শনিবার, ১৮ জুন ২০১৬

রামকৃষ্ণ মিশনে জঙ্গি হুমকি, মোদীর উদ্বেগ

Home Page » প্রথমপাতা » রামকৃষ্ণ মিশনে জঙ্গি হুমকি, মোদীর উদ্বেগ
শনিবার, ১৮ জুন ২০১৬



রামকৃষ্ণ মিশনে জঙ্গি হুমকি, মোদীর উদ্বেগ

বঙ্গ-নিউজঃ পুরান ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশন মঠের স্বামী গুরু সেবানন্দকে হত্যার হুমকির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে ভারত। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উদ্বেগ জানিয়েছেন খোদ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার কার্যালয় থেকে ভারতীয় হাইকমিশনের মাধ্যমে ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। এছাড়া ইস্যুটি নিয়ে হাইকমিশনের পক্ষ থেকে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন। অন্যদিকে হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সাম্প্রতিককালে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও হত্যার ঘটনায় ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপি। তা ছাড়া টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্র্রতি সংখ্যালঘুদের ওপর বেশ কয়েকটি হামলার ঘটনায় বাংলাদেশ থেকে অভিবাসনের ভয়ে আছে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা।

গত বুধবার রামকৃষ্ণ মিশনের ধর্মগুরুকে আইএসের নামে হত্যার হুমকি দিয়ে ডাকযোগে একটি চিঠি পাঠানো হয়। এ ঘটনার পর রামকৃষ্ণ মিশন ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে বলেছে, জঙ্গি টার্গেটে রয়েছে ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশন। এ ঘটনায় বাংলাদেশে যেমন আতঙ্ক ছড়িয়েছে, তেমনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও উদ্বিগ্ন।

ঢাকায় হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গের বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুহিতানন্দ প্রধানমন্ত্রী মোদী ও মমতা ব্যানার্জিকে চিঠি দিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ মিশনের ১৪টি কেন্দ্র রয়েছে। গত কয়েক মাস ধরেই মিশনের ধর্মগুরুদের ফোন করে বা চিঠি পাঠিয়ে ‘হত্যার’ হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এই চিঠির পর বিষয়টি অবিলম্বে কেন্দ্রীয় সরকারের নজরে আনতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন মমতা ব্যানার্জি।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে রামকৃষ্ণ মিশনের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। কিছু দিন আগেও মোদী কলকাতায় এসে বেলুড় মঠে রামকৃষ্ণ মিশনে যান। তার কার্যালয়ে চিঠি পৌঁছনোর পর মোদী নিজে বিষয়টি নিয়ে তত্পর হয়েছেন। দফতরের সহকারী সচিব ভাস্কর খুলবেকে বিষয়টি সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকেও অবহিত করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের পক্ষ থেকে রামকৃষ্ণ মিশনের প্রধান স্বামী ধ্রুবেশানন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকার হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে একটি রিপোর্ট পাঠিয়েছেন। যা প্রধানমন্ত্রী মোদীর কার্যালয়েও পাঠানো হয়েছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার বলেছে, রিপোর্টে বলা হয়েছে জঙ্গি-দমনে শেখ হাসিনা সরকার সম্প্রতি সর্বাত্মক অভিযান শুরু করেছে। এর ফলে মৌলবাদী ও জঙ্গিদের মনোবলে যথেষ্ট চিড় ধরেছে। এই কারণে সংখ্যালঘুদের ওপর চোরাগোপ্তা হামলা ও হুমকি দিয়ে আতঙ্ক ছড়ানোর কৌশল নিয়েছে জঙ্গিরা। গত দেড় মাসে হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ ধর্মস্থানে বেশ কয়েকটি হামলা হয়েছে। কয়েকজন পুরোহিত ও ধর্মগুরুকে চোরাগোপ্তা হামলায় হত্যাও করা হয়েছে। বুধবারও মাদারীপুরে এক সংখ্যালঘু কলেজ শিক্ষকের বাড়িতে ঢুকে তার ওপর হামলা করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েই দেখছে। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, আইএস-এর নাম করে নাশকতা চালানো জেএমবি ও আনসারুল্লা জঙ্গিদের বহু নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। প্রতিবেশী দেশে জঙ্গি-বিরোধী এই অভিযান ভারতের নিরাপত্তার জন্যও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বিষয়টিকে রাজনৈতিক চক্রান্ত বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি আনন্দবাজারকে বলেন, সংখ্যালঘুদের টার্গেট করে সরকার ও দেশের ভাবমূর্তি কলঙ্কিত করার চক্রান্ত হচ্ছে। বাংলাদেশ শুধু মুসলমানদের দেশ নয়। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানরাও এ দেশের নাগরিক। সরকার সর্বাত্মকভাবে তাদের পাশে রয়েছে।

সরকার ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছে ভারতীয় হাইকমিশন

এদিকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রামকৃষ্ণ মিশনের ধর্মগুরুকে হত্যার হুমকির বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের সরকারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের খবরে বলা হয়েছে, ইতিমধ্যে রামকৃষ্ণ মিশন ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ গতকাল শুক্রবার বলেছেন, ইস্যুটি নিয়ে ভারতীয় হাইকমিশন ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছে। তারা সব ধরনের সহযোগিতা ও নিরাপত্তা দেয়ার করার আশ্বাস দিয়েছে। এছাড়া ঢাকা আর কে মিশনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। গতকাল হাইকমিশনের কয়েকজন কর্মকর্তা মিশন পরিদর্শন করেন বলে তিনি জানান।

সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি’র ক্ষোভ

গতকাল হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সাম্প্রতিককালে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা ও হত্যার ঘটনায় ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপি। তারা এ নিয়ে একটি বিশেষ প্রস্তাব পাশ করতে চলেছে। একইসঙ্গে বাংলাদেশে হামলার নিন্দা জানাতে পশ্চিমবঙ্গে সভা-সমাবেশ করার উদ্যোগ নিয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের একটি প্রতিনিধি দল পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি নেতাদের সঙ্গে কলকাতায় বৈঠক করেছে। প্রতিনিধি দল বলেছে যে, তারা বাংলাদেশ ছেড়ে যেতে চায় না বরং সেখানেই অধিকার ও নিরাপত্তার জন্য লড়াই করতে চায়। বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ বলেন, আমাদের অবশ্যই তাদের সহায়তা করতে হবে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক জঙ্গি দমন অভিযানের প্রশংসা করেন তিনি।

অন্যদিকে, ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সমপ্রতি সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ের ওপর বেশ কয়েকটি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ থেকে অভিবাসনের ভয়ে আছে হিন্দু সমপ্রদায়ের লোক। ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে হিন্দু সমপ্রদায়ের লোক ছিল শতকরা ১৪ শতাংশ। এখন সেই সংখ্যা আট এর নিচে দাঁড়িয়েছে।

গত বছর থেকে ধর্মীয় সংখ্যালঘু, নাস্তিক ব্লগার, ধর্মনিরপেক্ষ কর্মী এবং বুদ্ধিজীবীদের ওপর সহিংস আক্রমণ শুরু হয়। এ অবস্থায় হিন্দুদের ভারতে যাওয়ার পরিকল্পনা ক্রমশ হ্রাস পাবে না বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ৯:৩৩:০৩   ৩২০ বার পঠিত