রবিবার, ১৭ এপ্রিল ২০১৬

শফিক রেহমান গ্রেফতার

Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » শফিক রেহমান গ্রেফতার
রবিবার, ১৭ এপ্রিল ২০১৬



1460823076.jpgবঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ আমেরিকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যার পরিকল্পনার অভিযোগে পুলিশের দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার হওয়া দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার সাবেক সম্পাদক প্রবীণ সাংবাদিক কলা-মিস্ট শফিক রেহমানের পাঁচ দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল শনিবার সকালে ইস্কাটনের বাসা থেকে গ্রেফতারের পর দুপুরে পুলিশ শফিক রেহমানকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করে। বিচারক মাজহারুল ইসলাম তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। শফিক রেহমানকে গ্রেফতারের প্রতিবাদ ও মুক্তির দাবিতে নয়াপল্টনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি। বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপি নেতৃবৃন্দ শফিক রেহমানকে গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতিতে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। এছাড়াও বিএফইউজে ও ডিইউজের নেতৃবৃন্দসহ দেশ বিদেশের বিভিন্ন সংগঠন তার গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানিযে মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। : গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীর ইস্কাটনের নিজ বাসা থেকে শফিক রেহমানকে গ্রেফতার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির উপ-কমিশনার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে রাজধানীর পল্টন থানায় পুলিশের দায়ের করা একটি রাাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় ডিবির তদন্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যা পরিকল্পনার সাথে সাংবাদিক শফিক রেহমানের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। পল্টন থানায় সজীব ওয়াজেদ জয়কে হত্যা চেষ্টার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ২০১৫ সালের মামলা (নং-১) হয়। ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গতকাল শনিবার সকালে শফিক রেহমানকে গ্রেফতার করেন। ডিবির উপ-কমিশনার জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে হামলার বিষয়ে মোহাম্মদউল্লাহ মামুন নামে একজনকে আসামি ও অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিলো। ডিবি পুলিশ মামলাটির তদন্ত করছিলো। তদন্তে যুক্তরাষ্ট্রের ওই হামলার ঘটনায় শফিক রেহমানের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তাকে আসামি তালিকাভুক্ত করে ডিবি। তাকে আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করা হবে বলেও জানান মাশরুকুর। : তবে গ্রেফতারের পরই সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপ-কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার জানান, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় শফিক রেহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে অনুষ্ঠিত ব্রিফিংয়ে মারুফ হোসেন জানান, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র মামলায় শফিক রেহমান গ্রেফতার হয়েছেন। তিনি বলেন, ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট পল্টন থানায় সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যার পরিকল্পনা মামলা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পল্টন থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোজাম্মেল হক সাক্ষ্যগ্রহণের এক পর্যায়ে এ ঘটনায় শফিক রেহমানের সম্পৃক্ততা পেয়েছেন। তাই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উপ-কমিশনার মারুফ জানান, শফিক রেহমান ২০১৩ সালে একবার যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। তখনই জয়কে অপহরণ ও হত্যার পরিকল্পনা করা হয় বলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জানতে পেরেছেন। : তবে গ্রেফতারের পর সকালে শফিক রেহমানের স্ত্রী তালেয়া রেহমান জানান, বেসরকারি বৈশাখী টেলিভিশন চ্যানেল থেকে সাক্ষাৎকার নেয়ার কথা বলে সকালে কয়েকজন বাসায় ঢোকেন। শফিক রেহমান সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন ভেবে তিনি (তালেয়া রেহমান) বাসার ভেতরে ছিলেন। পরে বাসার বাবুর্চি জানান, শফিক রেহমানকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাকে নেয়ার সময় তিনি (বাবুর্চি) বাধা দেন। এ সময় তাকে মারধর করে চুপ থাকতে বলা হয়। বাবুর্চি আলী বলেন, তাকে ঘুষি দিয়ে হাতের কার্ডটি ছিনিয়ে নেয়। গেটের বাইরে তিনটি গাড়ি দাঁড়ানো ছিলো। সেখানে আরো কয়েকজন লোক তারা দেখতে পেয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ডিবি পুলিশের হাতে একটি ভিডিও ক্যামেরাও ছিলো। বাসার গৃহপরিচারিকা হনুফা বলেন, তিনি তিনজনের চা দিয়ে গেছেন। চা দেয়ার সময় তারা জানতে চেয়েছেন শফিক রেহমান কি করছেন। গৃহপরিচারিকা বলেছেন, তিনি তখন ওই লোকগুলোকে বলেছেন স্যার ওপরে আছেন। : শফিক রেহমানকে গত কয়েকদিন থেকে অনুসরণ করা হচ্ছে বলে মনে করেন শফিক রেহমান সম্পাদিত মৌচাকে ঢিলের সহকারী সম্পাদক সজীব ওনাসিস। তিনি জানান ১৩ এপ্রিল সন্ধ্যার দিকে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের কর্মী পরিচয় দিয়ে ভূমিকম্পের কিছু আগে সাংবাদিক পরিচয়ে তিনজন ব্যক্তি বাসায় এসেছিলেন; যারা ভূমিকম্প হওয়ার পরে কিছু না বলেই চলে যান। ইন্টারভিউ না নিয়েই চলে যাচ্ছেন কেন এ প্রশ্ন করা হলে, তখন তারা বলেছিলেন, আজ নয় আরেক দিন। : শফিক রেহমানের স্ত্রী ও ডেমোক্রেসি ওয়াচের নির্বাহী পরিচালক তালেয়া রেহমান বলেন, সাংবাদিক পরিচয়ে এভাবে গ্রেফতার সাংবাদিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। কারণ সাংবাদিকদের সবাই বিশ্বাস করে। আমরাও বিশ্বাস করেছিলাম। কিন্তু একজন বয়স্ক লোককে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে যেভাবে ধরে নিয়ে যাওয়া হলো তা খুবই চিন্তার বিষয়। তালেয়া রেহমান বলেন, এমন পরিস্থিতির জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম না। এখন সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বাসায় এলেও বিশ্বাস করা যাবে না। এ ঘটনায় সাংবাদিকতারও বদনাম হয়ে গেলো। তালেয়া রেহমান বলেন, দারোয়ানের কাছে তিনি শোনেন, গাড়িতে করে শফিক রেহমানকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যারা নিয়ে গেছে, তাদের মধ্যে একজনের পোশাকের পেছনে ‘ডিবি’ লেখা ছিল। : সাংবাদিক শফিক রেহমানকে রাজধানীর ইস্কাটনের নিজ বাসা থেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার বর্ণনা দিয়েছেন তার বাসার কেয়ারটেকার (তত্ত্বাবধানকারী) আব্দুল মতিন মোল্লা। তিনি জানান, সকাল ছয়টার দিকে বাসার মূল গেটে প্রথমে দুজন ধাক্কা দেন। তারপর আরেকজন আসেন। তারা বেসরকারি একটি চ্যানেল থেকে এসেছেন বলে জানান। তারা বলেন, ওই টিভিতে শফিক রেহমানের অনুষ্ঠান আছে। তাকে নিয়ে যেতে এসেছেন। কেয়ারটেকার বাসার পেছনে তিনতলা ভবনের নিচতলায় তাদের বসান। তিনতলায় থাকা শফিক রেহমানকে বিষয়টি জানানো হলে তিনি তাদের নাশতা দিতে বলেন। তারা তিনজন নাশতা খান। শফিক রেহমানের নামতে দেরি হলে সকাল আটটার দিকে তারা কেয়ারটেকার আব্দুল মতিন মোল্লাকে একটি ভিজিটিং কার্ড দিয়ে ওপরে যেতে বলেন। আব্দুল মতিন উঠতে শুরু করলে ওই তিনজনও তার পেছনে পেছনে দোতলা পর্যন্ত উঠে যান। এ সময় শফিক রেহমান নিচে নামেন। : কেয়ারটেকার আব্দুল মতিন বলেন, শফিক রেহমান দোতলায় নামার পর ওই তিনজন ডিবি থেকে এসেছেন বলে জানিয়ে তাকে নিচে নামিয়ে আনেন। বাবুর্চি আলী বাধা দিতে গেলে তারা বলেন, ‘তুই আসবি না’। বাসার সামনে দাঁড়ানো মাইক্রোবাসে করে সকাল আটটার দিকে শফিক রেহমানকে নিয়ে যাওয়া হয়। : সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ডিবি কার্যালয়ের পরিচয় দিয়ে শফিক রেহমানের স্ত্রী তালেয়া রেহমানের কাছে ফোন আসে। তালেয়া রহমান গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, শফিক রেহমানের জন্য নাশতা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ ডিবি কার্যালয় থেকে চেয়ে পাঠানো হয়েছে। সেগুলো পাঠানো হচ্ছে। শফিক রেহমান কোলেস্টরেল ও ডায়বেটিস রোগে আক্রান্ত। দুপুর ১২টার দিকে তালেয়া রেহমান মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে যান। তালেয়া রেহমান জানান, শফিক রেহমানের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব রয়েছে। ডিবি তাকে গ্রেফতার করার বিষয়টি ব্রিটিশ দূতাবাসে জানানো হয়েছে। তারা এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছে বলে জানিয়েছে। : ৮২ বছর বয়সের দেশের প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমান সাপ্তাহিক যায়যায়দিন পত্রিকার মাধ্যমে এ দেশে সাংবাদিকতার জগতে খ্যাতির শীর্ষে আসেন। এর আগে তিনি দৈনিক ইত্তেফাক ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসিতে কাজ করেন। এরশাদের স্বৈরশাসনামলে সাপ্তাহিক যায়যায়দিনের একটি প্রতিবেদনের কারনেণ তাকে নির্বাসনে থাকতে হয়। পরবর্তীতে তিনি যায়যায়দিনকে দৈনিকে রূপান্তর করেন। ফখরুদ্দিন আহমদের জরুরি সরকারের সময় দৈনিক যায়যায়দিন হাতছাড়া হয়ে যায়। এরপর থেকে তিনি দৈনিক নয়া দিগন্তে নিয়মিত কলাম লিখছিলেন। এছাড়া বাংলাভিশনে লালগোলাপ নামে নিয়মিত তার আর্টশো প্রচারিত হচ্ছিলো। : দার্শনিক অধ্যাপক সাইদুর রহমানের পুত্র শফিক রেহমান একজন চার্টার্ড একাউন্টটেন্ট। তিনি লন্ডনে প্রথম বহুভাষাভিত্তিক রেডিও স্পেকট্রাম চালু করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি লন্ডনে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। : সাংবাদিক নেতাদের বিবৃতি : বিশিষ্ট সাংবাদিক, সাহসী কলামিস্ট ও জনপ্রিয় টিভি ব্যক্তিত্ব শফিক রেহমানকে বিনা ওয়ারেন্টে আকস্মিকভাবে গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজের নেতৃবৃন্দ। বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শামসুদ্দিন হারুন ও মহাসচিব এম আবদুল্লাহ এবং ডিইউজে সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, সাংবাদিক পরিচয়ে সাক্ষাৎকার নেয়ার কথা বলে বাসায় ঢুকে অভিনব ও নাটকীয় কায়দায় যেভাবে একজন অশীতিপর সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হয়েছে তা কেবল নিন্দনীয়ই নয়, ঘৃণ্য ও ন্যক্কারজনক। সাংবাদিকের ভুয়া পরিচয় দিয়ে বাসায় ঢুকে গ্রেফতার করে আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা ভিন্নমত দলনে আরেকটি নিকৃষ্ট উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। এ ঘটনায় শুধু সাংবাদিক সমাজই নয়, দেশের বিবেকবান মানুষ উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ। গ্রেফতারের সময় কোনো ওয়ারেন্ট না দেখিয়ে এবং পরে পুরনো মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আইনের শাসনের প্রতি চরম অবজ্ঞা প্রদর্শন করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন সাংবাদিক নেতারা। : বিবৃতিতে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বলেন, এর আগে প্রায় একই কায়দায় আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, বিএফইউজের সভাপতি ও ইকোনমিক টাইমস সম্পাদক শওকত মাহমুদকে গ্রেফতার করে একের পর এক মামলায় জড়িয়ে দীর্ঘ দিন কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। সব মামলায় জামিন পাওয়ার পরও তাদের মুক্তি না দিয়ে বার বার শ্যোন অ্যারেস্ট করা হচ্ছে। নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে^ মাহমুদুর রহমান, শওকত মাহমুদ, শফিক রেহমানসহ সাংবাদিকদের মুক্তি দেয়ার দাবি জানান। একই সঙ্গে সাংবাদিক দলন, নির্যাতন বন্ধ করে, সাগর-রুনীসহ সব সাংবাদিক হত্যার বিচার এবং বন্ধ গণমাধ্যম খুলে দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।

বাংলাদেশ সময়: ০:১৮:৩৬   ৬০১ বার পঠিত