রবিবার, ১৭ জুলাই ২০১৬
অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব
Home Page » অর্থ ও বানিজ্য » অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাববঙ্গ-নিউজঃ পর পর দুই দফা জঙ্গি হামলার ঘটনায় বিরূপ প্রভাবের মুখে দেশের অর্থনীতি। বিশেষ করে গুলশানে নজিরবিহীন হত্যাযজ্ঞের পর বদলে যাচ্ছে ইতিবাচক অর্থনীতির চলমান ধারা। বিদেশীরা বাংলাদেশে আসতে ভয় পাচ্ছেন। এর প্রভাবে বাংলাদেশ সম্পর্কে আন্তর্জাতিক বিশ্বে নেতিবাচক ধারণা আরও প্রকট হচ্ছে। আর এর পুরো প্রভাব পড়বে দেশের রফতানি আয়ের ওপর। আশংকা করা হচ্ছে, তৈরি পোশাক শিল্প এতে বড় ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত হবে। গুলশানে তৈরি পোশাক শিল্পের সঙ্গে জড়িত একাধিক ইতালিয়ান ব্যবসায়ী নিহত হওয়ার পর ইতালির বাজার হাতছাড়া হতে চলেছে বলে একটি সূত্র দাবি করেছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই ঘটনায় সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) কমে যাবে। পর্যটন খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এছাড়া জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে বদনাম ছড়ালে জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রেও প্রভাব পড়তে পারে। জনশক্তি নেয়ার ক্ষেত্রে বিদেশীরা আরও সতর্ক হবে। জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের লিড ইকোনোমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির উল্লেখযোগ্য অংশই কোনো না কোনোভাবে আন্তর্জাতিক অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। আর অর্থনীতির বড় শত্র” হল ভীতি এবং অনিশ্চয়তা। পর পর দুই দফা জঙ্গি হামলার মধ্য দিয়ে ভীতি তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, যেসব ইতালিয়ান নাগরিক মারা গেছেন, তারা সবাই গার্মেন্ট খাতে কাজ করতেন। আর যেসব জাপানি নাগরিক মারা গেছেন, তারা মেট্রো রেলের মতো উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ করতেন। আর এই ঘটনার মধ্য দিয়ে বিশ্বে প্রমাণ হয়েছে, বাংলাদেশে সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য হল বিদেশীরা। ফলে বিভিন্ন দূতাবাসে সতর্কতা জারি হয়েছে। বলা হচ্ছে, খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন না হলে বাংলাদেশে যাওয়া উচিত না। তিনি বলেন, আমরা শুনেছি বিভিন্ন দেশের ক্রেতারা অর্ডার দিতে বাংলাদেশে আসতে ভয় পাচ্ছেন। তারা গার্মেন্ট মালিকদের বলছেন, তোমরা দিল্লিতে বা সিঙ্গাপুরে আস। অর্থাৎ ক্রেতাদের মধ্যে একটি আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। এটি কতটা দীর্ঘ স্থায়ী হবে, তা নির্ভর করবে কীভাবে এই হামলা মোকাবেলা করা হচ্ছে তার ওপর। ড. জাহিদ হোসেন বলেন, শোলাকিয়ার ঘটনার পর বিদেশীদের কাছে পরিস্থিতি একটু ঘোলাটে হয়েছে। রফতানি এবং বিনিয়োগেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়া স্বাভাবিক। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, জঙ্গি হামলার পর মানুষের মধ্যে কিছু ভীতি কাজ করছে। তবে তারা স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছে। ফলে বলা যায়, স্বল্প মেয়াদে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। তবে মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে এর প্রভাব পড়বে। নতুন করে বিনিয়োগ করার ব্যাপারে হয়তো বিদেশীরা চিন্তা করতে পারে। কারণ নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত না হলে কেউ বিনিয়োগে আসবে না। এক্ষেত্রে সরকার কী পদক্ষেপ নেয়, সেটি বিবেচনার বিষয়। তিনি বলেন, গুলশানের হামলা মোকাবেলা করা সম্ভব হয়েছে বলে সরকারকে আত্মতুষ্টিতে ভুগলে চলবে না। পরে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে এ জন্য কথা কম বলে কাজে পরিণত করে দেখাতে হবে। তবে তিনি বলেন, পাইপলাইনে যেসব বিনিয়োগ রয়েছে- বিদেশীরা তা প্রত্যাহার করবে বলে মনে হয় না। কারণ এ খাতে তাদেরও স্বার্থ রয়েছে।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর প্রথম সহ-সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, সন্ত্রাসবাদ এখন বিশ্ব অর্থনীতির জন্য ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলোতে জঙ্গি হামলার কারণে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেন আলাদা হওয়ার পর বিশ্ব অর্থনীতি নতুন দিকে মোড় নিতে পারে। এ সময় দেশের ভেতরে জঙ্গি হামলা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এ ঘটনার পুরনাবৃত্তি ঘটলে শুধু অর্থনীতি নয়, দেশ-জাতি হিসেবে বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। ভবিষ্যৎ হামলা মোকাবেলায় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে তৎপর করার পরামর্শ দেন তিনি।
পোশাক রফতানি খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, কমপ্লায়েন্সের চাপে অনেক ক্রেতা অর্ডার ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এ সময় গুলশান হামলার ঘটনায় সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে আতংকিত হয়ে পড়েছেন ক্রেতারা। অর্ডার আনতে তৃতীয় দেশে গিয়ে বৈঠক করতে হচ্ছে। সম্প্রতি কানাডার ব্র্যান্ড সিয়ার্সের একটি প্রতিনিধি দলের থাইল্যান্ড, ভারত ও বাংলাদেশ সফরের কথা ছিল। কিন্তু সিয়ার্স বাংলাদেশ সফর বাতিল করে সংশ্লিষ্ট রফতানিকারককে ভারত বা থাইল্যান্ডে যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ড অ্যারো পোস্টালও একই কারণ দেখিয়ে সফর বাতিল করে তৃতীয় কোনো দেশে বৈঠকের কথা বলেছে। এদিকে চলতি অর্থবছরে মোট ৩৭ বিলিয়ন ডলারের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাতে লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৩০ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার। আগামীতে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস-বিদ্যুৎ পাওয়া গেলে, শান্তি-শৃংখলা বজায় থাকলে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটলে রফতানির লক্ষ্য অর্জন সম্ভব। জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বর্তমানে সন্ত্রাসবাদ বৈশ্বিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আবার ঘটলে অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে দেশব্যাপী জনমত সৃষ্টির আহ্বান জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, তৈরি পোশাকসংশ্লিষ্ট বিদেশীদের নিরাপত্তা দিতে তালিকা তৈরি করছে শিল্প পুলিশ। সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, জঙ্গিবাদ বাংলাদেশের একক সমস্যা নয়, এটি বৈশ্বিক সমস্যা। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বিষয়টি অনুধাবন করছেন। তবে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলে দীর্ঘ মেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এর কারণ, তখন বিনিয়োগের পথ সংকুচিত হবে। নতুন বিনিয়োগ না এলে সরকার কাক্সিক্ষত মাত্রায় প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারবে না। এ ছাড়া গুলশান হামলার প্রভাব পড়েছে হোটেল-গেস্ট হাউস খাতে। কয়েকটি গেস্ট হাউস মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাহিদা থাকায় শুধু গুলশান, বারিধারা ও বনানী এলাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৭০টি গেস্ট হাউস গড়ে উঠেছে। এর সঙ্গে সরাসরি কর্মসংস্থানে জড়িত প্রায় ১০ হাজার মানুষ
বাংলাদেশ সময়: ১৩:১৬:০০ ৪৩৩ বার পঠিত