রবিবার, ২৪ জুলাই ২০১৬
প্রিমিয়ার লিগের নতুন যাত্রা
Home Page » খেলা » প্রিমিয়ার লিগের নতুন যাত্রা‘জমবে খেলা মাতবে দেশ’। এই স্লোগান লেখাসহ বেশ কিছু প্ল্যাকার্ড শোভা পাচ্ছে এমএ আজিজ স্টেডিয়াম চত্বরে। সঙ্গে ১২টি দলের ছবিও। যেন এক টুকরা ফুটবল সাম্রাজ্য!
নতুন সূর্যোদয়ের অপেক্ষায় থাকা প্রিমিয়ার ফুটবল লিগের জন্য এটা ভালো বিজ্ঞাপন। এর চেয়ে বড় বিজ্ঞাপন, এই প্রথম লিগের উদ্বোধন ঢাকার বাইরে হওয়া। সেটা সম্ভব হচ্ছে আসলে এই প্রথম লিগের স্বত্ব বিক্রি করায়। সাইফ পাওয়ারটেক পাঁচ বছরের জন্য স্বত্ব কিনে রাজধানীর চার দেয়ালে ধুঁকতে থাকা লিগটাকে দিচ্ছে ‘মুক্তির’ আনন্দ।
জরাজীর্ণ লিগের গায়ে রঙের প্রলেপ বুলিয়ে দেওয়ার কথাও বলা হচ্ছে জোরালোভাবে। স্বত্ব কেনা প্রতিষ্ঠানটি বছরে চার কোটি টাকা দেবে বাফুফেকে, আরও নাকি চার-পাঁচ কোটি টাকা খরচ করবে লিগ জমিয়ে তুলতে। চট্টগ্রামে আজ পর্দা উঠতে যাওয়া বহুল আলোচিত নবম পেশাদার ফুটবল লিগ তাই ব্যয়ের দিক থেকেও গড়ছে নতুন রেকর্ড।
হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়নের আশায় আজ লিগ শুরু করছে শেখ জামাল ধানমন্ডি। সেই স্নায়ুচাপ অবশ্য বোঝা যাচ্ছে না সতীর্থ শিহাবের ঘাড়ে এমেকার চড়ে বসা দেখে। কাল চট্টগ্রামের শারীরিক শিক্ষা কলেজমাঠে l সৌরভ দাশরেকর্ড হচ্ছে আরেকটি, ঢাকার বাইরে এই প্রথম এক টিকিটে দুই ম্যাচ! ৬০ টাকার টিকিটে থাকবে বারকোড, এটিও দেখা যায়নি আগে। দুই ম্যাচের মাঝখানে ঘণ্টা খানেকের বিরতির সময়ে বোনাস হিসেবে গানের আয়োজন থাকছে দর্শকদের জন্য। আর ফুটবলারদের জন্য ম্যাচসেরার পুরস্কারের উৎসাহব্যঞ্জক উদ্যোগটি চোখ কেড়ে নেবে যে কারও।
ম্যাচ ভেন্যুতে কাল বিকেলে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা (সিজেকেএস) আয়োজিত সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় উঠে এল এসবই। সিজেকেএসের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন আশাবাদ রাখলেন, ‘চট্টগ্রামে লিগের প্রথম তিন রাউন্ডের এমন ব্যতিক্রমী আয়োজনে দারুণ সাড়া পড়বে।’
আকাঙ্ক্ষাটা বুঝতে পেরে প্রকৃতিও যেন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। গত কয়েক দিন এখানে বৃষ্টি নেই। কিন্তু সামগ্রিক আয়োজনের হালচালটা ভালো ঠেকছে না। গত সেপ্টেম্বরে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট গর্জন তুলে কাঁপিয়ে দিয়েছিল বন্দরনগরীকে। কিন্তু প্রিমিয়ার লিগ শুরুর মাহেন্দ্রক্ষণে চট্টগ্রামে পা রেখে ভিন্ন ছবি দেখতে হলো। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের মতো ম-ম গন্ধ নেই ঘরোয়া এই লিগ ঘিরে।
কারণ হিসেবে প্রচারণার ঘাটতির কথাই বলা হচ্ছে জোরালোভাবে। বলা হচ্ছে, গত পরশু নাকি ১৬টি গাড়ি নামানো হয়েছিল প্রচারের আশায়। কিন্তু এসব তথ্য খাতা-কলমেই। স্থানীয় এক সাংবাদিকের ভাষায়, শেখ কামাল টুর্নামেন্টে যে প্রচারণা হয়েছিল, এর সিকিভাগও এখন নেই। স্টেডিয়াম চত্বরে কিছু ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন থাকলেও বাকি শহরে খুবই কম। ‘ব্র্যান্ডিং’ করে ফাটিয়ে দেওয়ার আওয়াজটা শুধুই মুখে মুখে!.
ফুটবল-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততাও কম দেখা যাচ্ছে। অনেকের অভিযোগ, আয়োজক সাইফ গ্লোবাল স্পোর্টস খরচটা অপাত্রেই করছে বেশি। আছে সমন্বয়ের অভাব। এসব নিয়ে স্থানীয় সাংবাদিকেরা বেজায় ক্ষুব্ধ। ২০ জুলাই লিগের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সামান্য দাওয়াতপত্রও নাকি পায়নি স্থানীয় সংবাদমাধ্যম। মাঠের ক্ষতি করেও অগোছালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান জমানো যায়নি। অর্ধেকেরও বেশি গ্যালারি ফাঁকা থাকাটা দৃষ্টিকটু ঠেকেছে অনেকের কাছে।
লিগটাকে ঢাকার বাইরে নেওয়ার আসল যে উদ্দেশ্য, দর্শকদের সেই আবেগের তারে গতকাল পর্যন্ত সেভাবে টোকা পড়েনি। বাফুফেও এ নিয়ে কিছু ভাবছে বলে মনে হয় না। স্বত্ব বিক্রি করে দিয়ে তারা এখন বিভিন্ন ডিএফএর শীর্ষ কর্মকর্তাদের চট্টগ্রামে নিয়ে আসছে খেলা দেখাতে। বাকি ১১টি দলের দুজন করে প্রতিনিধিকে চট্টগ্রামে রেখে আতিথেয়তা দেওয়ার তোড়জোড় করছে চট্টগ্রাম আবাহনীও।
তবে আসল ‘আতিথেয়তা’ নিয়ে অভিযোগ আছে দু-একটি ক্লাবের। আরামবাগ যেমন চটে আছে পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী কাল পুলিশ লাইন মাঠে অনুশীলন করতে না পেরে। ওখানে গিয়ে তারা দেখল মাঠে বাঁশ পোঁতা! উত্তর বারিধারাও ওই মাঠে অনুশীলন করতে পারেনি।
এসব সমস্যা মাথায় নিয়েই শুভযাত্রার ক্ষণ গুনছে নবম প্রিমিয়ার ফুটবল লিগ। টুর্নামেন্টের বড় দলগুলো ছক কষছে চট্টগ্রাম থেকেই শিরোপা লড়াইয়ের ‘টেকঅফ’টা ভালোভাবে করার। সব মিলিয়ে ফুটবলের এক মিলনমেলাই হয়তো দেখতে যাচ্ছে বন্দরনগরী।
বাংলাদেশ সময়: ৫:৫৭:৫৯ ৪২৫ বার পঠিত