বুধবার, ২০ এপ্রিল ২০১৬
রং লেগেছে ভাষা উৎসবে
Home Page » জাতীয় » রং লেগেছে ভাষা উৎসবেভাষা প্রতিযোগের আয়োজক কর্মী বাহিনীর সঙ্গে থাকেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গুণীজন। সে দলেই আমার জায়গা হয়েছিল ‘লেখক কোটায়’। কাজ ছিল উৎসবে মজার মজার ঘটনা খুঁজে নিয়ে এই বিশেষ সংখ্যার জন্য লেখা। এবারে সব অঞ্চলেই আমার যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। ভাষা প্রতিযোগ নিয়ে ভালো লাগার গল্প শুনেছি অংশগ্রহণকারী স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের কাছে। ভাষা প্রতিযোগ উৎসবের রং যেন মর্মে লেগেছে তাঁদের।
গত ২৪ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় বরিশাল অঞ্চলের প্রতিযোগ। বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে কথা হলো পটুয়াখালী থেকে আসা মাহমুদুর রহমান নামে একজন অভিভাবকের সঙ্গে। ‘এত দূর থেকে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন!’ শুনে হাতে থাকা পানির বোতল আর মেয়ের কলেজব্যাগ পাশের চেয়ারে রাখতে রাখতে তিনি বললেন, ‘আমার মেয়ের খুব আগ্রহ ছিল। এ ছাড়া এ ধরনের প্রতিযোগিতা একজন শিক্ষার্থীকে নানাভাবে সাহায্য করে। যাতায়াতের কষ্ট হলেও সন্তানকে এমন সুযোগ হাতছাড়া করতে দিইনি।’
শিক্ষার্থীরা ভাষা প্রতিযোগ নিয়ে কতটা আগ্রহী তার প্রমাণ মেলে প্রশ্ন-উত্তর পর্বে। ভাষা প্রতিযোগের সবচেয়ে মজার পর্ব এটি। মূলত ৪০ মিনিটের পরীক্ষা শেষেই শুরু হয় প্রশ্ন-উত্তর পর্ব। এ পর্বে ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসার উত্তর দেন শিক্ষকেরা। প্রিয় মানুষদের মঞ্চে পেয়ে শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন অবশ্য শুধু ভাষা আর সাহিত্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। ভাষার বিকৃতি রোধ, পাঠ্যবইয়ের নানা বিভ্রান্তিমূলক তথ্য, আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য নিয়েও প্রশ্নের ঝুড়ি খুলে বসেন তারা। ছোট ছেলেমেয়েরা কতটা সচেতন, প্রশ্ন শুনলেই আঁচ করা যায়। কারও কারও প্রশ্ন শুনে ভ্রূ কুঁচকে ভাবতে বসে যায় সবাই!
চট্টগ্রাম সরকারি মুসলিম হাইস্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র সাদ বিন সোহেল প্রশ্ন করেছিল, ‘চট্টগ্রামকে কেন ইংরেজিতে চিটাগং বলা হয়?’ তার মতোই দোলা রায় নামের প্রাথমিক স্কুলপড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর জিজ্ঞাসা ছিল, ‘চর্যাপদের কবিদের নামের শেষে কেন “পা” যুক্ত থাকে?’ মজার প্রশ্নও কিন্তু কম আসে না শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। ‘একবার না পারিলে, দেখো শতবার। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা কেন শতবার দিতে দেওয়া হয় না?’ প্রশ্ন করে বসে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আহসান হাবীব। আর সব প্রশ্নের উত্তর দেন দেশসেরা শিক্ষকেরা। ভালো ভালো প্রশ্নের জন্য জোটে পুরস্কার-বই।
বরিশালের উৎসবে অংশ নেওয়া মাইশা ফাহমিদাকে আচমকা জিজ্ঞেস করে বসেছিলাম, ‘কী মনে হয়, বইয়ের লোভেই কি প্রশ্নোত্তর পর্বে এত হাত ওঠে?’ তার জবাব, ‘মোটেই না। আমরা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিই কী প্রশ্ন করব। জানার জন্যই প্রশ্ন করি। কিন্তু প্রশ্ন করার সুযোগ পাওয়াই তো ভাগ্যের ব্যাপার।’
ভাগ্যই বটে! কারণ, উপস্থিত হাজার খানেক শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ৩০-৩৫ জন শিক্ষার্থী প্রশ্ন করার সুযোগ পায়। আর চিরকুটে জমা পড়া নির্বাচিত প্রশ্ন থেকেও উত্তর দেওয়া হয় মাঝে মধ্যে।
২ এপ্রিল বান্দরবানে এবার প্রথমবারের মতো বসেছিল ভাষা প্রতিযোগের আসর। উৎসবের দুই দিন আগেই সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। তাই বেশ ফুরফুরে মেজাজে ৩১ মার্চ ঘরে ফেরেন প্রথম আলোর বান্দরবান বন্ধুসভার বন্ধুরা। সে রাতেই প্রস্তুতির পরীক্ষা নিতে হাজির হয় ঝোড়ো হাওয়া। ঝড়ঝাপটায় উৎসব প্যান্ডেল ভেঙে যায়। কিন্তু দমে গেলে চলবে? উৎসব তো থেমে থাকবে না। শুরু হয় আবার গুছিয়ে তোলার কাজ। শ্রমিকদের সঙ্গে বন্ধুসভাও হাত লাগায়। একই সঙ্গে রাতভর চলে আসনবিন্যাস, সনদপত্র লেখা। সকালে সুসজ্জিত বান্দরবান কালেক্টরেট স্কুল প্রাঙ্গণে এসে শিক্ষার্থীরা উৎসবে মেতেছে। বান্দরবান বন্ধুসভার সাংগঠনিক সম্পাদক শেখর দাশ বলছিলেন, ‘আমাদের বান্দরবানে এ রকম জাতীয় উৎসবের আয়োজন সচরাচর হয় না। তার ওপর বহুভাষী মানুষের এই পার্বত্য জেলায় ভাষার উৎসব হবে তা নিয়ে আমাদের আগ্রহ একটু বেশিই ছিল। তাই চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমরা আয়োজন সফল করেছি।’
শুধু বান্দরবান বন্ধুসভা নয়, আয়োজক প্রায় প্রতিটি অঞ্চলের বন্ধুসভা এমন চ্যালেঞ্জ সামাল দিয়েছে দলবেঁধে। সবার সম্মিলিত প্রয়াসেই সফল হয়ে ওঠে প্রতিটি উৎসব।
বাংলাদেশ সময়: ০:২০:২৩ ৫২০ বার পঠিত