শনিবার, ৭ মে ২০১৬
বিচারপতিদের দুঃখপ্রকাশ করা উচিত: নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান
Home Page » প্রথমপাতা » বিচারপতিদের দুঃখপ্রকাশ করা উচিত: নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানবঙ্গ-নিউজঃ সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া রায়ে বিচারপতি অপসারণে সংসদের কাছে ক্ষমতা দেওয়াকে ‘ইতিহাসের দুর্ঘটনা’ বলায় জাতির কাছে সংশ্লিষ্ট বিচারপতিদের দুঃখ প্রকাশ করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান।
শনিবার চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে ওই বিচারপতিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আপনারা বলছেন, সংসদের মাধ্যমে বিচারকের অপসারণপ্রক্রিয়া ইতিহাসের একটি দুর্ঘটনা। আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই, যেই সংবিধান ৩০ লাখ মানুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত, তিন লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত সেই অনুভূতির জায়গাকে আঘাত করেছেন দুর্ঘটনা বলে।”
বাহাত্তরের সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদে অসদাচরণের জন্য বিচারক অপসারণের ক্ষমতা সংসদকে দেওয়ার বিষয়টির উল্লেখ করে শাজাহান খান বলেন, “জনগণের ভোটে নির্বাচিত যেই সংসদ রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে ইমপিচ করতে পারে, যেই সংসদ আপনাদের-আমাদের বেতন-ভাতা নির্ধারণ করতে পারে; চাকরির বিধিবিধান ঠিক করতে পারে, সেই সংসদ আপনার অসৎ কর্মকাণ্ডের কারণে অপসারণ করতে পারবে না- এটা আপনারা কোন বিবেচনায় বললেন?
“আর কেন এটাকে ইতিহাসের দুর্ঘটনা বললেন- এর জন্য আপনাদের জাতির কাছে দুঃখপ্রকাশ করা উচিত।ক্ষমা চাইবেন কি না সেটা আপনাদের বিষয়।”
এটা কোন ‘দুর্ঘটনা’ নয় উল্লেখ করে নৌ পরিবহনমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ যদি স্বাধীন না হত এ পবিত্র সংসদ থাকতো না। আপনারাও ওই চেয়ারে বসতে পারতেন না।”
গত বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের ৯ আইনজীবীর করা রিট আবেদনে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার রায়ে তিন বিচারপতির হাই কোর্ট বেঞ্চ সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের প্রসঙ্গ টেনে যুক্তি উপস্থাপন বলেছে, “সংসদের মাধ্যমে বিচারকগণের অপসারণ প্রক্রিয়া ইতিহাসের একটি দুর্ঘটনা।”
বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের ভিত্তিতে ওই রায় ঘোষণা করে।
ওই দিনই জাতীয় সংসদে এই রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বিক্ষোভ করতে থাকা সংসদ সদস্যদের দাবির মুখে সরকারের বক্তব্য তুলে ধরতে গিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ওই রায়কে ‘সংবিধান পরিপন্থি’ অভিহিত করেন।
উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের সময় জাতীয় সংসদের উপরই ছিল। ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে ওই ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত হয়।
জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পর সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে ন্যস্ত হয় একটি সামরিক ফরমানের মাধ্যমে। ওই বিধান রদ করে এই ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়।
চট্টগ্রাম বন্দরের নতুন নির্মিত কার শেড ও কার কেরিয়ারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাহাত্তরের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ড. কামাল হোসেনেরও সমালোচনা করেন শাজাহান খান।
“একজন মানুষ কীভাবে তার আদর্শ থেকে বিচ্যুত হতে পারেন তার প্রমাণ ড. কামাল হোসেন। … যে সংবিধানে তিনি ১৯৭২ সালে বিচারকদের সংসদের মাধ্যমে অপসারণের বিষয়টি লিখেছিলেন তার বিরোধিতা করছেন কেন, তার উদ্দেশ্য কি?”
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, বন্দর এলাকার সংসদ সদস্য এম এ লতিফ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব অশোক মাধব রায় ও চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম খালেদ ইকবাল অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন
বাংলাদেশ সময়: ১৯:০৬:১১ ৪০২ বার পঠিত