শুক্রবার, ২৬ আগস্ট ২০১৬

হারারের হায়েনা মানব!

Home Page » এক্সক্লুসিভ » হারারের হায়েনা মানব!
শুক্রবার, ২৬ আগস্ট ২০১৬



আফ্রিকার একটি দেশ ইথিওপিয়া। এরই পূর্বপ্রান্তে আছে প্রাচীন প্রাচীরঘেরা শহর হারার। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতেই এখানে দেখা মেলে এক অদ্ভুত দৃশ্যের।অন্ধকার শহরের গলিতে দেখা যায় মিশকালো এক মানুষকে। তিনি মুখ দিয়ে আওয়াজ করেন বন্য জন্তুর মতো। আর তার ওই ডাক শুনে খোদ শহরে এসে হাজির হয় বন্য হায়েনার দল। না, আক্রমণ করতে নয়। নিতান্তই খেলাচ্ছলে এবং কিঞ্চিত খানাপিনা করার উদ্দেশ্যে তাদের আগমন। হায়েনা আর মানুষে দেখা যায় অদ্ভুত বন্ধুত্ব। ন্যাটজিও ট্রাভেলার ডটকম থেকে পাওয়া গেল এই খবর।

হায়েনা সম্বন্ধে সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছুটা ভয় কাজ করে। হায়েনা নিতান্তই কুৎসিত জানোয়ার। প্রাণিজগতে তার পরিচয় মুর্দাফরাস হিসেবে। অন্য জন্তুদের পচা-গলা মৃতদেহ খেয়েই বেঁচে থাকে তারা। তবে এসব কিছুই হারারের মানুষের সঙ্গে তাদের বন্ধুত্বে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। আর সে বন্ধুত্বও কম দিনের নয়, অন্তত ৫০ বছরের পুরোনো।

হায়েনা এমনিতে ভীতু হলেও ক্ষুধা পেলে ভয়ানক হিংস্র হয়ে ওঠে। সিংহকেও তখন ছেড়ে কথা বলে না। হারারের আশপাশের কৃষকদের কাছে এসব ক্ষুধার্ত জন্তুগুলো ছিল মূর্তিমান আপদ। নিজেদের গবাদি পশু রক্ষা করতেই তারা হায়েনাদের সঙ্গে এই বন্দোবস্ত করে নেয়। হায়েনারা পেত উচ্ছিষ্ট খাবার, আর কৃষকরা দুদণ্ড স্বস্তির নিশ্বাস ফেলত তাদের গবাদি পশুর কথা ভেবে। সেই থেকেই চলছে।

কালক্রমে হায়েনাকে খেতে দেওয়ার এই প্রথার চল অনেকটা উঠে গেলেও হারার শহরের দুই বাসিন্দা মুলুগেতা আর ইউসুফ সালেহ এখনো হায়েনাদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ চালু রেখেছেন। হায়েনারা অবশ্য এমনিতেই শহরে ঢোকে ভাগাড়ে খাবার খুঁজতে, কিন্তু এই দুই বাসিন্দার সঙ্গে আগের সম্পর্কের খাতিরেই কি না, দেখা করতে ভুল হয় না তাদের। আর হায়েনার সঙ্গে বন্ধুত্ব দেখিয়ে পর্যটকদের কাছ থেকে কিছু অর্থ উপার্জন করেন এই দুজন।

হায়েনাদের খাবার দেওয়ার এই প্রথার পেছনে কিন্তু মজার এক কাহিনীও আছে। ঊনবিংশ শতকে নাকি হারার অঞ্চলে দেখা দেয় এক ভয়ানক দুর্ভিক্ষ। তখন এক সাধু স্বপ্নে দেখেন হায়েনাদের পরিজ রেঁধে খাওয়ালে দুর্ভিক্ষ কেটে যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ, আর ফলও নাকি পাওয়া গিয়েছিল হাতেহাতে।

এর পর থেকেই হারার শহরে হায়েনাদের কদর শুরু হয়। আবার অনেকে বলেন, শহরের বর্জ্য পরিষ্কার করার জন্যই নাকি এই হায়েনার পাল ডেকে আনার রীতি চালু করেছিলেন প্রাচীন শাসকরা।

সত্য-মিথ্যা যাই হোক, ধিকিধিকি করে হলেও হারার শহরে এখনো টিকে আছে হায়েনাকে খেতে দেওয়ার এই প্রথা। প্রতিবছর অনেক পর্যটক এই বিরান শহরটি দেখতে আসেন এই উদ্দেশ্যে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫:৫৫:২২   ৪৪৯ বার পঠিত