শুক্রবার, ৬ মে ২০১৬

পাইলিংয়ের এক বছরের মধ্যেই পদ্মাসেতুর স্বপ্ন সম্পূর্ণ হবে

Home Page » প্রথমপাতা » পাইলিংয়ের এক বছরের মধ্যেই পদ্মাসেতুর স্বপ্ন সম্পূর্ণ হবে
শুক্রবার, ৬ মে ২০১৬



07_padmabridge_12122015_004.jpgবঙ্গ-নিউজঃ পদ্মাসেতু প্রকল্প এলাকা থেকে: পাইলিংয়ের কাজ শেষ হওয়ার এক বছরের মধ্যেই পদ্মাসেতুর স্বপ্ন সম্পূর্ণ হবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।শুক্রবার (০৬ মে) সকালে পদ্মাসেতু নির্মাণ কাজ পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এসব কথা জানান।

পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, প্রধান কাজ পাইলিং। পাইলিং হয়ে গেলে আর সময় লাগবে না। সেতুর গার্ডার চায়নাতে তৈরি হচ্ছে। আমরা শুধু লেভেলিং পর্যন্ত অপেক্ষা করছি।

মন্ত্রী বলেন, জার্মান থেকে একটা হ্যামার এসেছে। আমাদের সামনে আরও হ্যামার দরকার। হ্যামারের সংখ্যা যতো বেশি হবে পাইলিংয়ের কাজ ততদ্রুত এগিয়ে যাবে। পদ্মার মাওয়া ঘাট থেকে কয়েক কিলোমিটার দূর থেকেই বোঝা যাবে পাইলিংয়ের কাজ চলছে। আর সেই শব্দে প্রকম্পিত হচ্ছে পদ্মার পাড়। শব্দ আঁচড়ে পড়ছে দূর সীমানার তীরে। সেই শব্দে বেড়ে উঠেছে একটি স্বপ্ন।

মন্ত্রী আরো বলেন, পদ্মাসেতু প্রকল্পের সব থেকে চ্যালেঞ্জিং এই পাইলিংয়ের কাজ এভাবে এগিয়ে চলছে শব্দের তালে তালে। এটাই পদ্মাসেতু প্রকল্পের মূল কাজ। চলতি অর্থ বছরের (২০১৫-১৬) নয় মাসে অর্থাৎ মার্চ ২০১৫ সাল পযর্ন্ত স্বপ্নের পদ্মাসেতু প্রকল্পের মূল সেতুর ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ২০ দশমিক ৫ শতাংশ , তিন মাস আগে যা ছিল ১৬ শতাংশ।

একই সঙ্গে নদীশাসন কাজের অগ্রগতি হয়েছে ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ। ছয় মাস আগে যা ছিল মাত্র ১৪ শতাংশ। তবে, নয় মাসে যা টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছিল তা পূর্ণ হয়নি।

নয় মাসে মূল সেতু নির্মাণে ২৬ দশমিক ১৯ এবং নদীশাসনে পদ্মাসেতু প্রকল্পের অগ্রগতি প্রসঙ্গে সেতু বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম  বলেন, সেতু মন্ত্রীর (ওবায়দুল কাদের) সার্বিক তত্ত্বাবধানে কাজ এগিয়ে যাচ্ছে।

চলতি অর্থবছরের নয় মাসে প্রকল্পের মূল সেতুর ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ২০ দশমিক ৫ শতাংশ এবং নদীশাসনের অগ্রগতি হয়েছে ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এই অর্থবছরের এখনও তিন মাস বাকি রয়েছে। এই তিন মাস পর সেতুর সার্বিক অগ্রগতি আরও বাড়বে।’

প্রকল্পের সর্বশেষ ভৌত অগ্রগতি ৩৩ শতাংশ। ইতোমধ্যেই মূলসেতুর ১০টি টেস্ট পাইলের মধ্যে ৬টির কাজ শুরু হয়েছে। ভায়াডাক্টের ১৬টি টেস্ট পাইলের মধ্যে ৭টির টেস্ট পাইল সম্পূর্ণ হয়েছে এবং দুটি টেস্ট পাইল ড্রাইভের কাজ চলমান আছে।

সেতুর প্রধান চ্যালেঞ্জিং কাজ পাইলিং। ৬, ৭, ৩৬, ৩৭, ৪৯ ও ৫০ নম্বর পিলারের পাইলিং কাজ চলছে। মোট পাইলিং হবে ২৬৪টি। ১ ও ৪২ নম্বর পিলারে ১২টি করে পাইলিং হবে বাকিগুলোতে হবে ৬টি করে। মূল সেতুর এলাইনমেন্ট বরাবর ১৫০ মিটার প্রশস্ত করে চ্যানেল তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে।

পিলার হয়ে গেলে এক বছরের মধেই সেতুর কাজ সম্পূর্ণ হবে। কারণ সেতুর গার্ডার তৈরি হচ্ছে চায়নাতে। পাইলিং হয়ে গেলেই এগুলো পিলারের উপরে বসিয়ে দেওয়া হবে। এক কথায় বলা যায় হার্ডিঞ্জ ব্রিজে বসবে পদ্মাসেতু।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অন্তর্ভুক্ত উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর জুলাই-মার্চ ২০১৫ পযর্ন্ত নয় মাসের অগ্রগতির প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। জমা দেওয়া প্রতিবেদনে পদ্মাসেতুসহ সেতু বিভাগের নানা গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের আপডেট তথ্য এতে উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে, জাজিরা অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণে ৬৮ দশমিক ৮৮, মাওয়া অ্যাপ্রোচ সড়কে ৭২ দশমিক ৮ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যেমন অফিস ল্যাবরেটরি, ওয়ার্কশেড, স্টোর হাউজ, লেবারশেড, জেটি ইত্যাদি নির্মাণ কাজও শতভাগ সম্পূর্ণ হয়েছে।

১ হাজার ৩৭০টি প্লট ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকিগুলো দেওয়ার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে পুনর্বাসন কার্যক্রম ৬৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। প্লটের হস্তান্তরের সংখ্যা ১৩৭০টি।

সার্ভিস এরিয়া-২ এর কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে ৭৮ দশমিক ১৩ এবং ভূমি অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৮৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

জাজিরা অ্যাপ্রোচ সড়ক, মাওয়া অ্যাপ্রোচ সড়ক ও সার্ভিস এরিয়া-২ এর নির্মাণ তদারকির জন্য কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কানসালট্যান্ট (সিএসসি-১) নিয়োগ করা হয়েছে। এই কাজের অগ্রগতি ৬১ দশমিক ৪৮ শতাংশ। তবে, মূল সেতু তদারকির সিএসসি-২ নির্মাণ কাজের অগ্রগতি বেহাল মাত্র ১৭ শতাংশ।

সেতু প্রকল্পের ক্ষতিগ্রস্ত পুনর্বাসন খাত থেকে ডিসেম্বর মাস পযর্ন্ত মোট ৫৬২ কোটি ২৫ লাখ টাকা অতিরিক্ত সহায়তা বাবদ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। পুনর্বাসন সাইটগুলোতে এই সময়ের মধ্যে ২ হাজার ৫৯২টি প্লটের মধ্যে ১ হাজার ৩৭০টি প্লট ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে হস্তান্তর করা হয়েছে।

প্রকল্প এলাকায় ৬৭ হাজার ৫৫০টি গাছ লাগানো হয়েছে। এতে করে পদ্মাসেতু প্রকল্পের সার্ভিস এরিয়া এবং পুনর্বাসন এলাকা সবুজে পরিণত হয়েছে। চলমান স্বপ্নের পদ্মাসেতু প্রকল্পে নানা অবকাঠামোর ব্যয় বৃদ্ধি, নানা খাতের পরিবর্তন, ভূমির পরিমাণ বৃদ্ধি, পরামর্শকের সংখ্যা বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণ দেখিয়ে ব্যয় আরও ৮ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। ফলে, সব মিলিয়ে পদ্মাসেতু প্রকল্পের চূড়ান্ত ব্যয় দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।

চলতি অর্থবছরে পদ্মাসেতু প্রকল্পে মোট বরাদ্দ ছিল ৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে নয় মাসে মোট ৩ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা ছাড় হয়েছে। প্রকল্পের ১১টি অঙ্গের সমন্বয়ে সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৩৩ শতাংশ।

এছাড়া নদীশাসন কজের বিভিন্ন সাইজের রক, স্টোনপিস, সিলেট বালি, সিমেন্ট ও অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রীতে কাজ এগিয়ে চলছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬:০১:৪১   ৫১৭ বার পঠিত