সোমবার, ১৬ মে ২০১৬
‘বাংলাদেশ জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত হবে’।
Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » ‘বাংলাদেশ জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত হবে’।
বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ
চলতি মাসের শুরুর দিকে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক কট্টর ইসলামপন্থী ও নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট বা আইএসের উত্থান বাংলাদেশেও ঘটেছে বলে দাবি করে প্রবন্ধ প্রকাশ করে পত্রিকাটি। ইসরাইলের পররাষ্ট্রনীতি ও কূটনীতি বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাফাদি সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোমেসি অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনসের প্রধান মেনদি সাফাদির বক্তব্য তুলে ধরে সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশ আইএসকে অস্বীকার করে প্রকারান্তরে জঙ্গি সংগঠনটিকে আশ্রয় ও মদদ দিচ্ছে। সংস্থাটির প্রধান সাফাদির আশঙ্কা, এমন অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই বাংলাদেশ জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত হবে।
‘আইসিস টেরর থ্রেট এক্সটেন্ডস টু বাংলাদেশ অ্যান্ড হিন্দুজ আর টার্গেটেড’ শীর্ষক বিশ্লেষণধর্মী সম্পাদকীয়টি প্রকাশিত হয়েছে গত সপ্তাহে। সম্প্রতি দেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বী এক দর্জিকে হত্যার ঘটনায় আইএসের দায়স্বীকার ও তার আগের এক মাসে সমকামীদের পক্ষে আন্দোলনকারী, বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দু শিক্ষক, আইনের ছাত্রসহ তিনজনের জঙ্গি হামলায় নিহত হওয়া, শরীয়তপুরে হিন্দু মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের প্রসঙ্গ নিয়ে আসা হয়েছে সম্পাদকীয়টিতে। হিন্দু মন্দিরে হামলার ঘটনায় হামলাকারীদের একজনকে স্থানীয়রা আটক করলেও তার বিরুদ্ধে কোনো আইনি পদক্ষেপ না নেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা, বছরের গোড়ার দিকে হিন্দু মন্দিরগুলোতে ধারাবাহিক হামলা ও এক পুরোহিতকে শিরশ্ছেদের ঘটনায় আইএস-এর দায়স্বীকারসহ বেশ কিছু ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে লেখাটিতে।
প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়েছে, এসব ঘটনা থেকে স্পষ্ট যে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ, বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে সরকার কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। উপরন্তু, যারা সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনসহ এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাইছেন, তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। সম্প্রতি ইসলামিক স্টেট বা আইএস পরিচালিত পত্রিকা দাবিকের একটি সংস্করণের এই অধ্যায়ে উঠে এসেছে দুই বাংলার কথা, যেখানে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গকে ‘বেঙ্গল’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে আইএস।
দাবিকে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে আইএস ক্রমেই শক্ত অবস্থান গড়ে তুলছে। সেখানে বলা হয়, ‘খলিফার (দলের প্রধানকে খলিফা হিসেবে অভিহিত করে আইএস) সেনারা বাংলায় তাদের প্রসার ঘটাচ্ছে এবং ক্রমেই জাগ্রত হচ্ছে। এই ধারা অব্যাহত থাকবে। এমনকি তারা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে, তারা আঞ্চলিক নেতাও নির্বাচন করেছে। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিকে তারা দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।’
এ সমস্ত তথ্যউপাত্ত বিশ্লেষণ করে জেরুজালেম অনলাইন জেনেছে, স্থানীয় সরকার প্রশাসন সম্প্রতি স্থানীয় এক বিরোধী দলীয় সদস্যকে দেশ ত্যাগে বাধা দিয়েছে। ইসলাম সোহাদারি নামের ওই ব্যক্তির লন্ডন যাওয়ার কথা ছিল। তিনি বাংলাদেশের একটি মানবাধিকার সংস্থার সঙ্গে জড়িত এবং দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে কাজ করেন। দেশের সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে কথা বলতে একটি বৈঠকে যোগ দিতে লন্ডনে যাওয়ার জন্য তিনি ঢাকায় বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাকে আটকে দেয়া হয়। নিরাপত্তাজনিত কারণ ও নির্দেশনা দেখিয়ে অভিবাসন কর্মকর্তারা তাকে জানান, তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
মেনদি সাফাদি জেরুজালেম অনলাইনকে জানান, বাংলাদেশে বিরোধীদের ওপর ইসলামপন্থী সরকারের গৃহীত অনেকগুলো পদক্ষেপের মধ্যেই এটি একটি। তারাই দেশে ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিদের ঢুকতে সাহায্য করছে। যদিও জঙ্গিরা দেশে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করছে ও নিত্যদিন প্রাণনাশের হুমকি পাওয়া বিরোধীদলীয়দের ওপর দমননীতির খড়গ নেমে এসেছে, তাও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে দেশে জঙ্গি দল আইএসের অস্তিত্ব নেই। সরকারের সমালোচনাকরা প্রতিদিনই হত্যার হুমকি পাচ্ছেন এবং এভাবে চলাফেরা ও কার্যক্রম সীমিত হয়ে আসছে।
আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের নির্বাচনে পর্যবেক্ষক হিসেবে কাজ করা সাফাদি বলেন, ‘বাংলাদেশে সহিংসতা ক্রমেই বাড়ছে। অন্যদিকে বিরোধীদল ও সংখ্যালঘুদের কার্যক্রম ক্রমেই সীমিত হচ্ছে। তাদের দৈনন্দিন কার্যকলাপে প্রতিনিয়তই বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতি থেকে বের হতে অবিলম্বে আন্তর্জাতিক মহলকে এগিয়ে আসতে হবে।’ এজন্যে তিনি জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।’
সাফাদি আরো বলেন, ‘আইএসের বিরুদ্ধে শুধু ইরাক ও সিরিয়ায় যুদ্ধ করলেই চলবে না। বরং আফ্রিকা ও দূরপ্রাচ্যের মতো বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তেই এসব জঙ্গিদের বিনাশ করতে হবে, বিশেষ করে যখন এটা জানা কথা যে দেশগুলো তাদের আশ্রয় ও মদদ দিচ্ছে। বাংলাদেশ ক্রমেই জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে। জঙ্গিরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সাধনের উদ্দেশ্যে ধীরে ধীরে সংগঠিত হচ্ছে। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক মহল এখনই যদি কোনো ধরনের পদক্ষেপ না নিতে পারে এবং মানবাধিকার লঙ্গন প্রতিরোধ না করতে পারে, তাহলে অচিরেই দেশটিকে ইসলামিক স্টেটের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের শিকার হতে দেখা যাবে।’
ব্রিটিশ উপনিবেশ আমলেও তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার এ অঞ্চলে বিরোধী মত দমন করেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার যদি নাগরিক অধিকার ও বিরোধী মতাবলম্বীদের অধিকারের কার্যকারিতার বিষয়ে এভাবে ভিন্নমত পোষণ করতে থাকে, তাহলে দেশটিতে অপ্রত্যাশিত ও অকল্পনীয় পরিস্থিতির আশঙ্কা আরো বেড়ে যাবে। অঞ্চলটির জনগণ, যারা স্বাধীনতা ছাড়া বাঁচতে অভ্যস্ত নয়, তাদের সঙ্গে এমন আচরণ বেশিদিন করা যাবে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৯:২৯:০৩ ৫২১ বার পঠিত