রবিবার, ৭ আগস্ট ২০১৬

জনশক্তি রফতানি কমছে

Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » জনশক্তি রফতানি কমছে
রবিবার, ৭ আগস্ট ২০১৬



জনশক্তি রফতানি কমছে

বঙ্গ-নিউজ:বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়ায় এবং মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে অভ্যন্তরীণ যুদ্ধ চলতে থাকায় বড় ধরনের অর্থ সংকটে ভুগছে মধ্যপ্রাচ্যের তেল রফতানিকারক দেশগুলো। এর বড় ধাক্কা এসেছে বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানি খাতে। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমানসহ অনেক দেশের শীর্ষ কোম্পানিগুলো শ্রমিকদের বেতন দিতে পারছে না। অধিকাংশ কোম্পানিতেই ধারাবাহিক অর্থনৈতিক মন্দার মুখে শ্রমিক ছাঁটাই চলছে। বিন লাদেন গ্রুপ, প্রস্কেপসহ মধ্যপ্রাচ্যের বড় বড় কোম্পানিগুলো অর্থের অভাবে নতুন প্রকল্প শুরু করতে পারেনি। চলমান প্রকল্পগুলোও শেষ হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় বিদেশি কর্মীদের কর্মসংস্থানের জায়গা ক্রমশ সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। ইতিমধ্যেই মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন কোম্পানি থেকে ছাঁটাই হয়ে সহস্রাধিক বাংলাদেশি কর্মী দেশে ফিরে এসেছেন।
বৈদেশিক কর্মসংস্থান ব্যুরোর (বিএমইটি) পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছরের অন্যান্য মাসের তুলনায় গত জুলাই মাসে জনশক্তি রফতানি উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। বিএমইটির পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত জুলাই মাসে বৈদেশিক কর্মসংস্থান হয়েছে ৪৮ হাজার বাংলাদেশির। অথচ গত জুনে ৬২ হাজার, মে মাসে ৬০ হাজার, এপ্রিলে ৫৯ হাজার, মার্চে ৬৫ হাজার, ফেব্রুয়ারিতে ৬২ হাজার এবং জানুয়ারিতে ৬৪ হাজার বাংলাদেশি কর্মীর বিভিন্ন দেশে কর্মসংস্থান হয়েছে। শুধু তাই নয়, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে মুদ্রার মান কমে যাওয়ায় রেমিট্যান্সেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এসব কারণে গত অর্থবছরে প্রায় ২৫ কোটি ডলার কম রেমিট্যান্স এসেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বড় শ্রমবাজার একে একে বন্ধ হয়ে গেছে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়ায় অর্থ সংকটে নতুন প্রকল্প চালু করা যাচ্ছে না। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেই দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ চলছে। বিভিন্ন দেশ থেকে অবৈধ হয়ে পড়া বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে। আবার নতুন বাজার সৃষ্টির লক্ষ্যে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও কূটনৈতিক উদ্যোগও অত্যন্ত নাজুক। এ অবস্থায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। বহু প্রতিষ্ঠানের কাজ না থাকায় জনশক্তি রফতানি বন্ধের চিন্তা করছে তারা। এ ছাড়া বিশ্বব্যাপী নতুন করে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা এবং সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশের কতিপয় শ্রমিক জঙ্গি অর্থায়নে জড়িত থাকার ঘটনায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তারা জানান, সৌদি আরব, কাতার, ওমান ও কুয়েত সীমিত সংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী নেয়া শুরু করলেও জনশক্তি রফতানির আগের গতি আর ফিরে আসছে না। লিবিয়া, ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেনসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেই বাংলাদেশি কর্মীর চাহিদা রয়েছে। কিন্তু সেখানে যুদ্ধ চলতে থাকায় বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রফতানি বন্ধ রেখেছে সরকার।
এদিকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অবৈধ হয়ে পড়া ৮০ হাজার বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে বাংলাদেশকে চাপে রেখেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। তাদের ফেরত পাঠাতে সব ধরনের সহযোগিতারও প্রস্তাব দিয়েছে ইইউ। কিন্তু ইইউয়ের এই প্রস্তাবে রাজি হওয়া ছাড়া বাংলাদেশের কোনো উপায় নেই। কারণ বাংলাদেশের অভিবাসন নীতির সঙ্গে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অবৈধ হয়ে পড়া ৮০ হাজার বাংলাদেশিকে ফেরত না নেয়াটা সাংঘর্ষিক। এদিকে বাংলাদেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ আসে প্রবাসী বাংলাদেশিদের রেমিট্যান্স থেকে। কাজেই আন্তর্জাতিক অভিবাসন নীতির সবকিছুই বাংলাদেশকে মানতে হবে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরকালে এক বৈঠকে ইইউ প্রতিনিধি দল প্রস্তাব দেয় ইইউভুক্ত দেশগুলোতে আড়াই লাখ বাংলাদেশি রয়েছে। এদের মধ্যে আনুমানিক ৮০ হাজার বাংলাদেশি অবৈধ হয়ে পড়েছে। ভিসার মেয়াদ না থাকা, ছাত্রত্ব শেষ হয়ে যাওয়ার পরও দেশে ফিরে না আসাসহ নানা কারণেই তারা অবৈধ হয়েছেন। তাদেরকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে চায় ইইউ। কী করে তাদেরকে ফেরত পাঠানো যায় তা নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠকও করেছে ইইউ। যদিও বিষয়টি নিয়ে ধীরে চলতে চায় বাংলাদেশ। তবে বড় ধরনের বহুমুখী উদ্যোগ ছাড়া জনশক্তি রফতানি খাতকে গতিশীল করা কঠিন হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বাংলাদেশ সময়: ৭:০৪:৫১   ৩১৭ বার পঠিত