মঙ্গলবার, ২৩ আগস্ট ২০১৬

ফেলপস, বোল্ট আর রিওর অলিম্পিক

Home Page » খেলা » ফেলপস, বোল্ট আর রিওর অলিম্পিক
মঙ্গলবার, ২৩ আগস্ট ২০১৬



বঙ্গ-নিউজ:  বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের একতার প্রতীক হয়ে জ্বলতে থাকা মশালটি নিভে গেল। রং ছড়িয়ে পর্দা নামল রিও অলিম্পিকের। আতশবাজির আলোর সমাপ্তি ১৭ দিনের এই বিশ্ব ক্রীড়াযজ্ঞের। যে শেষ থেকে আরেক শুরুর অপেক্ষা। রিও থেকে টোকিওর প্রতীক্ষার ক্ষণগণনা শুরু।

২০০৯ সালের কোপেনহেগেনের অলিম্পিক সভায় ঘোষণা করা হয় ২০১৬ আসরের স্বাগতিক শহরের নাম। বিখ্যাত কোপাকাবানা সমুদ্রসৈকতে বিশাল টেলিভিশন পর্দায় সরাসরি দেখানো হয় তা। রিও ডি জেনেইরোর নাম ঘোষণা হতেই উল্লাসে ফেটে পড়েন সেখানকার হাজারো জনতা। কোপেনহেগেনে ব্রাজিলের কিংবদন্তি ফুটবলার পেলে এবং দেশটির প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভার আনন্দাশ্রু ছুঁয়ে যায় সবাইকে। কিন্তু সাত বছর পর সত্যি সত্যি যখন অলিম্পিক আসর বসে রিওতে, পরিস্থিতি ঠিক অমন উল্লাসমুখর ছিল না। বরং দুই বছর আগের বিশ্বকাপের মতোই এই ক্রীড়াযজ্ঞ আয়োজিত হয় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে। অংশগ্রহণকারী ক্রীড়াবিদ, সাংবাদিক, পর্যটক সবার মধ্যে ছিল নিরাপত্তাভীতি। সহজাত স্বতঃস্ফূর্ততায় অনেক কিছুতে হয়তো উতরে গেছে ব্রাজিলিয়ানরা, কিন্তু সর্বকালের সেরা অলিম্পিক হয়েছে ২০১৬-র রিওতে-এমন দাবি শোনা যায়নি তেমন জোরালোভাবে।

তবে একেবারে খারাপও হয়নি। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির প্রধান টমাস বাখ সমাপনী অনুষ্ঠানে বলেছেন যেমনটা, ‘চমৎকার এক শহরে চমৎকার অলিম্পিক গেমসের শেষ হলো। যে গেমস উত্তর প্রজন্মের কাছে স্বতন্ত্র এক ছাপ রেখে যাবে। ইতিহাস বলবে, অলিম্পিকের আগে যে রিও ডি জেনেইরো ছিল, পরের রিও ডি জেনেইরো তার চেয়ে অনেক ভালো।’ সমাপনী অনুষ্ঠানে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে উপস্থিত হন ভিডিও গেমের চরিত্র ‘সুপার মারিও’র সাজে। ‘২০২০ সালের টোকিও আসর যেন সর্বকালের সেরা অলিম্পিক হয়, সে জন্য জাপান সরকার সম্ভাব্য সব কিছু করবে’-ঘোষণা দিয়ে যান তিনি।

সমাপনী অনুষ্ঠানের কয়েক ঘণ্টা আগে শেষ হয়েছে পদকের লড়াই। আর তা এই অলিম্পিকের সঙ্গে কী দারুণভাবে যায়! বাস্কেটবলের ওই শেষ ইভেন্টের সোনার পদক জেতে যুক্তরাষ্ট্র; সার্বিয়াকে ৯৬-৬৬ পয়েন্টে হারিয়ে। এবারের অলিম্পিকের সফলতম দল এই মার্কিনিরাই। অলিম্পিকের ৩০৬ সোনার পদকের মধ্যে ৪৬টি জিতে চার বছর আগের সাফল্য-সংখ্যা স্পর্শ করে তারা। তবে ২০১২ সালে নিজ দেশে গ্রেট ব্রিটেন যা পারেনি, এবার পেরেছে তা। পদক তালিকায় তৃতীয় থেকে দ্বিতীয়তে উঠে আসে ২৭ সোনার পদকে। যে কারণে যুক্তরাজ্যের ক্রীড়া প্রধান নির্বাহী লিজ নিকল জোর গলায় দাবি করতে পারেন, ‘আমরা এখন বিশ্ব ক্রীড়া পরাশক্তিদের অন্যতম।’ আর ওই পরাশক্তিদের তালিকায় ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছে চীন। ২০০৮ সালে নিজ দেশের আসরে পদক তালিকায় ছিল সবার ওপরে। ২০১২ সালে নেমে আসে দ্বিতীয়তে। আর এবার ২৬ সোনার পদকে তৃতীয় স্থানে।

রিও অলিম্পিক স্মরণীয় হয়ে থাকবে সর্বকালের সেরা দুই অলিম্পিয়ানের শেষ আসর হিসেবেও। উসাইন বোল্ট ও মাইকেল ফেলপস যে অলিম্পিকে তাঁদের শেষ কীর্তির স্বাক্ষর রাখেন এবার। ১০০ মিটার, ২০০ মিটার ও ৪ী১০০ মিটার রিলের সোনার পদক যথারীতি উসাইন বোল্টের। ঠিক ২০০৮ ও ২০১২-র মতো। তাতে ‘ট্রিপল ট্রিপল’-এর অবিস্মরণীয় কীর্তি হয়ে যায় এই জ্যামাইকান স্প্রিন্টারের। আমেরিকার সাঁতারু ফেলপসকেও পিছিয়ে রাখার উপায় কী! এবারের আসরে পাঁচটি সোনার পদক জিতেছেন, সঙ্গে এক রুপা। এই অর্জনই চিরস্মরণীয় হয়ে থাকার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু যখন জানবেন, এবারের অর্জনে অলিম্পিকে সাকুল্যে ২৩টি সোনার পদকসহ ২৮ পদক হয়ে গেল ফেলপসের, তখন সর্বকালের সেরা অলিম্পিয়ান হিসেবে অন্য কারো কথা ভাবাটাও স্পর্ধা মনে হয়। এখানেই আবার বোল্টের মহত্ত্ব। মাত্র ৯টি অলিম্পিক পদক জিতেছেন তিনি। কিন্তু সবগুলোই যে সোনার পদক। আর সেগুলো অ্যাথলেটিকসের সবচেয়ে আকর্ষণীয় তিন ইভেন্টে। বোল্ট-ফেলপসের অলিম্পিক ক্যারিয়ার ২০১৬ সালে শেষ হলেও বিতর্কটা তাই চলবে অনন্তকাল। সর্বকালের সেরা অলিম্পিয়ানের বিতর্ক।

পদকের হিসাবে স্বাগতিক ব্রাজিলের জন্য এই অলিম্পিক সফলতম। মোট সাতটি সোনার পদক জিতেছে তারা, এর আগের সর্বোচ্চ ২০০৪ সালের পাঁচটি। মোট ১৯ পদক জিতেছে, আগের সর্বোচ্চ ২০১২-র ১৭টি। আর পদক তালিকায় সেই ১৯২০ সালে প্রথম অংশগ্রহণের ১৫তম অবস্থান টপকে এবার ১৩তম। তবে নিরেট পরিসংখ্যান ছাপিয়ে আরো অনেক বড় অর্জন রয়েছে ব্রাজিলের। এই প্রথমবার যে অলিম্পিক ফুটবলের সোনার পদক জিতল তারা! বিশ্ব ফুটবলের সফলতম দলটির সর্বোচ্চ পর্যায়ে এই একটি চূড়ান্ত সাফল্যই বাকি ছিল। এবার ঘরের মাঠে সেই অর্জনের আনন্দে ভেসে যায় তারা। আর তাতে মহানায়ক নেইমার। টাইব্রেকারের শেষ শটে গোল করে ব্রাজিলকে অধরা সোনা জেতান তিনি। তাতেই যেন ২০১৬ রিও অলিম্পিকটা যেমন ফেলপস-বোল্টের, তেমনি হয়ে গেল নেইমারেরও।

রিও অলিম্পিকে বিতর্ক যে ছিল না, এমন নয়। মঙ্গোলিয়ার ভারোত্তোলক চারনাদরজ উসুখবায়ের সপ্তম অ্যাথলেট হিসেবে ব্যর্থ হন মাদক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে। এ ছাড়া আইরিশ আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি সদস্য প্যাট্রিক হিকিকে কালোবাজারে টিকিট কেলেঙ্কারির সূত্র ধরে গ্রেপ্তার করে ব্রাজিল পুলিশ। এরপর গিয়ে হানা দেয় আইরিশ অলিম্পিক অফিসে। সেখানে গিয়ে পাসপোর্ট, ফোন, কম্পিউটার করে জব্দ।

এমন আরো টুকটাক বিতর্ক ছিল। আয়োজন নিয়েও নানা প্রশ্নবোধক চিহ্ন। তবু শেষ পর্যন্ত রিও অলিম্পিক স্মরণীয় হয়ে থাকবে ফেলপস-বোল্টের অবিশ্বাস্য কীর্তিতে। ও হ্যাঁ, সঙ্গে নেইমারের নেতৃত্বে ব্রাজিলের অলিম্পিক সোনা জয়ের কারণেও।

বাংলাদেশ সময়: ৯:৪৬:৩২   ৪৪২ বার পঠিত