বুধবার, ২৭ এপ্রিল ২০১৬
প্রতিদিন এগারো খুন
Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » প্রতিদিন এগারো খুনহঠাৎ করেই বেড়ে গেছে খুনোখুনি। একটির রেশ কাটতে না কাটতেই ঘটছে আরেকটি খুনের ঘটনা। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, প্রায় সব ঘটনাই ছিল ‘টার্গেট কিলিং’। যার কারণেই আইনশৃংখলা বাহিনীর নেয়া নানা পদক্ষেপের পরও নির্বিঘ্নে খুন করে পালিয়েও যাচ্ছে ঘাতকরা। খুনের শিকার হচ্ছেন ব্লগার, ব্যবসায়ী, পুলিশসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। নৃশংস এসব খুনের ঘটনায় সাধারণ মানুষের মনে যেমন আতংক ছড়াচ্ছে, তেমনি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়ও রয়েছে পুলিশ। এসব খুনের ঘটনায় বিনিয়োগ করা হচ্ছে মোটা অংকের টাকা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভিন্নমতাবলম্বীরাও টার্গেট হচ্ছেন। দু-একটি ঘটনায় খুনিদের কেউ কেউ গ্রেফতার হলেও অধরাই থাকছে নেপথ্যে থাকা লোকজন।
পুলিশ সদর দফতরের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের গত তিন মাস ২৬ দিনে সারা দেশে খুন হয়েছেন ১ হাজার ১৬৫ নারী-পুরুষ। সে হিসাবে প্রতিদিন গড়ে খুনের শিকার হয়েছেন ১১ জন। অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, বিষয়টি উদ্বেগজনক। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে একটি চক্র টার্গেট কিলিংয়ে নেমেছে। একই সুরে কথা বলেছেন খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও। মঙ্গলবার সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দেশকে অস্থিতিশীল করতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।’ তবে অন্যান্য দেশের তুলনায় দেশে জঙ্গি তৎপরতায় যে ‘টার্গেট কিলিং’ হচ্ছে তা বাংলাদেশে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে মন্ত্রী দাবি করেন।
পুলিশ সদর দফতরের হিসাব অনুযায়ী চলতি বছরের গত জানুয়ারি মাসে সারা দেশে ২৬৭টি, ফেব্রুয়ারি মাসে ২৯১টি, আর মার্চে ৩০৭টি খুনের ঘটনা ঘটে। আর চলতি মাসের গত ২৬ দিনেই সারা দেশে খুনের ঘটনা সাড়ে ৩শ’ ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে তিন দফায় সারা দেশে ইউপি নির্বাচনেই প্রাণ হারিয়েছেন ৩২ জন সাধারণ মানুষ। আহত হয়েছেন দুই সহস্রাধিক। সে হিসাবে প্রতিদিন গড়ে খুন হয়েছেন ১১ জন নারী-পুরুষ। সংশ্লিষ্ট দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর সারা দেশে (২০১৫ সাল) হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ৪ হাজার ৩৫ জন। আর এর আগের বছর ২০১৪ সালে খুন হন ৪ হাজার ৫১৪ জন। ২০১৫ সাল থেকে একের পর এক টার্গেট কিলিংয়ের ঘটনায় আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরাও কিছুটা হতভম্ব হয়ে পড়ে। বিদেশী নাগরিকসহ টার্গেট কিলিংয়ের ১১টি ঘটনায় আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট বা আইএস, আল কায়দা ইন ইন্ডিয়ান সাব কন্টিনেন্ট (একিআইএস) ছাড়াও দেশী জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম দায় স্বীকার করে। যদিও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিদেশী এসব জঙ্গি সংগঠনের অস্তিত্ব বরাবরই অস্বীকার করে আসা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে কুমিল্লায় ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যা নিয়ে দেশব্যাপী তীব্র আন্দোলনের মধ্যেই সোমবার সকালে গাজীপুরের কাশিমপুরে প্রধান কারারক্ষীকে ও বিকালে রাজধানীর কলাবাগানে খুন হন বাংলাদেশস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের সাবেক প্রটোকল কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব রাব্বি তনয়। এর আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকী, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় এক সাধুকে ও রাজধানীর পুরান ঢাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নাজিমউদ্দিন সামাদকে প্রায় একই কায়দায় চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে ঘাতকরা। মঙ্গলবার দুর্বৃত্তের হাতে নিহত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক রেজাউল করিম সিদ্দিকীর গ্রামের বাড়ি দরগামাড়িয়া জামে মসজিদের ইমাম রায়হান আলী খাজাপাড়া গ্রামের মাদ্রাসার শিক্ষক মুনসুর রহমানকে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে করে বিভিন্ন মহলে ছড়িয়ে পড়েছে আতংক।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২০ মার্চ কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যার রহস্য এখনও উদঘাটন হয়নি। ওই খুনের রেশ না কাটতেই রাজধানীতে ৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় ব্লগার ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাজিমুদ্দিনকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই হত্যাকাণ্ডে আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয়। ওই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কাউকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। ২৩ এপ্রিল শনিবার রাজশাহী মহানগরীর শালবাগান এলাকায় নিজ বাসার কাছে (১৫০ গজ দূরে) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে (৫৮) প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ওই হত্যাকাণ্ডটিও আইএস ঘটিয়েছে বলে তাৎক্ষণিকভাবে একটি ওয়েব সাইটে জানান দেয়। মঙ্গলবার পর্যন্ত পুলিশ ওই খুনের কোনো ক্লু পায়নি। সোমবার সকালে প্রকাশ্য দিবালকে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের অদূরে খুন হন রুস্তম আলী নামে সাবেক এক কারারক্ষী। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বিকালে রাজধানীর কলাবাগান থানার লেক সার্কাস রোডের একটি বাড়িতে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির খালাত ভাই জুলহাজ মান্নান ও তনয় নামে দু’জনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত দু’জনার মধ্যে জুলহাজ মান্নান ইউএসএআইডির কর্মকর্তা ছিলেন। এছাড়া ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের রাষ্ট্রদূতের প্রটোকল কর্মকর্তা হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। এ জোড়া খুনের দায় শিকার করে বিবৃতি দিয়েছে আনসার আল ইসলাম নামের দেশীয় একটি জঙ্গি সংগঠন। এর আগে রোববার মধ্যরাতে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় কুপিয়ে ও গুলি করে দু’জনকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
উল্লিখিত প্রায় সব খুনের ধরন ও কৌশল দেখে তদন্ত সংস্থাগুলোর ধারণা, ধর্মীয় উগ্রপন্থী বিভিন্ন গ্রুপ এসব হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারে। এর আগে গত বছরের ১ নভেম্বর আজিজ সুপার মার্কেটে জাগৃতি প্রকাশনীর মালিক ও প্রকাশক ফয়সাল আরেফীন দীপনকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। একই দিন কলাবাগানে শুদ্ধস্বরের প্রকাশনীর কার্যালয়ে আহমেদুর রশীট টুটুল, লেখক তারেক রহিম ও রণদীপম বসুকে কুপিয়ে ও গুলি করে আহত করা হয়। এছাড়া ২১ ফেব্রুয়ারি পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে মন্দিরের পুরহিত জগেশ্বরী দাসাধীকারী, গত বছরের ৫ অক্টোবর ঈশ্বরদীতে ধর্মযাজক লুক সরকারকে হত্যার চেষ্টা, ১১ নভেম্বর দিনাজপুরের কোতোয়ালি থানার মির্জাপুর বাসস্ট্যান্ডে ইতালির নাগরিক ডা. পিয়েরো পারোলারিকে হত্যার চেষ্টা, ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ব্লগার আমেদ হায়দার রাজিবকে হত্যা, গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি বিজ্ঞানমনষ্ক লেখক ড. অভিজিৎ রায়কে হত্যা, গত বছরের ৭ আগস্ট নিলাদ্রী চ্যাটার্জি ওরফে নিলয় হত্যা, গত বছরের ৩০ মার্চ তেজগাঁওয়ে ব্লগার ওয়াসিকুর রহমান বাবু হত্যা, ১২ মে সিলেটে ব্লগার অনন্ত বিজয় দাস হত্যা, ২০১৩ সালের ১৫ জানুয়ারি ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিনকে হত্যা চেষ্টা ও একই বছরের ১০ এপ্রিল বুয়েটের ছাত্র ও ব্লগার আরিফুর রহমান দীপুকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করা হয়। এসব ঘটনায় দেশে-বিদেশে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে এসব হত্যাকাণ্ডের সু®ু¤ তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক বিচারের আহ্বান জানায়। তাদের এই আহ্বান এখনও অব্যাহত রয়েছে। মুক্তমনা লেখকদের নিরাপত্তা নিয়ে বিভিন্ন দেশ উদ্বেগ প্রকাশ করে। এছাড়াও কয়েকটি ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্যের উগ্রপন্থী আইএস দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয়ায় বাংলাদেশের ওপর আন্তর্জাতিকভাবেও চাপ তৈরি করা হয়। যদিও সরকার এবং আইনশৃংখলা বাহিনী বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
আইনশৃংখলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মতে, প্রায় প্রতিদিনই আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি), জামায়াতুল মুজাদেহীন বাংলাদেশ (জেএমবি), হরকাতুল জেহাদ বাংলাদেশ (হুবিজি) ও আনসার আল ইসলামসহ বিভিন্ন উগ্রপন্থী সংগঠনের অনুসারী এবং নেতাকর্মী গ্রেফতার হচ্ছে। তরুণ ও যুবকের একটি অংশ আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস বা আল কায়দায় যোগ দেয়ারও তথ্য পাচ্ছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। বিষয়টি জাতীয়ভাবে বড় ধরনের সমস্যা বলে চিহ্নিত হচ্ছে। তবে দেশে আন্তর্জাতিক কোনো জঙ্গি সংগঠনের অস্তিত্ব নেই বলে বারবার দাবি করা হচ্ছে।
এসব ঘটনা বৃদ্ধিতে অপরাধ বিশ্লেষকরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার শিথিলতাকেই দায়ী করছেন। তারা বলছেন, মাঠ পর্যায়ে পুলিশে তৎপরতায় ভাটা পড়ার কারণেই ছিনতাই, ডাকাতি, দস্যুতা ও খুনখারাবি ঘটছে। এক্ষেত্রে পুলিশে রাজনীতিকরণ এবং চেইন অব কমান্ডের দুর্বলতাকেও অনেকটা দায়ী করছেন।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন যুগান্তরকে বলেন, একটি ঘটনা ঘটার পর পরই যদি সেটাকে টার্গেট কিলিং কিংবা জঙ্গি হামলা বলা হয় তখনই এর তদন্তের ওপর প্রভাব পড়বে এটাই স্বাভাবিক। কোনো একটি ঘটন ঘটলে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেটি কোন ধরনের ঘটনা তা সরকার বা পদস্থ কর্মকর্তাদের মুখ থেকে উল্লেখ না করাই ভালো। এতে তদন্ত প্রভাবিত হতে পারে এবং অপরাধীরাও পার পেয়ে যেতে পারে বলে তার ধারণা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনলজি বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজান মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, পশ্চিমা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করার উদ্দেশ্যে উগ্রবাদী গোষ্ঠী এসব হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে। তারা ব্লগার, প্রকাশক, মুক্তচিন্তার মানুষ, ধর্মান্তরিত মুসলমান, সমকামী ও তৃতীয় লিঙ্গের অধিকার নিয়ে যারা কাজ করছে তাদের টার্গেট করে কিলিং করছে। এটা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক একটি ষড়যন্ত্র। এ ষড়যন্ত্র দেশে আগেও ছিল। এসব ঘটনার পর কিছু ব্যক্তি দায় স্বীকার করে। অথচ তারা আদৌ ওই ঘটানো ঘটিয়েছে কিনা সেটা আমরা নিশ্চিত নই। উগ্রবাদীদের স্লিপার সেল এসব হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে। তারা খুবই দক্ষ ও প্রশিক্ষিত। তাদের হত্যাকাণ্ডের পর কোনোভাবেই ট্রেস করা যায় না। তারা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশে যাচ্ছে। বাংলাদেশের আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী অনেক সক্ষম। কাউন্টার টেরোরিজম (সিটি) নামে নতুন ইউনিট হয়েছে। জঙ্গিবাদ দমনের জন্য র্যাব গঠন হয়েছে। কিন্তু মূল কথা হল সেই ব্রিটিশ আমলের পুরনো আইন দিয়ে সবক্ষেত্রে সফলতা অর্জন সম্ভব নয়। এজন্য আইনেরও সংস্কার প্রয়োজন।
দৈনিক ১১ জন খুন হচ্ছে এ সংখ্যার বিষয়ে তিনি বলেন, এক গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশে প্রতি লাখে তিনজন মানুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। ভারত আমাদের চেয়ে অনেক বড় দেশ সেখানেও এ পরিমাণ একই রকম। এটা কমানোর জন্য আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। সামাজিক মোটিভেশন তৈরি করতে হবে।
রংপুর ব্যুরো থেকে মাহবুব রহমান জানান, জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি হত্যাকাণ্ডের ছয় মাস পেরিয়ে গেছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তিনবার বদল হয়েছে। তবুও পুলিশ প্রকৃত খুনিদের এখনও চিহ্নিত করতে পারেনি। ওই খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মৎস্যজীবী দল, ছাত্রদল, যুবদলের ১৫ জন নেতাকর্মী ও তাদের আত্মীয়স্বজনকে গ্রেফতার করে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে ওই খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ এখন পর্যন্ত মেলেনি।
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, গোপালগঞ্জে সাধু পরমানন্দ রায় হত্যা মামলায় পুলিশ আসামি শরিফুল শেখকে গ্রেফতারের পর ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে। সোমবার বিকালে টুঙ্গিপাড়া থানা পুলিশ তাকে গোপালগঞ্জে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গৌতম ঘোষের আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে।
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, হবিগঞ্জের বাহুবলে ৪ শিশু হত্যা মামলায় কারাগারে আটক থাকা আসামিদের জামিন আবেদনের নামে মামলার কার্যক্রম বিলম্বিত করা হচ্ছে। আসামিরা অত্যন্ত সুকৌশলে একজনের পর একজন জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিন আবেদন করেন। আর এ প্রক্রিয়ায় জামিন শুনানির জন্য সেখানে মামলার মূল নথি আটকে আছে। আর বিলম্বিত হওয়ায় প্রকৃত বিচার হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে বলে স্থানীয়রা মনে করেন।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকী ও অধ্যাপক একেএম শফিউল ইসলাম লিলন হত্যা এবং বাগমারায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মসজিদে আইএসের আত্মঘাতী বোমা হামলার দায় স্বীকারের খবর দিয়েছিল ‘সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ’। কিন্তু ওয়েবসাইটে পাওয়া এ তথ্যগুলোকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ। যদিও অধ্যাপক রেজাউল করিম হত্যা ও বাগমারায় মসজিদে হামলার ঘটনা সম্পর্কে এখনও অন্ধকারে রয়েছে পুলিশ। ২০১৪ সালের ১৫ নভেম্বর অধ্যাপক শফিউল ইসলাম হত্যাকে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জের উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ।
সবশেষ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)। শনিবার সকালে হত্যাকাণ্ডের দিন সন্ধ্যায় টুইটার বার্তায় সাইটটি জানায়, আইএসের ‘আমাক সংবাদ সংস্থা’ অধ্যাপক রেজাউলকে হত্যায় জঙ্গিগোষ্ঠীটির দায় স্বীকারের খবর দেয়।
এর আগে গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর বাগমারায় আহমদিয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনায় আইএস ‘দায় স্বীকারের’ খবর দিয়েছিল ‘সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ’। এ ছাড়া সন্ত্রাসবাদ নিয়ে গবেষণা করে এমন একটি সংস্থা ‘ট্র্যাক টেরোরিজম’ তাদের টুইটে একই তথ্য প্রকাশ করে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই দুটি গবেষণা সংস্থা জানায়, আইএস তাদের বার্তায় জানিয়েছিল আল ফিদা আল বাঙালি নামে একজন এ হামলা চালিয়েছে। ট্র্যাক টেরোরিজম তাদের টুইটে আইএসের এ দাবি সংক্রান্ত বার্তাটির একটি স্ক্রিনশটও প্রকাশ করে। কিন্তু পুলিশ এ হামলার রহস্য এখনও বের করতে পারেনি। এমনকি নিহত যুবকের পরিচয় পায়নি তারা।
পাবনা ও ঈশ্বরদী প্রতিনিধি জানান, দীর্ঘ ৭ মাস অতিবাহিত হলেও পাবনার ঈশ্বরদী বিমানবন্দর সড়কের খ্রিস্টান গির্জার যাজক লুক সরকারকে হত্যাচেষ্টা মামলার চার্জশিট দিতে পারেনি পুলিশ। এ হত্যা প্রচেষ্টার প্রধান আসামি জেএমবির পাবনার আঞ্চলিক কমান্ডার রাকিবুল ইসলাম রাকিব ওরফে তাওহিদ ওরফে রাজনসহ জেএমবির ৬ ক্যাডারকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
সিলেটে আলোচিত তিন হত্যাকাণ্ড : গত বছরের ৮ জুলাই সিলেটের কুমারগাঁওয়ে সামিউল আলম রাজনকে নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা হয়। রাজন হত্যার ভিডিওচিত্র ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে দেশ-বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। গত ১৬ আগস্ট রাজন হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিলেট মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক সুরঞ্জিত তালুকদার ১৩ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন। ইতিমধ্যে এ মামলার বিচারকাজ সম্পন্ন হয়েছে।
ব্লগার অনন্ত : গত বছরের ১২ মে সকালে সিলেট নগরীর সুবিদবাজার বনকলাপাড়ার নুরানীদীঘির দক্ষিণ কোনে কুপিয়ে খুন করা হয় ব্লগার ও ব্যাংকার অনন্ত বিজয় দাশকে। অনন্ত হত্যার প্রায় এক বছর পূর্ণ হতে চলেছে। তবে চার্জশিট হয়নি এখনও।
গত বছরের ১১ মার্চ নগরীর শাহ মীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র আবু সাঈদ (৯) অপহরণের শিকার হয়। এর তিন দিন পর ১৪ মার্চ নগরীর ঝরনারপাড় সুনাতলা এলাকায় পুলিশ কনস্টেবল এবাদুর রহমানের বাসার ছাদে চিলেকোঠা থেকে বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ২৩ সেপ্টেম্বর এ মামলায় চারজনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন কোতোয়ালি থানার ওসি (তদন্ত) মোশাররফ হোসেন।
বাংলাদেশ সময়: ৫:৪৪:২১ ৩৭৭ বার পঠিত