সোমবার, ৬ জুন ২০১৬
বাংলাদেশকে কখনো ভোলেননি ‘পকেট হারকিউলিস’
Home Page » এক্সক্লুসিভ » বাংলাদেশকে কখনো ভোলেননি ‘পকেট হারকিউলিস’বঙ্গ-নিউজ: মিস্টার ইউনিভার্স শিরোপাজয়ী ব্যায়ামবীর কুমিল্লার সন্তান মনোহর আইচ আজীবন সযত্নে হৃদয়ের মনিকোঠায় রেখেছিলেন বাংলাদেশে তার শৈশবের স্মৃতি।শতবর্ষী এই বাঙালি রোববার উত্তর কলকাতার বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ছাড়ার আগে মৃত্যুশয্যায়ও বহুবার সন্তানদের কাছে আক্ষেপ করে বলেছেন, “আমারে তোমরা একবার দেশে নিয়া গেলা না।”
১৯১২ সালে দাউদকান্দিতে জন্ম নেওয়া মনোহর শরীর চর্চায় হাতেখড়ি নেন ‘প্রবাদপ্রতীম ব্যায়ামবীর’ বিষ্ণু ঘোষের আখড়ায়। ৩০ বছর বয়সে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটেনের রাজকীয় বিমানবাহিনীতে যোগ দেন ৪ ফুট ১১ ইঞ্চির মনোহর।
১৯৪৬ সালে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম স্মরণীয় ঘটনা নৌ-বিদ্রোহে জড়িয়ে পড়েন তিনি। কয়েকজন উর্ধ্বতন ব্রিটিশ কর্মকর্তাকে ‘মারধর করার’ অপরাধে চার বছরের দণ্ড ভোগ করতে হয় তাকে।
কারাগারের ভেতরেও তিনি শরীর চর্চায় কোনো ছাড় দেননি তিনি, যার ফল মেলে মুক্তি পাওয়ার পর মাত্র দু’বছরের মধ্যে। ১৯৫২ সালে জিতে নেন মিস্টার ইউনিভার্স খেতাব। লন্ডনে ন্যাশনাল অ্যামেচার বডি-বিল্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন (এনএবিবিএ) ওই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।
১৯৫০ সালে ৩৮ বছর বয়সে মিস্টার হারকিউলিস প্রতিযোগিতা এবং পরের বছর নয়াদিল্লি, ১৯৫৪ সালে ম্যানিলা ও ১৯৫৮ টোকিওতে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসে শিরোপা জিতেন তিনি।
বয়স বাড়তে থাকলেও শরীর চর্চায় ছেদ টানেননি তিনি; ৮৯ বছর বয়সেও করেছেন শেষ প্রদর্শনী।
একশ বছর পেরিয়েও মনোহর আইচ নিয়মিতই ‘স্টুডিও ডি ফিজিক’ নামে তার ব্যায়ামাগারে যেতেন বলে পরিবারের সদস্যরা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।
শেষ পর্যন্ত বয়সের সঙ্গে লড়াইয়ে হার মেনে বছরখানেক আগে শয্যা নিতে বাধ্য হন শতবর্ষী এই বাঙালি, যা তিনি মেনে নিতে পারেননি।
পরিবারের সদস্যরা জানান, বিছানায় পড়েও সবসময় ‘দেশের বাড়ি’ কুমিল্লার দাউদকান্দির কথা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নারায়ণগঞ্জ থেকে বিমানবাহিনীতে যোগ দেওয়ার ঘটনাগুলো স্মরণ করতেন মনোহর আইচ।
‘আমারে তোমরা একবার দেশে নিয়া গেলা না,’ বারবার তার কণ্ঠে আকুতি ঝরেছে।
মনোহর বিশ্বাস করতেন, ভাত, ডাল, শাকসব্জি ও মাছ (বিশেষ করে মাছের মাথা) পেশীবহুল শরীর গঠনের জন্য সবচেয়ে কার্যকর।
মিস্টার ইন্ডিয়া খ্যাত ব্যায়ামবীর তুষার শীল ও ক্ষীতিশ চ্যাটার্জিকে তিনি প্রায়ই বলতেন, “আমি শক্তিবর্ধক জাতীয় ওষুধ অপছন্দ করি। আমি জানি, প্রাকৃতিক খাবারই সেরা।”
ভারতে ‘বডি বিল্ডিং’ পরিচিতি পাওয়ার পেছনে মনোহরের ভূীমকায় অগ্রগণ্য। পুরো এক প্রজন্মকে এতে আগ্রহী ও প্রশিক্ষিত করে তোলেন তিনি। তার ছাত্রদের অনেকেই পরে এশিয়ার বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়েছেন।
২০১৫ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাকে ‘বঙ্গবিভুষণ’ উপাধি দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:২৫:৪৫ ৩৭১ বার পঠিত