বুধবার, ২৫ মে ২০১৬

জাতীয় কবির ১১৭তম জন্মজয়ন্তী

Home Page » জাতীয় » জাতীয় কবির ১১৭তম জন্মজয়ন্তী
বুধবার, ২৫ মে ২০১৬



nazrul.jpgবঙ্গ-নিউজঃ আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৭তম জন্মজয়ন্তী।বরাবরের মতোই সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সারা দেশে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিনটি উদযাপিত হবে। শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় জাতি স্মরণ করবে জাতীয় কবিকে।

কাজী নজরুল বাংলা ১৩০৬ সালের ১১ জ্যৈষ্ঠ (১৮৯৯ সালের ২৪ মে) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি যেমন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শোষণের শৃঙ্খল ভাঙার আহ্বান জানিয়ে কবিতা ও গান লিখেছেন, তেমনি লিখেছেন প্রেম-সাম্যের গান ও কবিতা। তার কবিতা ও গান আমাদের স্বাধীনতাসংগ্রামেও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। তার লেখা ‘চল চল চল’ বাংলাদেশের রণসংগীত। গান ও কবিতার মতো তার রচিত গল্প, নাটক, উপন্যাসও বাঙালির অনন্ত প্রেরণার উৎস হয়ে আছে।

বাংলায় সর্বোচ্চসংখ্যক তিন সহস্রাধিক গানের স্রষ্টা কাজী নজরুল ইসলাম। নিজস্ব ধারার সংগীত রচনা করেছেন তিনি। প্রকৃত অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্ভাসিত কবি মানুষের সংকীর্ণতা, দীনতা, মূঢ়তা, নিচতাকে মনেপ্রাণে ঘৃণা করেছেন।

‘দুখু মিয়া’ বাংলার দামাল ছেলের প্রতীক। তিনি বিদ্রোহী, তিনি সংগ্রামী, তিনি প্রেমিক, তিনিই শান্তির বার্তাবাহক।

কবি নজরুল তার প্রত্যয়ী ও বলিষ্ঠ লেখনীর মাধ্যমে এ দেশের মানুষকে মুক্তিসংগ্রামে অনুপ্রাণিত করেছেন, জাগ্রত করেছেন জাতীয়তাবোধ। কবির কলম শাসকের অস্ত্রের চেয়ে বেশি শক্তিমান ছিল।

স্বাধীনতার পর সৃষ্টিশীল এই মহান কবির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তার প্রতি সম্মান জানাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কবি ও তার পরিবারকে কলকাতা থেকে ঢাকায় এনে স্থায়ীভাবে বসবাসের ব্যবস্থা করেন।

তাকে এ দেশের জাতীয় কবির মর্যাদায় ভূষিত করা হয়। বাংলা ১৩৮৩ সালের ১২ই ভাদ্র কবি মৃত্যুবরণ করেন। ‘মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই’ তার গানের কথা স্মরণে রেখে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে সমাহিত করা হয়। আজ তার সেই অন্তিম শয্যা ছেয়ে যাবে অগণিত অনুরাগীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার ফুলে ফুলে।

বাংলা সাহিত্য এবং সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কাজী নজরুল ইসলামকে সম্মানসূচক ডি’লিট উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ সরকার কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেন। একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি কবিকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়।

কাজী নজরুল ইসলামের ১১৭তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

কর্মসূচি : মূল অনুষ্ঠান হবে চট্টগ্রামে। আজ বেলা ১১টায় চট্টগ্রামের এমএ আজিজ আউটার স্টেডিয়ামে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি থাকবেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইন্সটিটিউট ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ও জাতীয় কবির পৌত্রী খিলখিল কাজী। স্বাগত বক্তব্য দেবেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব আক্তারী মমতাজ এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করবেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন।

এ বছর জাতীয় কবির ১১৭তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মান্ধতা রোধে নজরুলের প্রাসঙ্গিকতা’।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে স্মারক বক্তব্য দেবেন বিশিষ্ট নজরুল গবেষক আবুল মোমেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আলোচনার পর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও নজরুল ইন্সটিটিউটের আয়োজনে ৩০ মিনিটের একটি সাংস্কৃতিক পর্ব থাকবে। দেশের বিশিষ্ট নজরুল সঙ্গীতশিল্পীরা এতে গান পরিবেশন করবেন।

জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সকাল সাড়ে ৬টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়স্থ কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও এর অঙ্গপ্রতিষ্ঠানসমূহ। বাংলা একাডেমির সহযোগিতায় নজরুল ইন্সটিটিউট জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণিকা ও পোস্টার মুদ্রণ করেছে। নজরুল ইন্সটিটিউট কাজী নজরুল ইসলামকে বর্তমান প্রজন্মের সঙ্গে পরিচিত করার লক্ষ্যে কবির ছবি, পোস্টার ও বই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে এবং গণগ্রন্থাগার অধিদফতর বই প্রদর্শনী, পাঠ প্রতিযোগিতা ও রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যথাযোগ্য মর্যাদায় কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপন করছে। ঢাকাসহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দিবসটি উদযাপন করা হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহ এ উপলক্ষে কর্মসূচি পালন করছে।

যেসব জেলায় জাতীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে নজরুল জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হবে না, সেসব জেলার জেলা প্রশাসকরা স্থানীয় সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি ও সুধীজনের সহযোগিতায় যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি উদযাপন করবে।
ঢাকাসহ জাতীয় কবির স্মৃতিবিজড়িত ময়মনসিংহের ত্রিশাল ও কুমিল্লার দৌলতপুরে স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় তার ১১৭তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হবে।

জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠান ও অন্যান্য অনুষ্ঠানমালা বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি চ্যানেলসমূহ সম্প্রচার করবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২:৪৩:৪৯   ৫৩৮ বার পঠিত