সোমবার, ১৩ জুন ২০১৬
ফালুজা থেকে পালিয়ে আসার গল্প
Home Page » বিবিধ » ফালুজা থেকে পালিয়ে আসার গল্পবঙ্গ-নিউজঃ আবু মারওয়ান ইরাকের ফালুজা থেকে পালিয়ে আসতে পারা সৌভাগ্যবান ব্যক্তিদের একজন। গত সপ্তাহে স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে ইরাকে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) ওই শক্ত ঘাঁটি ফালুজা থেকে পালিয়ে আসতে পেরেছেন। তবে এখনো হাজারো মানুষ আইএসের হাতে জিম্মি।
মারওয়ান পালিয়ে আসার অভিজ্ঞতা টেলিফোনে এএফপিকে জানান। তিনি বলেন, ‘২০১৩ সালের শেষের দিকে যখন সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলছিল, তখন আইএস, যা স্থানীয়ভাবে দায়েশ নামে পরিচিত, ধীরে ধীরে ফালুজা দখল করে নেয়। কিন্তু তখন আমরা পালাইনি।’
মারওয়ান আরও বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম, কয়েক সপ্তাহ বা মাসের মধ্যে এই সংকট কেটে যাবে। কিন্তু বন্দুকধারীরা দ্রুত স্থানীয় বাসিন্দাদের জিম্মি করে ফেলল, নতুন নিয়ম চালু করল, ডিক্রি জারি করল, বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করল আর পথে পথে বোমা বিছিয়ে রাখল। দুই বছর ধরে এ পরিস্থিতি। কিন্তু এ বছরের শুরু থেকে হঠাৎ আমাদের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে উঠল।
‘একপর্যায়ে আমি আর আমার প্রতিবেশী দায়েশের আবু ওমর নামের এক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি ফালুজার দক্ষিণাঞ্চলের ওয়ালি (স্থানীয় প্রধান) ছিলেন। তিনি আমাদের সহজে পার করে দিতে রাজি হলেন। কিন্তু শর্ত, আমাদের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীকেও নিয়ে যেতে হবে। তিনি বললেন, তাঁর স্ত্রীকে কিরকুকে নিয়ে যেতে হবে।’
দায়েশের সদস্যদের স্ত্রীরা এখানে ‘রাষ্ট্রীয় নারী’ হিসেবে পরিচিত। অন্য নারীরা ‘কমন উইমেন’।
দুদিনের মধ্যেই আবু ওমরের সঙ্গে মারওয়ানের চুক্তি চূড়ান্ত হয়। মারওয়ান তাঁর গাড়িতে নিজের পরিবারের পাশাপাশি আবু ওমরের স্ত্রীকে নিয়ে রওনা হন।
মারওয়ান বলেন, পথে বিভিন্ন জায়গায় তাঁদের থামতে হয়েছে। কিন্তু যখনই বলেছেন আবু ওমর পাঠিয়েছে, তখনই ছেড়ে দিয়েছে। একপর্যায়ে আবু ওমর মোটরসাইকেলে করে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন। তাঁদের যেন কোনো অসুবিধা না হয়, এ জন্য আগে আগে চলছিল মোটরসাইকেলটি। তবে আবু ওমর আগেই বলে দিয়েছিলেন, মোটরসাইকেল থেকে যেন তাঁদের গাড়ির দূরত্ব অন্তত ১০০ মিটার থাকে।
সাপের মতো অলিগলি পেরিয়ে অবশেষে তাঁরা ফোরাত নদীর তীরে জোবা এলাকায় পৌঁছান। মারওয়ান বলেন, পুরো রাস্তায়ই ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত দায়েশের অনেক যোদ্ধা ছিল। এ ছাড়া বিভিন্ন শিবিরে লুকিয়ে ছিল অনেকে।ইরাকি সেনাবাহিনী ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিজাত দলের অভিযানে বিধ্বস্ত শুহাদা। ছবি: এএফপি
জোবায় পৌঁছে দেখা যায়, কয়েকটি পরিবার সেখানে চার দিন ধরে নদী পার হওয়ার অপেক্ষায়। মারওয়ান বলেন, ‘আমি দায়েশের কাছে আমার গাড়িটি ছেড়ে দিই। এরপরও ওদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়। পরে স্ত্রী, সন্তান ও আবু ওমরের স্ত্রীকে নিয়ে ছোট্ট এক নৌকায় উঠে বসি। কিন্তু দায়েশ জানায়, পুরুষদের নৌকায় নয়, সাঁতরে যেতে হবে।’
দ্য নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল (এনআরসি) নামের একটি শীর্ষ ত্রাণ সংগঠনের হিসাবে, গত কয়েক দিনে শত শত পরিবার জোবা দিয়ে পালিয়ে আসছে। কয়েকটি দাতা গোষ্ঠী জানায়, পালানোর জন্য ফোরাত নদী পার হওয়ার চেষ্টা করলেই সাধারণ মানুষকে গুলি করে মারছে আইএস যোদ্ধারা। অনেকে ডুবেও মারা যাচ্ছে।
মারওয়ান বলেন, ‘নদী পেরিয়ে কিছুটা হেঁটেই চোখে পড়ে ইরাকি সেনাবাহিনী এবং দ্য হাসেদ আল-শাবি নামের আধা সামরিক সংস্থার আশ্রয়-ছাতা। তারা আমাদের স্বাগত জানায়, মিষ্টি, ফলের রস ও পানি পান করতে দেয়। এরপর তারা নারী ও পুরুষদের আলাদা করে আমাদের দেহ ও সঙ্গে থাকা ব্যাগ তল্লাশি শুরু করে। নিরাপত্তাকর্মীরা আইএস সম্পর্কে কোনো তথ্য আছে কি না, এ ব্যাপারে জানতে চান।’
বাংলাদেশ সময়: ১০:৩৭:২১ ৩৬৩ বার পঠিত