রবিবার, ১৯ জুন ২০১৬

কমছে বাণিজ্য ঘাটতি লেনদেন ভারসাম্যে রেকর্ড উদ্বৃত্ত

Home Page » অর্থ ও বানিজ্য » কমছে বাণিজ্য ঘাটতি লেনদেন ভারসাম্যে রেকর্ড উদ্বৃত্ত
রবিবার, ১৯ জুন ২০১৬



বঙ্গ-নিউজঃ

ধারাবাহিক রফতানি বৃদ্ধি ও আমদানি ব্যয় কমে আসায় প্রতি মাসেই বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যে বড় উদ্বৃত্ত ধরে রাখছে বাংলাদেশ। চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) এ উদ্বৃত্তের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩১৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার, যা গেল অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪২ শতাংশ বেশি। এদিকে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত ধরে রাখার পাশাপাশি এ সময়ে বাণিজ্য ঘাটতিও কমেছে। অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫২৭ কোটি ১০ লাখ ডলার, যা গেল অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৫৮৭ কোটি ২০ লাখ ডলার।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল ও খাদ্যপণ্যের দাম কমায় বাংলাদেশের আমদানি ব্যয় কমছে। পাশাপাশি বাড়ছে রফতানি আয়। ফলে চলতি হিসাবে বড় উদ্বৃত্ত ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। অর্থবছরের বাকি সময়ে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত বজায় থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তারা। নিয়মিত আমদানি-রফতানিসহ অন্যান্য আয়ব্যয় চলতি হিসাবের অন্তর্ভুক্ত। এ হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়।
গেলবারের মতো এবারও চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত রেখেই অর্থবছর শুরু করে বাংলাদেশ। অর্থবছরের শুরুতে এ উদ্বৃত্ত কম থাকলেও এখন বেড়েছে। প্রথম মাস জুলাইয়ে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল ৮১ কোটি ৮০ লাখ ডলার। অর্থবছরের জুলাই থেকে আগস্ট সময়ে এ উদ্বৃত্তের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৮৮ কোটি ২০ লাখ ডলার। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর সময়ে উদ্বৃত্তের পরিমাণ কিছুটা কমলেও জুলাই থেকে ডিসেম্বর সময়ে এ উদ্বৃত্ত বেড়ে ২১০ কোটি ডলার এবং জুলাই থেকে মার্চ সময়ে তা ৩০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি পৌঁছায়। গেল অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর সময়ে চলতি হিসাবে ১৬৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার ও জুলাই থেকে মার্চ সময়ে ২৪৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত ছিল। তবে গেল অর্থবছর উদ্বৃত্ত দিয়ে অর্থবছর শুরু করলেও শেষ পর্যন্ত চলতি হিসাবে ১৬৫ কোটি ডলারের ঘাটতি ছিল। তবে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এ সূচকে ১৪০ কোটি ২০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত ছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল সময়ে বিভিন্ন পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ ৩ হাজার ২২৫৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার ব্যয় করেছে, যা গেল অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪ দশমিক ৮১ শতাংশ বেশি। গেল অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ব্যয় হয়েছিল ৩ হাজার ৭৮ কোটি ডলার। এদিকে অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে জ্বালানি তেল আমদানির জন্য ১৭৬ কোটি ৩২ লাখ ডলারের এলসি (ঋণপত্র) খোলা হয়েছে, যা গেল অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ কম। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের এ ১০ মাসে তেল আমদানির জন্য ২৯২ কোটি ৯৮ লাখ ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল। এ সময়ে খাদ্যপণ্য (চাল ও গম) আমদানির এলসি খোলার পরিমাণ কমেছে ৩৮ দশমিক ৫২ শতাংশ। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল এ ১০ মাসে রফতানি আয় হয়েছে ২ হাজার ৬৯৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার, যা গেল অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেশি। গেল অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রফতানি আয় হয়েছিল ২ হাজার ৪৯০ কোটি ৮০ ডলার। তবে সম্প্রতি রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো থেকে রফতানি আয়ের ১১ মাসের তথ্য পাওয়া গেছে। এ ১১ মাসের হিসাবে রফতানি আয় ৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেড়েছে। তবে এই নয় মাসে প্রবসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ৩ দশমিক ০৫ শতাংশ কমেছে।প্রতিবেদনে দেখা যায়, এ সময়ে পণ্য বাণিজ্যের পাশাপাশি সেবা খাতেও বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে। গেল অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল সময়ে এ খাতের ঘাটতি ছিল ২৬৪ কোটি ২০ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা কমে ২০৫ কোটি ১০ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে। মূলত বীমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের আয়ব্যয় হিসাব করে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি পরিমাপ করা হয়। প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে দেশে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে ১৮২ কোটি ডলার, যা গেল অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২১ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশ সময়: ৯:৩৫:১৯   ৩৭৬ বার পঠিত