রবিবার, ২ জুন ২০১৩

আমি, আমরা ও দেশপ্রেম

Home Page » এক্সক্লুসিভ » আমি, আমরা ও দেশপ্রেম
রবিবার, ২ জুন ২০১৩



2yopn5s.jpg-সনেট আকরাম-

যে ভৌগলিক ও সামাজিক পরিবেশের মধ্যে মানুষ জন্মগ্রহন করে ও বড় হয়ে উঠে সে পরিবেশের প্রতি, সেখানকার মানুষের প্রতি তার একটা অন্তর আকর্ষণ গড়ে উঠে। তাই আবেগ বিহবল কণ্ঠে সে গাইতে ভালবাসে - সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভুমি। দেশের পশু, পাখি, তরুলতা হতে আরম্ভ করে ধুলিকনা পর্যন্ত একজন মানুষের কাছে পরম সাধনার ধন বা কামনার আক্ষয় স্বর্গ । কিন্তু এই পরম সাধনার ধন বা কামনার আক্ষয় স্বর্গের প্রতি সে দেশের মানুষের যে ভালবাসা তা পরিমাপ করার মাপকাঠি কি? অনেকেই হয়ত বলবেন, ভালবাসা কি আর পরিমাপ করার বিষয় নাকি ? ভালবাসা তো শুধুমাত্র অনুভবের বিষয় । তা চোখে দেখা যায় না, ধরা যায় না, শুধু অনুভব করা যায় । ভালবাসা কি সত্যি শুধু অনুভব করার বিষয় ? যদি তাই হয় তাহলে সে ভালবাসা তো আর শুন্যের উপর গড়ে উঠে না । তার জন্য প্রয়োজন একটি শক্তিশালী ভিত্তি যা তাঁকে তাঁর আদর্শের অনুপ্রেরণায় অনুপ্রাণিত করবে ।
যদি তাই হয় তাহলে দেশপ্রেমের জন্য যে বিষয়গুলো প্রয়োজন হয় সেগুলি কি ? সে দেশের মানুষ, রূপ, প্রকৃতি, পশুপাখি, এমনকি তাঁর প্রতিটি ধূলিকণা । প্রকৃতিগতভাবেই প্রাকৃতিক ভিত্তিগুলোর নিজস্ব কোন স্বার্থ নেই যা সে দেশের মানুষের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারে । তা সকল দেশে একই রকম, এর কোন নির্দিষ্ট সীমারেখা নেই। একটি শিশু যদি আমেরিকায় জন্মগ্রহণ না করে আফগানিস্তানে জন্মগ্রহণ করে তাহলে সে শিশুটি কোন না কোন ভাবে প্রকৃতিগতভাবেই বড় হয়ে উঠবে । কোন না কোনভাবে বললাম কেননা এই দুই দেশের মানুষের বেড়ে উঠার জন্য যে প্রক্রিয়াগুলোর প্রয়োজন হয় তা কোনভাবেই একই রকম নয় বলে । খুব সহজেই অনুমেয় যে আফগানিস্তানে জন্ম নেওয়া শিশুটির চেয়ে আমেরিকায় জন্ম নেওয়া শিশুটি হাজারগুন বেশি সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করে একটি নিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাবে, যে সুযোগ সুবিধা গুলির বেশির ভাগই ঐ নির্দিষ্ট দেশের মানুষের সৃষ্টি । আফগানিস্তানের শিশুটি সেসব সুযোগ সুবিধাগুলো হতে বঞ্চিত হওয়ার পিছনে নিশ্ছয়ই ঐ দেশের প্রকৃতির কোন দোষ নেই । যদি কোন দোষ থেকে থাকে তাহলে বেশিরভাগই তা ঐ দেশের মানুষের সৃষ্টি দোষ ত্রুটি । তাই দেশ বলতে শুধু মাত্র সে দেশের আলো, বাতাস, পানি বা প্রকৃতি কে বুঝায় না । দেশ বলতে সে দেশের মানুষ এবং তাঁদের আচার, আচরণ এমনকি চিন্তা ভাবনাকেও বুঝায় ।
তাই যদি হয়ে থাকে তাহলে কেউ যদি বলে এই দেশটা কে সে ভালবাসে না তাহলে কি খুব বেশি অন্যায় হয়ে যাবে ? কেউ যদি এই দেশের বিরুদ্ধে কথা বলে তাহলে কি সে দেশদ্রোহী হয়ে যাবে? দেশের বিরুদ্ধে কথা বলা মানেই কি দেশের আলো, বাতাস, পানি বা প্রকৃতির বিরুদ্ধে কথা বলা ? ধরা যাক, কেউ বড় চাকুরি নিয়ে শহরে বাসা বেধেছে । এখন যে গ্রামে সে শৈশব কাটিয়েছে সেখানে বেড়াতে গেলে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ে। সেই মাটির গন্ধে তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে মহা আনন্দের তৃপ্তি বইতে থাকে। যে নদীতে বন্ধুদের সাথে সারাটা দুপুর লাফালাফি করেছে, বহুদূর পর্যন্ত সাতার দিয়েছে, বহুদিন পর সেই নদী দেখে তার অন্তরে একপ্রকার অদৃশ্য সুখ অনুভূত হবে এটা স্বাভাবিক ও সহজাত । এর দ্বারা কি সত্যিকারের দেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ পাওয়া যায় ? দেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ কি ততোক্ষণ পর্যন্ত সম্ভব হবে যতক্ষণ না সে যাঁদের সাথে তার জীবনের এক মহুর্ত সময় ও অতিবাহিত করেছে তাঁদের কোন কল্যাণ করতে না পারলেও অন্তত অকল্যাণ করার মানসিকতাটুকু পরিহার করবে । কিন্তু, দুর্ভাগ্যজনকভাবে আজ মানুষের অকল্যাণ করতে পারার মানসিকতাই কি আজ আমাদের সবচেয়ে সহজলভ্য বিষয় হয়ে উঠছে না? আমার জানার সীমাবদ্ধতা অনেকের চেয়ে বেশী । আমি অনেকের চেয়ে কম ও বুঝি । আমার বিশ্বাস ভুল ও হতে পারে । তারপরও ঘর থেকে বের হতেই মানুষের সৃষ্টি অনিয়মটাকেই যখন নিয়ম হতে দেখি তখন কি করে বলি এই দেশটাকে আমি ভালবাসি ?

বাংলাদেশ সময়: ১১:১৩:১৬   ৫৭০ বার পঠিত