির সময় বিভিন্ন গড়ন, প্রজাতি ও আকৃতির খাসি ওঠে এ হাটে। একই সঙ্গে রাজধানীর অস্থায়ী হাটগুলোতেও খাসি পাওয়া যায়। বর্তমানে ১০-১২ কেজি মাংস হবে এমন আকৃতির খাসির বাজারমূল্য ৫-৬ হাজার টাকা। মাঝারি আকৃতির খাসি মিলছে ৮-৯ হাজার টাকায়। ১৫ কেজি মাংস হবে এসব খাসির। বড় আকৃতির খাসির দাম ১৫-১৮ হাজার টাকা। এগুলোয় ২৫-৩০ কেজি মাংস হবে। তবে কোরবানির হাটে এসব খাসির দাম ৩-৪ হাজার টাকা করে বেড়ে যেতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন। এমনকি ভেড়াও মিলছে গাবতলীর হাটে। কোরবানি উপলক্ষে ব্যবসায়ীরা বিশেষ প্রস্তুতি রাখছেন। বর্তমান গাবতলী হাটে প্রায় ১০ কেজি ওজনের ছোট আকৃতির ভেড়া পাওয়া যাচ্ছে ৫ হাজার টাকায়। মাঝারি আকৃতির ভেড়া পাওয়া যাচ্ছে সাড়ে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকায়। বড় আকৃতির ভেড়া মিলছে ১০ হাজার টাকায়। সর্বোচ্চ ২০ কেজি মাংস হবে এসব ভেড়ার। তবে কোরবানির হাট জমলে আরও বড় আকৃতির ভেড়াও পাওয়া যাবে বলে ব্যবসায়ীরা জানান। সে ক্ষেত্রে দামও কিছুটা বাড়তে পারে। রাজধানীর কোরবানি পশুর হাটগুলোর মধ্যে গাবতলী হাটে প্রতি বছর দুম্বা পাওয়া যায়। একাধিক ব্যবসায়ী দুম্বা আনেন এ হাটে। এবারও তারা দুম্বা আনবেন বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যে একজন ব্যবসায়ী ১৪টি দুম্বা এনেছেন হাটে। প্রতিটি দুম্বার দাম ৪ লাখ টাকা করে হাঁকা হচ্ছে। ৫৫ থেকে ৬০ কেজি মাংস হবে প্রতিটি দুম্বার।

ডিএসসিসি : ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের হাটগুলোর মধ্যে রয়েছে- হাজারীবাগ মাঠ-হাজারীবাগ, রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ-লালবাগ, মেরাদিয়া বাজার-খিলগাঁও, সাদেক হোসেন খোকা মাঠ-ধোলাইখাল, খিলগাঁও রেলগেট বাজারসংলগ্ন-উত্তর শাহজাহানপুর, ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব মাঠ-ধুপখোলা, ব্রাদার্স ইউনিয়নসংলগ্ন বালুর মাঠ-গোপীবাগ, পোস্তগোলা শ্মশানঘাটসংলগ্ন খালি জায়গা-শ্যামপুর, হাজী দেলোয়ার হোসেন খেলার মাঠ-লালবাগ, ইসলাম চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকে বুড়িগঙ্গা নদীর বাঁধ পর্যন্ত-কামরাঙ্গীরচর, যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজারের খালি জায়গা-যাত্রাবাড়ী, কমলাপুর স্টেডিয়ামের আশপাশের খালি জায়গা-মুগদা, দনিয়া কলেজ মাঠ-কদমতলী, শ্যামপুর বাজারসংলগ্ন খালি জায়গা-শ্যামপুর।

ডিএনসিসি : ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের হাটগুলোর মধ্যে রয়েছে- উত্তরা ১৫ ও ১৬ নম্বর সেক্টরের ব্রিজসংলগ্ন খালি জায়গা-উত্তরা, বনরূপা আবাসিক প্রকল্পের খালি জায়গা-খিলক্ষেত, মিরপুর সেকশন-৬-এর ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গা-মিরপুর, বেনারসি পল্লী মাঠ ও সংলগ্ন খালি জায়গা-ভাসানটেক, পূর্বাচলমুখী ৩০০ ফুট সড়কের খালি জায়গা-খিলক্ষেত, ইন্দুলিয়া-দাউদকান্দি এলাকার খালি জায়গা-বাড্ডা, আশিয়ান সিটি হাউজিংয়ের খালি জায়গা-দক্ষিণখান, সাঈদনগর খালি জায়গা-ভাটারা ও গাবতলী পশুর হাট (স্থায়ী)-মিরপুর।

বাংলাদেশ সময়: ২১:৫৭:৫১   ৬৫০ বার পঠিত