বৃহস্পতিবার, ১৪ জুলাই ২০১৬

আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে রয়েছে ২৩ প্রকল্পের প্রায় সাড়ে চার শ’ চিকিৎসকের পদোন্নতি।

Home Page » জাতীয় » আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে রয়েছে ২৩ প্রকল্পের প্রায় সাড়ে চার শ’ চিকিৎসকের পদোন্নতি।
বৃহস্পতিবার, ১৪ জুলাই ২০১৬



is.jpgবঙ্গ-নিউজঃ চাকরি বিধিমালায় নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতির বিধান থাকলেও এ ক্ষেত্রে তা মানা হচ্ছে না। ক্যাডারভুক্ত না হলে পদোন্নতি মিলবে না বলে মন্ত্রণালয় থেকে বলা হচ্ছে। আবার ক্যাডারভুক্ত করার জন্য মন্ত্রণালয়ের কোন উদ্যোগ ছিল না। সম্প্রতি উদ্যোগ নিলেও তা চলছে কচ্ছপের গতিতে। আবার এদের কোন কোন ডাক্তারকে ইতোপূর্বে পদোন্নতি দেয়া হলেও সম্প্রতি আমলারা আটকে রেখেছে সরকার সমর্থিত এই সকল কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে। এই পদোন্নতির জট খোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ইকবাল আর্সলাইন আমলাদের সঙ্গে কয়েক দফা দেন-দরকার করলেও তাতে কোন লাভ হয়নি।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারী (জ্যেষ্ঠতা ও পদোন্নতি) বিধিমালা, ২০১১ এর ৬, ৭ ও ৮ ধারায় পদোন্নতির পদ্ধতি বিস্তারিত বলা রয়েছে। নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতির বিধান থাকলেও আমলারা তা পাত্তা দিচ্ছেন না। এই সকল প্রকল্পের অধিকাংশই বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের (১৯৯৬ আমলে) আমলের। এতে নিয়োগপ্রাপ্ত অধিকাংশ চিকিৎসক স্বাধীনতার সপক্ষের। অথচ ভিন্ন মতাবলম্বী চিকিৎসকদের পদোন্নতি দিতে কোন আমলা তা আটকাতে পারেনি।

রাজধানীর ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী হাসপাতাল স্থাপন প্রকল্পে ১৯৯৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে যোগ পান কৌশিক মল্লিক। পরের বছর জুলাইয়ে প্রকল্পটি রাজস্ব খাতের অন্তর্ভুক্ত হয়। তিনিসহ প্রকল্পের সব চিকিৎসকের চাকরিও স্থানান্তরিত হয় সেখানে। একই সঙ্গে তাদের চাকরি নিয়মিত ও স্থায়ী করা হয়। ডাঃ কৌশিক মল্লিককে স্বাস্থ্য অধিদফতরে ওএসডি সংযুক্তি করে শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পদায়ন করা হয়। সেখানে কর্মরত অবস্থায় প্লাস্টিক সার্জারির ওপর স্নাতকোত্তর কোর্স (এমএস) সম্পন্ন করেন তিনি। প্রায় দুই বছর আগে ডাঃ কৌশিককে আবারও স্বাস্থ্য অধিদফতরে ওএসডি করে সংযুক্তি দিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে বদলি করা হয়। এভাবে ২০ বছর ধরে মেডিক্যাল অফিসার পদেই আটকে আছেন তিনি। প্রকল্পভুক্ত বিভিন্ন চিকিৎসক ইতোমধ্যে বেসিক ও ক্লিনিক্যাল বিষয়ে উচ্চশিক্ষার কোর্স এমপিএইচ, এমএস, এমডি, এমফিল, এফসিপিএস, এফআরসিএস, এমআরসিওজিসহ বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করেছেন। অভিজ্ঞতার ঝুলি সমৃদ্ধ তাদের। কিন্তু তারপরও ২৩টি প্রকল্পে নিয়োগ পাওয়া ৪৫০ চিকিৎসক এখনও আটকে আছেন একই পদে। কারণ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ভুলে বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারভুক্ত করা হয়নি তাদের।

এ সম্পর্কে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, প্রকল্প রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত হওয়ার পর চিকিৎসকরাও রাজস্ব খাতে আত্মীভূত হয়েছে। নন-ক্যাডার কর্মকর্তা হিসেবে তাদের চাকরি নিয়মিত ও স্থায়ীকরণ হয়েছে। কিন্তু বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এ কারণে তারা পদোন্নতি পাচ্ছেন না। এসব চিকিৎসক যাতে নিয়মিত পদোন্নতি ও সুযোগ-সুবিধা পেতে পারে, সেজন্য উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

রাজধানীর জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে কর্মরত ডাঃ ইসমাইল হোসেন বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ভুলের কারণে দীর্ঘ সময় ধরে তাদের পদোন্নতিবঞ্চিত থাকতে হয়েছে। মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিয়ে বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত করলে তারাও নিয়মিতভাবে পদোন্নতি পেতেন। কিন্তু নিয়মিত পদোন্নতি না হওয়ায় প্রকল্পের আওতায় চাকরিতে যোগদানকারী বেশিরভাগ চিকিৎসক কর্মকর্তা নিজেদের মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাস করা জুনিয়রদের পেছনে রয়েছেন।

চিকিৎসকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব অধ্যাপক ডাঃ ইকবাল আর্সলান বলেন, জনস্বার্থে বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় এসব চিকিৎসককে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রকল্পের চিকিৎসক অজুহাতে তাদের বঞ্চিত করে রাখা কোনভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়। তাদের বিষয়ে সরকারকে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

প্রকল্পভুক্ত কোন কোন মেডিক্যাল অফিসারের ভাগ্য অবশ্য এর মধ্যেই পাল্টে গেছে। তাদের কেউ কেউ বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে স্বাস্থ্য ক্যাডারে যোগ দিয়েছেন। আবার আওয়ামী লীগ সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) এবং বিএনপি সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) প্রায় অর্ধশত চিকিৎসক নেতা তাদের দলীয় সরকারের আমলে উচ্চ পর্যায়ে জোরালো লবিং ও তদবির করে পদোন্নতি বাগিয়ে নিয়েছেন। প্রায় অর্ধেক চিকিৎসক প্রকল্পের চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। কেউ আবার অবসরে চলে গেছেন। কারও কারও মৃত্যুও হয়েছে। তাদের জুনিয়ররা কেউ কেউ সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেলেও তারা মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে এখনও কর্মরত রয়েছেন

বাংলাদেশ সময়: ১:০৮:০৬   ৩৪৪ বার পঠিত