বুধবার, ২০ এপ্রিল ২০১৬
ভূমিকম্প মোকাবেলায় সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিন
Home Page » ফিচার » ভূমিকম্প মোকাবেলায় সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিনইদানীং ভূমিকম্পে কম্পনের মাত্রা ও ধ্বংসযজ্ঞ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৬ এপ্রিল ইকুয়েডরের রাজধানী কুইটো থেকে ১৭০ কিলোমিটার দূরে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে ৩৫০ জনের মৃত্যুর সংবাদ জানা গেছে। আহত হয়েছে দুই হাজারের অধিক মানুষ। ছয়টি প্রদেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। ১৯৮৭ সালে ৭ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্পে ১ হাজার মানুষের প্রাণহানির পর ইকুয়েডরে এটাই বড় মাত্রার ভূমিকম্প। এর আগে ১৪ এপ্রিল ও পরে ১৫ এপ্রিল গভীর রাতে জাপানে পরপর দু’দফা শক্তিশালী ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ৩৬ জনে উন্নীত হয়েছে। অনেকে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকে পড়ায় প্রাণহানির সংখ্যা কত দাঁড়াবে- তা সময়ই বলে দেবে।
গত ১৩ এপ্রিল রাতে রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ৯ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে রাজধানীসহ সারা দেশ। আতংকে মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। তাড়াহুড়া করে নিচে নামতে গিয়ে অনেকে আহত হন। ভূমিকম্পের মাত্রার তুলনায় কোনো প্রাণহানি বা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি না হলেও চট্টগ্রাম ও সিলেটের কিছু ভবন হেলে পড়েছে। গত দু’বছরে বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমার অঞ্চলে প্রায় ৫০টি মৃদু, মাঝারি ও উচ্চমাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। বাংলাদেশ-ভারত-মিয়ানমার এ ত্রিদেশীয় অঞ্চলের ভূতাত্ত্বিক গঠন ও বৈশিষ্ট্য অনুসারে এর অবস্থানকে পৃথিবীর অন্যতম সক্রিয় ভূমিকম্প বলয়ের মধ্যে ধরা হয়। বাংলাদেশ এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের ভূকম্পনপ্রবণ এলাকায় গত ১৫০ বছরে অন্তত ৭ থেকে ৮ মাত্রার ৭টি ভূমিকম্প ও একাধিক সুনামি হয়েছে। এগুলোর মধ্যে দুটির উৎপত্তিস্থল ছিল বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ ও এর আশপাশের অঞ্চলে ভূমিকম্প হওয়ার মতো প্লট বাউন্ডারি বা ফাটলরেখা সক্রিয় রয়েছে, যার ফলে যে কোনো সময় দেশে ৮ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে।
জাতিসংঘ ১৯৯৯ সালে ভূতাত্ত্বিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ বিশ্বের ২০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশও একটি বলে চিহ্নিত করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, উচ্চমাত্রার ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে বৃহত্তর রংপুর, সিলেট ও ময়মনসিংহ, যা দেশের ৪৩ শতাংশ এলাকা। রাজধানী ঢাকায় ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার মতো ভূতাত্ত্বিক ফাটলরেখা না থাকলেও মাত্র ৬০ কিলোমিটার দূরে মধুপুর অঞ্চলে ৭ থেকে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার মতো ভূতাত্ত্বিক ফাটল রয়েছে। জাতিসংঘের অপর এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী সাইক্লোন, ভূমিকম্প, সুনামিসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকির তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৬ষ্ঠ। এসব বিবেচনায় এনে দেশজুড়ে ভবন মালিকদের বাড়িঘর নির্মাণ, নগর পরিকল্পনাবিদদের ডিজাইনে বিল্ডিং কোড সম্পূর্ণভাবে মেনে ভূমিকম্প সহনীয় ভবন নির্মাণের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। হাসপাতাল ও ফায়ার সার্ভিসসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোকে ভূমিকম্প প্রতিরোধী রিট্রোফিটিং করে গড়ে তোলা আবশ্যক। ভূমিকম্প-পরবর্তী অবস্থা মোকাবেলায় হালকা ও ভারি যন্ত্রপাতি সুসজ্জিত করে রাখা জরুরি। রাজধানীর অবিন্যস্ত বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহকারী লাইনগুলোই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ভূমিকম্পের পরে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বৃদ্ধি করবে। সরু অলিগলি পেরিয়ে উদ্ধার তৎপরতা চালানো হয়ে পড়বে কঠিন। এসবের জরুরি সংস্কার ও আধুনিকীকরণ প্রয়োজন। বস্তুত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা জোরদারসহ ভূমিকম্প পূর্ববর্র্তী জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং পরবর্তী অবস্থা মোকাবেলায় সরকারকে প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর জোর দিতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩:৫৭:৪৭ ৪৩২ বার পঠিত