বুধবার, ২০ জুলাই ২০১৬
সব বাহিনীকে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষতা অর্জন করতে হবে
Home Page » জাতীয় » সব বাহিনীকে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষতা অর্জন করতে হবে
বঙ্গ-নিউজ: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের সকল নিরাপত্তা বাহিনীকে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে পারদর্শিতা অর্জনের তাগিদ দিয়ে বলেছেন, নিরাপত্তা বাহিনীর প্রত্যেক সদস্যকে সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এর জন্য যা যা প্রয়োজন অবশ্যই সরকার তা করবে। জনগণের শক্তিকেই মূলশক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আন্তর্জাতিক কনফারেন্স সেন্টারে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করছি যে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় এর ধরন পাল্টেছে। যে কারণে আমি প্রত্যেক বাহিনীকে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের সক্ষমতা অর্জনের পাশাপাশি এই অশুভ শক্তিকে দমনে প্রশিক্ষণ গ্রহণের আহবান জানাব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধর্মের দোহাই দিয়ে মেধাবী তরুণদের উগ্র জঙ্গিবাদে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। জড়িতদের চিহ্নিত করে এর মূলোত্পাটন করা হবে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে এমন কিছু সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের ঘটনা ঘটেছে যা সত্যই ঘৃণিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, নতুন নতুন প্রযুক্তির আবিষ্কার এক দিকে যেমন আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করছে, অপরদিকে ধ্বংসাত্মক কাজে এগুলোর ব্যবহার মানুষের জীবনমানকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। তবে এ ধরনের ঘটনা যে শুধু বাংলাদেশেই ঘটছে তা নয়, উন্নত বিশ্বেও ঘটে চলেছে, এগুলো সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্যই হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই আমি চাই বাংলাদেশ কোনো ক্ষেত্রেই যেন পিছিয়ে না থাকে, আমরা প্রত্যেক বাহিনীকেই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ করে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেব।
প্রধানমন্ত্রী জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় তার সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, আমরা জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের বিভিন্ন ঘটনাবলীর তদন্ত করে এসব ঘটনায় সম্পৃক্তদের গ্রেফতার করছি। তবে এই সামাজিক ব্যাধি দূরীকরণে এটুকুই যথেষ্ট নয়, আমাদের এই দুই অপশক্তির বিরুদ্ধে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, প্রত্যেক মানুষের মধ্যে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী চেতনাকে জাগ্রত করে এ বিষয়ে আমাদের প্রত্যেককে সচেতন করে তুলতে হবে। তিনি গুলশানের একটি রেস্তোরাঁ এবং কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে জঙ্গি হামলার পাশাপাশি সাম্প্রতিককালে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংঘটিত গুপ্তহত্যার জন্য যুদ্ধাপরাধী এবং দেশের উন্নয়নবিরোধী অপশক্তি জড়িত বলে অভিযোগ করেন।
ইসলামকে কেউ যেন কলুষিত করতে না পারে তা প্রতিরোধে তার সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ সব নৃশংস কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে তার সরকার প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থাই গ্রহণ করবে। পাশাপাশি এ জন্য আন্তর্জাতিক মহলের আরো সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে। ইসলামকে শান্তির ধর্ম উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ আজ এই ধর্মকে বিভিন্নভাবে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এটা ইসলামের মূল চেতনায় বিশ্বাসী জনগণের জন্য অত্যন্ত লজ্জা ও দুঃখজনক। ধর্মের নামে ধর্মান্ধতার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ধর্মের মূল বাণীটা যেন সঠিকভাবে শিখতে পারে সে ব্যবস্থাটা নেওয়া উচিত। এটা প্রতিটি ধর্মের ক্ষেত্রেই হওয়া উচিত। প্রতিটি ধর্মেই শান্তির বাণী বলা আছে’। তিনি বলেন, ‘ধর্মের নামে ধর্মান্ধতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এটা শুধু আমাদের দেশে না’।
সন্তান-সন্ততিকে বিপথে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষার জন্য পিতা-মাতা, অভিভাবকদের সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের সন্তানরা কি করে, কোথায় যায়, কার সঙ্গে মেশে- এসব বিষয়ের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখা প্রত্যেক পিতা-মাতা ও অভিভাবকের দায়িত্ব, যাতে করে তারা কোনো ভুল পথে পা না বাড়াতে পারে। সচ্ছল পরিবারের সন্তানদের একাংশ যাদের পরিবার কোনোই অভাব-অভিযোগ অপূরণীয় রাখেনি- তারাই এই পথে পা বাড়াচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দেখা যাচ্ছে তাদের কোনো একটা চাওয়া-পাওয়ার অপূর্ণতাও তাদের মানসিক যন্ত্রণার কারণ হচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন অভাব না থাকাটাই তাদের একটা মানসিক কষ্ট হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
এসএসএফ সদস্যদের কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ফোর্স তাদের অন্তর্ভুক্তিকাল থেকেই উচ্চ মানসিক শক্তি, সর্বোচ্চ আনুগত্য এবং সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে চলেছে। তিনি বলেন, আমি মনে করি- এসএসএফ কর্মকর্তারা যেভাবে তাদের ওপর ন্যস্ত দায়িত্ব বিগত ৩০ বছর যাবত্ অত্যন্ত আস্থার সঙ্গে পালন করে যাচ্ছেন সেভাবেই আগামীর দিনগুলোতেও তারা দায়িত্ব পালন করে যাবেন।
অনুষ্ঠানে এসএসএফের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. শফিকুর রহমান স্বাগত বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকী এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
পাকিস্তানের বিদায়ী হাইকমিশনারের সাক্ষাত্
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বিশেষ করে নারীর ক্ষমতায়ন ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে অসামান্য সাফল্য অর্জনের ভূয়সী প্রশংসা করেছে পাকিস্তান। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাত্কালে পাকিস্তানের বিদায়ী হাইকমিশনার সুজা আলম একথা বলেন। হাইকমিশনার বলেন, এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা থেকে পাকিস্তান শিক্ষা নিতে পারে। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন।
প্রধানমন্ত্রী দূতের মাধ্যমে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে তার শুভেচ্ছা পৌঁছে দেন। প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভি এবং মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ৭:৫৭:৫৬ ৪২৪ বার পঠিত