শনিবার, ২৭ আগস্ট ২০১৬

ফারাক্কা খুলে দেয়ায় বড় ধরনের বন্যার শঙ্কা

Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » ফারাক্কা খুলে দেয়ায় বড় ধরনের বন্যার শঙ্কা
শনিবার, ২৭ আগস্ট ২০১৬



148543_139.jpgএম,কে,এইচ মাসুদ :ভারত ফারাক্কা বাঁধ খুলে দেয়ায় পদ্মা নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। এর ফলে বাংলাদেশে বড় বন্যার আশঙ্কা করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। পদ্মার পানি বাড়তে থাকায় রাজশাহী শহর রক্ষাবাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। আগামী সোমবার নাগাদ পদ্মার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নতুন করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কুষ্টিয়ায় ৪৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। এ ছাড়া ফের হুমকিতে পড়েছে দৌলতদিয়ার ৪ নম্বর ফেরিঘাট। ফলে ঈদে ভোগান্তিতে পড়তে পারেন ঘরমুখো মানুষ।

রাজশাহী ব্যুরো জানায়, পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় রাজশাহী শহর রক্ষাবাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। এখানে পদ্মার পানি এখন বিপদসীমার কাছাকাছি চলে এসেছে। পানি বৃদ্ধির ফলে প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় রাজশাহী মহানগরীসহ জেলার সীমান্ত ও চর এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।
তবে পাউবোর রাজশাহীর নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেসুর রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করা নিয়ে এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। পদ্মা নদীর বিপদসীমা ১৮ দশমিক ৫০ মিটার। আর রাজশাহী শহর রক্ষাবাঁধের উচ্চতা ২১ দশমিক শূন্য ৩ মিটার। তাই বিপদসীমা অতিক্রম করতে এখনো বেশ সময় লাগবে। তিনি বলেন, যে হারে পানি বাড়ছে, তা অব্যাহত থাকলে আগামী সোমবার (২৯ আগস্ট) পদ্মার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা রয়েছে। এ ব্যাপারে পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের ওয়েবসাইটেও বিস্তারিত তথ্য রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) রাজশাহী অফিসের দেয়া তথ্যানুযায়ী, গতকাল শুক্রবার বেলা ৩টায় পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার মাত্র শূন্য দশমিক ২২ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ সময় পদ্মার পানির উচ্চতা ছিল ১৮ দশমিক ২৮ মিটার। আগের দিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার মাত্র শূন্য দশমিক ২৮ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ওই সময় পদ্মার পানির উচ্চতা ছিল ১৮ দশমিক ২২ মিটার। তার আগের দিন বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার মাত্র শূন্য দশমিক ৪০ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ওই সময় পানি প্রবাহিত হচ্ছিল ১৮ দশমিক ১০ মিটার ওপর দিয়ে। রাজশাহীতে পদ্মার বিপদসীমা হচ্ছে ১৮ দশমিক ৫০ মিটার। পাউবো সূত্র জানায়, প্রতিদিন পাঁচবার, অর্থাৎ সকাল ৬টা, ৯টা, দুপুর ১২টা, বেলা ৩টা ও সন্ধ্যা ৬টায় পদ্মা নদীর পানির উচ্চতা পরিমাপ করা হচ্ছে।
বিশিষ্ট নদী গবেষক ও লেখক মাহবুব সিদ্দিকী নয়া দিগন্তকে বলেন, রাজশাহীতে পদ্মা নদীর গভীরতা বর্তমানের চেয়ে আরো ১৮ মিটার নিচে ছিল। কিন্তু গত চার দশকে পদ্মার তলদেশ ১৮ মিটার ভরাট হয়েছে। এতে পদ্মা নদীর পানি ধারণক্ষমতা কমে এসেছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভারত সরকার ফারাক্কার সব গেট খুলে দিলে এক সাথে পানির এত চাপ সহ্য করতে পারবে না পদ্মা। ফলে মহাবিপর্যয় দেখা দেবে। রাজশাহী শহর ৫-৭ ফিট পানির নিচে থাকবে। রাজশাহী শহর রাবাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, ১৮৫৫ ও ১৮৬৪ সালে বন্যায় রাজশাহী শহর ডুবে গিয়েছিল। তখন শহরের ভেতরে বন্যার পানি ১৫-২০ দিন স্থায়ী ছিল। তিনি বলেন, ১৮৮৫ সালের বন্যার কারণে নগরীর বুলনপুরে শহর রক্ষাবাঁধ তৈরি করা হয়। আর ১৮৬৪ সালের বন্যায় শহর রক্ষার জন্য অবশিষ্ট বাঁধ নির্মিত হয়। অবশিষ্ট এ বাঁধ নির্মিত হয় ১৮৯৫ সালে।
এ দিকে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে রাজশাহী মহানগরীসহ জেলার পবা, বাঘা ও চারঘাট উপজেলায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। একইসাথে প্রতিদিন প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এতে করে মহানগরী ছাড়াও জেলার সীমান্ত ও চর এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। তাদের অনেকের বিভিন্ন ফসল ও ঘরবাড়ি ইতোমধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ বাসস্থান ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন।
সূত্র জানায়, পানি বৃদ্ধির ফলে রাজশাহী মহানগরীর কয়েকটি এলাকায় পদ্মার তীর রা প্রকল্পের কাজ হুমকির মুখে পড়েছে। এরই মধ্যে বুলনপুর এলাকায় শহর রাবাঁধের নিচে পদ্মার তীর রা প্রকল্পের চারটি স্থান সামান্য দেবে গেছে। বালুর বস্তা ফেলে মাটি ধরে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ স্থানগুলো ধসে গেলে শহর রাবাঁধ হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ভারতে বন্যার প্রভাব ও ফারাক্কার বেশির ভাগ গেট খুলে দেয়ার কারণে পদ্মায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভাঙনে পবা উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়নের দু’টি গ্রাম চর খানপুর ও চর খিদিরপুরের বেশি অংশ নদীতে বিলীন হয়েছে। মধ্যচরেও পানি ওঠায় সেখানকার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। এই ইউনিয়নের ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের শত শত হেক্টর জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। বিলীন হয়েছে বাংলাদেশ-ভারতের সীমানা পিলারসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ফলে প্রতি বছরই সীমান্ত এলাকায় জমি হারাচ্ছে বাংলাদেশ। ভাঙনে ৯ নম্বর ওয়ার্ডে চর তারানগরে ২০০ ঘরবাড়ি, চারটি মসজিদ, একটি মাদরাসা, একটি কমিউনিটি কিনিক, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খানপুর বিজিবি ক্যাম্প এবং আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার ১৬৪ ও ১৬৫ নদীতে বিলীন হয়েছে। এ ছাড়া হরিপুর ইউনিয়নের নবগঙ্গা, বেড়পাড়া ও সোনাইকান্দি এলাকার বাড়িঘর, তে খামার তলিয়ে গেছে।
পাউবো সূত্র জানায়, ভাঙনের বিষয়টি তারা নিয়মিত মনিটরিং করছেন। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনেরও সব প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, ফারাক্কার বেশির ভাগ গেট খুলে দেয়ায় বাংলাদেশের পদ্মায় প্রবল তোড়ে ঢুকছে পানি। ১৪ কিলোমিটার দূরবর্তী ফারাক্কা ব্যারাজ থেকে পদ্মার পাকা পয়েন্টে পানি আছড়ে পড়তে সময় লাগছে মাত্র দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। ফলে আরো ১৩ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় আগামী ২৪ ঘণ্টায় পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, পাঁচ দিন ধরে একই মাত্রায় ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে পদ্মায় বন্যার পানি প্রবেশ করছে। ২১ আগস্ট থেকে পানি বৃদ্ধি শুরু হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ সাহিদুল আলম জানান, যেভাবে পানি বাড়ছে, তাতে আগামী ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা বিপদসীমা অতিক্রম করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যেভাবে পদ্মায় পানি বাড়ছে, তা অব্যাহত থাকলে ১৯৯৮ সালের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
হঠাৎ সৃষ্ট বন্যায় সদর উপজেলার পদ্মা কেন্দ্রিক আলাতুলী, নারায়ণপুর, সুন্দরপুর, দেবীনগর, বাগডাঙ্গা এবং শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা, দুর্লভপুর, পাকা, উজিরপুর, ছত্রাজিতপুর ইউনিয়নের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ এলাকা ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। প্রায় ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। অনেকে ঘরে মাচা তৈরি করেছেন। হঠাৎ বন্যায় ফসলি জমির আধাপাকা ধান নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন অনেক কৃষক। এমন কি অনেকে ধান কেটে শুকনো স্থানের অভাবে পানিতেই ফেলে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। কিছু মানুষ বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের অবস্থা আরো শোচনীয়। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইফতেখার উদ্দিন শামীম জানান, পদ্মা বিপদসীমা অতিক্রম না করলেও চরাঞ্চলের ইউনিয়নগুলো প্লাবিত হয়েছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এ দিকে সদর উপজেলার বাখের আলীর গোয়াল ডুবি থেকে রোডপাড়া পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার সীমান্তে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে।
কুষ্টিয়া সংবাদদাতা জানান, ফারাক্কার পানির প্রভাবে কুষ্টিয়ার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ সেতু এলাকায় পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। যেকোনো সময় পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া গড়াই নদী, সাগরখালী নদীসহ পদ্মা নদী সংযোগের সব খালে পানি বাড়ছে। স্রোতের তীব্রতাও বেড়ে গেছে।
প্রতি তিন ঘণ্টায় পানি বাড়ছে ২ সেন্টিমিটার করে। পানি বাড়ার গতি অব্যাহত থাকলে যেকোনো সময় বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। এ দিকে হঠাৎ করে পদ্মায় পানি বাড়ায় দৌলতপুর উপজেলার চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ৪৫টি ও ভেড়ামারা উপজেলার দু’টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানা যায়।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নৈমুল হক জানান, যে গতিতে পানি বাড়ছে তাতে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় পদ্মার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। আমাদের টিমের সদস্যরা সর্বণিক মনিটরিং করছেন।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে আরো জানা যায়, পদ্মা নদীতে পানির বিপদসীমা হচ্ছে ১৪ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার। সেখানে গতকাল বিকেল ৩টায় পানি প্রবাহিত হচ্ছে ১৪ দশমিক ০৮ সেন্টিমিটার। দুপুর ১২টার দিকে পানির উচ্চতা ছিল ১৪ দশমিক ০৬ সেন্টিমিটার। সন্ধ্যায় ১৪.১০ সেন্টিমিটার। বিপদসীমা থেকে মাত্র ১৩ সেন্টিমিটার দূরে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৮ আগস্ট এ পানির মাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৩২ সেন্টিমিটার। ১৯ আগস্ট ছিল ১৩ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার। ২৫ আগস্ট ছিল ১৩ দশমিক ৯০ সেন্টিমিটার। পদ্মার পানি বাড়ার সাথে সাথে এর প্রধান শাখা গড়াই নদীতে অব্যাহতভাবে পানি বাড়ছে। নদীর আশপাশের খাল ও নিচু এলাকা প্লাবিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
এ দিকে হঠাৎ করে পদ্মায় পানি বাড়ায় জেলার দৌলতপুর উপজেলা চিলমারী ও রামকৃঞ্চপুর ইউনিয়নের ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। প্রতিটি ঘরেই পানি ঢুকে গেছে। ঘরে মজুদ ধান, চাল, পাট, মরিচসহ সব নষ্ট হয়ে গেছে। এসব এলাকায় খাবার পানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। কিছু দিন আগে এলাকার পানি সরে যাওয়ায় মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাত্রা শুরু করলেও কয়েক দিনের পানি বৃদ্ধিতে তার চেয়েও খারাপ পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হচ্ছে এ ইউনিয়নের মানুষকে।
দৌলতপুর উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ আহমেদ জানান, কয়েক দিন ধরে পদ্মা নদীর পানি বাড়ায় চিলমারীর ১৮ গ্রামের ৪০ হাজার মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এসব মানুষ। সম্প্রতি বন্যায় এত তি হয়নি।
রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন জানান, তার ইউনিয়নের চরাঞ্চলের ১২ গ্রামে পানি ঢুকেছে। এখানকার প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এলাকায় তীব্র খাবার পানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
বাজুমারা গ্রামের বাসিন্দা ইউসুফ আলী জানান, নলকূপ ডুবে যাওয়ায় পান করা পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। নৌকায় গ্রামবাসীকে যাতায়াত করতে হচ্ছে। দৌলতপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার জানান, উপজেলার সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বৃহস্পতিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
ভেড়ামারা উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আশিকুর রহমান জানান, তার ইউনিয়নের ঢাকাপাড়া গ্রামের চর তলিয়ে যাওয়ায় সেখানের ১৫০ পরিবার অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। এ ছাড়া গোলাপনগর এলাকার ৭৫ ভাগ প্লাবিত হয়েছে। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম শম্পা মাহমুদ জানান, তার ইউনিয়নের তিন পাশ পদ্মা এবং গড়াই নদীতে আবৃত। পানি বৃদ্ধির কারণে কয়েকটি স্থানে ভাঙন শুরু হয়েছে। ফারাক্কার বাঁধ খুলে দেয়ায় গত দুই দিনে পানি বৃদ্ধিতে আমরা শঙ্কিত। পদ্মা নদীর ওপারে কুষ্টিয়া অংশে পানি প্রবেশ করেছে। নদীর আশপাশের চর এবং কাশ বন পানিতে তলিয়ে গেছে।
কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুজিব উল ফেরদৌস জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের পুরো বিষয়ের ওপর নজর রাখতে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে চিলমারী ইউনিয়নে ৬ টন চাল দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া আমাদের পর্যাপ্ত ত্রাণ প্রস্তুত আছে। ইউএনওরা রিপোর্ট দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। চালসহ অন্যান্য ত্রাণ সরবরাহ করা হবে প্রয়োজনে।
রাজবাড়ী সংবাদদাতা জানান, ফারাক্কার অধিকাংশ গেট খুলে দেয়ায় পদ্মায় গত দুই দিনে অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধিতে তীব্র স্্েরাতে কোনো মতে মেরামত করা ফেরিঘাটে আবারো ভাঙন দেখা দিয়েছে। ফলে যেকোনো সময় দৌলতদিয়ার সব ক’টি ফেরিঘাট পুনরায় বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিআইডব্লিউটিসির ঘাট কর্তৃপক্ষ ও ফেরি চালকেরা। এতে আসন্ন ঈদুল আজহায় ঘরমুখো মানুষ চরম বিপাকে পড়তে পারেন।
চালকেরা জানান, ঈদুল আজহায় ঢাকাগামী গরুবাহী গাড়িগুলো নিরাপদে পারাপারের জন্য এখনই ঘাট পুরোপুরি মেরামত করা দরকার। ফেরি চালকেরা জানান, নদীতে স্রোতের কারণে প্রায় দেড়-দুইগুণ সময় লাগছে নদী পার হতে। এতে ঘাটের দুই পাড়ে সষ্টি হচ্ছে যানজটের।
দৌলতদিয়া ঘাটের বিআইডব্লিউটিসির সহকারী ব্যবস্থাপক আব্দুল্লাহ জানান, এই রুটে বর্তমানে ১৫টি ফেরি চলছে। ঈদুল আজহা উপলে আরো কয়েকটি ফেরি বহরে সংযোগ করা হবে এতে ভোগান্তি কমবে।
দৌলতদিয়া ঘাটে কর্মরত সার্জেন্ট তুহিন লস্কর জানান, প্রতি বছরের মতো এবারো রাজবাড়ীর পুলিশ প্রশাসনের প থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে ঘাটে সাদা পোশাকে ও পোশাকে পুলিশ সদস্যরা কাজ করছে, দালালেরা যাতে কোনো মানুষের চলাচলের বাধা না হয় সে ব্যাপারে তারা সচেতন রয়েছে।
দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম মণ্ডল জানান, ঘাট এলাকায় ভাঙন অব্যাহত আছে। কর্তৃপর এখনই উচিত স্থায়ীভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাতে এই রুট দিয়ে চলাচলকারী মানুষ প্রিয়জনের সাথে ঈদ করতে নির্বিঘেœ বাড়ি যেতে পারেন।

বাংলাদেশ সময়: ১১:১৬:১৫   ৪২৮ বার পঠিত