রবিবার, ১০ এপ্রিল ২০১৬
আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত হলে জনগণ সুবিচার পাবে
Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত হলে জনগণ সুবিচার পাবেবঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ শফিক আহমেদের জন্ম ১৯৩৭ সালে, কুমিল্লায়। ১৯৬৭ সালে তিনি লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে এলএলএম ও লিংকনস ইন থেকে বার-অ্যাট-ল ডিগ্রি লাভ করেন। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি শফিক আহমেদ ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হিসেবে আইন পেশায় নিযুক্ত
* সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সোহরাব হাসান ও কুন্তল রায়বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যকার সম্পর্ককে কীভাবে দেখছেন? মনে হয় কোথাও ঝামেলা হচ্ছে?
শফিক আহমেদ * আমার মনে হয় না কোনো ঝামেলা আছে। সংবিধান অনুযায়ী বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগ আলাদাভাবে কাজ করে। বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করবে, এটাই সংবিধানের বিধান। সেখানে কারও হস্তক্ষেপ করার অধিকার নেই। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপরই নির্ভর করছে আইনের শাসন। আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত হলে জনগণ সুবিচার পাবে।
বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ কোনো টানাপোড়েন?
শফিক আহমেদ * না, টানাপোড়েন আছে বলেও মনে করি না। যেমন বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবেই তার কাজ করেছে। অতীতে নিম্ন আদালতের বিচারকদের নিয়োগ হতো পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে। কিন্তু এখন এসব নিয়োগ হয় সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারকের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির মাধ্যমে। নিম্ন আদালতে বিচারক নিয়োগের এখতিয়ার সম্পূর্ণ সুপ্রিম কোর্টের। তঁাদের পদায়ন ও পদোন্নতিও ঠিক করেন তাঁরা।
বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট তো অনেক ক্ষেত্রে নির্বাহী বিভাগের ওপর নির্ভরশীল?
শফিক আহমেদ * তঁারা নির্ভরশীল এ কারণে যে সুপ্রিম কোর্টের এখনো নিজস্ব সচিবালয় নেই। তাঁদের যদি স্বতন্ত্র ও স্বাধীন সচিবালয় থাকত, তাহলে নির্ভরশীল হতে হতো না। আমার মনে হয়, সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠার কাজও চলছে। তবে যে কাজটি করতে হবে সেটি হলো লোকবল। সে জন্য হয়তো নির্বাহী বিভাগ থেকে অর্থায়ন করতে হবে। বিচার বিভাগ চাইলে তাঁরা না করবেন না। বিচার বিভাগ স্বাধীন হলে নির্বাহী বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থাও বাড়বে। যেমন মামলা নিষ্পত্তিতে যে দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে, জনগণ তা ভালোভাবে নিচ্ছে না। তারা দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি চায়। মামলার জট কমানোর জন্য বিকল্প বিচারব্যবস্থা চালু আছে বিভিন্ন দেশে।
বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ আপনি আইনমন্ত্রী থাকতে তো এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছিলেন?
শফিক আহমেদ * উদ্যোগ নিয়েছি। দেওয়ানি কার্যবিধিতে সংশোধনও আনা হয়েছে। এ জন্য অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, কীভাবে এর নিষ্পত্তি হবে। আমাদের প্রচলিত বিচারপ্রক্রিয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই বিরোধ নিষ্পত্তির চেয়ে বিরোধ বাড়িয়ে দেয়। চূড়ান্ত আদালত পর্যন্ত মামলা চলতে থাকে। কিন্তু বিকল্প পদ্ধতিতে উভয় পক্ষকে ডেকে বলা হয়, প্রচলিত বিচারপ্রক্রিয়ায় গেলে এই সুবিধা বা অসুবিধা হবে, আর যদি নিজেরা নিষ্পত্তি করে, তাহলে অন্য ফল মিলবে। এর মাধ্যমে উভয় পক্ষকে সন্তুষ্ট করা যেতে পারে। এ-সংক্রান্ত এডিআর আইন পাস হয়েছে, গেজেট প্রকাশের পর কার্যকর করা যাবে।
বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ বিরোধ নিষ্পত্তির বিকল্প ব্যবস্থার ব্যাপারে আইনজীবীদের মধ্যে শঙ্কা কাজ করছে যে তাহলে তাঁদের আয় কমে যাবে।
শফিক আহমেদ * আমি আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেছি। আইনজীবীরা পাঁচ বছরে মামলা করলে যে আয় করবেন, নিষ্পত্তি হলে তার চেয়ে কম হবে না। এক-দুই মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি হলে উভয় পক্ষ লাভবান হবে। আরেকটি বিষয়, মামলার পেছনে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর অনেক টাকা খরচ হয়। শুল্ক বিভাগের বিরোধ নিষ্পত্তিতে উভয় পক্ষ লাভবান হয়েছে। বিদেশেও দেখা গেছে বিকল্প পদ্ধতিতে আইনজীবীদের আয় বাড়ছে। কেননা, এতেও আইনজীবীদের মাধ্যমে মামলা দায়ের করা হবে ও জবাব দেওয়া হবে। এতে আদালত সম্পর্কে মানুষের ভয় কমবে।
বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ মামলার জট কমাতে প্রধান বিচারপতি সন্ধ্যাকালীন আদালত বসানোর কথা বলেছেন।
শফিক আহমেদ * এ কথার গূঢ়ার্থ হলো মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা। দেখা যাচ্ছে, নিম্ন আদালতে বিচারক অনুপাতে এজলাস নেই। একজন হয়তো সকালে বসেন, আরেকজন বিকেলে। এতে পুরো দিনটা বিচারকাজে ব্যয় হচ্ছে না। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে প্রধান বিচারপতি বলেছেন বলে আমার ধারণা। আমি মন্ত্রী থাকাকালে বহুতল ভবন করার ওপর জোর দিতাম। আমাদের জমি কম, তাই ওপরের দিকেই যেতে হবে। সেখানে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের বসার জায়গা থাকবে।
বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ যুদ্ধাপরাধের বিচারের কাজটি আপনার সময়েই শুরু হয়েছিল। এখনো অনেকগুলো মামলা বিচারাধীন, কিন্তু এটি কত দিন চলবে?
শফিক আহমেদ * তদন্ত চলছে। তদন্তে যদি দেখা যায় কেউ হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগের মতো গুরুতর অপরাধ করেছে, তার বিচার হবে।
বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ নুরেমবার্গ আদালতে ২৪ জন শীর্ষস্থানীয় অপরাধীর বিচার হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশে কতজনকে এই আইনের আওতায় বিচার করা হবে?
শফিক আহমেদ * প্রশ্নটি হলো যারা অপরাধ সংঘটিত করেছে এবং অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থেকেছে, তাদের যদি বিচার করা না হয়, তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত স্বজনেরা তো বলবেন আমরা বিচার পেলাম না। তাই এটি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আদালতের ওপর। যখনই কোনো তদন্ত রিপোর্ট আসে তখনই তদন্তকারী কর্মকর্তারা এবং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা সেটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মামলা করা বা না করার সিদ্ধান্ত নেন।
বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ যেসব পাকিস্তানি একাত্তরে যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করেছে, বর্তমান আইনে তাদের বিচার করা সম্ভব কি না?
শফিক আহমেদ * তাদের অনুপস্থিতিতে বিচার করা যেতে পারে।
বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ বিচারের জন্য তাদের বাংলাদেশে পাঠানোর দাবি পাকিস্তানের কাছে করা হবে কি না?
শফিক আহমেদ * দাবি তো উঠছে। কিন্তু তারা শুনছে কোথায়? আইন সংশোধন করে আমরা যুদ্ধাপরাধের বিচারের আওতা বাড়িয়েছি, এখন কেবল ব্যক্তি নয়, সংগঠনেরও বিচার করা যাবে।
বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ বিচারাধীন বিষয়ে দুই মন্ত্রীর বক্তব্য এবং আপিল বিভাগের সাম্প্রতিক রায় সম্পর্কে কী বলবেন?
শফিক আহমেদ * আমার মনে হয় বিচার বিভাগের প্রতি প্রত্যেক নাগরিকের আস্থা ও শ্রদ্ধা থাকা উচিত। সংসদের পাস করা আইনকেও কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট বাতিল করে দিতে পারেন। সুপ্রিম কোর্টের রায়েই সংবিধানের পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনী বাতিল হয়েছে।
বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ কিন্তু চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে যে বিচার বিভাগের ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছিল?
শফিক আহমেদ * আপনি দেখবেন বর্তমান সংবিধান। পঞ্চদশ সংশোধনীতে বাহাত্তরের সংবিধান পুরোপুরি পুনর্বহাল করা হয়েছে। সামরিক শাসনবলে যেসব আইন জারি করা হয়েছিল তা বাতিল হয়ে গেছে। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর চাকরিচ্যুত মেজর ডালিম সামরিক আইন জারি করে দিলেন। তাঁর কী ক্ষমতা? পরে ২০ আগস্ট এটি অধ্যাদেশ হিসেবে জারি হলেও তাতে সামরিক আইনের কারণ ব্যাখ্যা করা হয়নি। ব্যাখ্যা করা হলো, ১৯৭৯ সালের ৬ এপ্রিল যেদিন সামরিক আইন প্রত্যাহার করা হয়। এই আইনে সংবিধানের প্রস্তাবনাকেও বদলে দেওয়া হয়েছিল, আমরা যা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছি।
বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ কিন্তু সংবিধানে এখনো অ-বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর অধিকার স্বীকৃত হয়নি।
শফিক আহমেদ * সংবিধানে এদের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বলা হয়েছে।
বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ কিন্তু তারা যদি নিজেদের আদিবাসী হিসেবে পরিচয় দেয়, আমরা আপত্তি করব কেন?
শফিক আহমেদ * আদিবাসীর সংজ্ঞা আন্তর্জাতিক আইনে খুবই পরিষ্কার। ঔপনিবেশিক শাসনের বা দখলের আগে যারা সেখানে বাস করত, তাদেরই আদিবাসী বলা হয়। যেমন নিউজিল্যান্ডের মরিস, আমেরিকার রেড ইন্ডিয়ান। কিন্তু আমাদের এখানে মঙ্গোলীয় যে জনগোষ্ঠী এসেছে, তারা বাঙালিদের আগে আসেনি। এ কারণে তাদের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বলা হয়েছে।
বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ সংবিধানে চার মূলনীতি থাকার পরেও রাষ্ট্রধর্ম রাখা কতটা যৌক্তিক?
শফিক আহমেদ * পঞ্চম সংশোধনীতে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি ও সংবিধানের মূলনীতি দুটোই বদলানো হয়েছিল। আমরা কিন্তু তা পুনর্বহাল করেছি।
বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ কিন্তু চার মূলনীতি পুনর্বহালের পর কীভাবে রাষ্ট্রধর্ম থাকে?
শফিক আহমেদ * আমি আপনার সঙ্গে পুরো একমত। সংবিধানের দ্বাদশ অনুচ্ছেদে ছিল ধর্মনিরপেক্ষ নীতি বাস্তবায়নের দিকনির্দেশনা। জিয়াউর রহমান সেটি বাতিল করে দিলেন। এবং পঞ্চদশ সংশোধনীতে আমরা পুনর্বহাল করলাম। আপনি ঠিকই বলেছিলেন, চার মূলনীতির সঙ্গে রাষ্ট্রধর্ম যায় না। এর বিরুদ্ধে যে রিট আবেদন করা হয়েছিল, তাতে বিচারপতি কামাল উদ্দিন হোসেন, কে এম সোবহান, কবীর চৌধুরী প্রমুখ ছিলেন। তার মধ্যে বেঁচে আছেন তিনজন। তাঁদের মধ্যে একজন নিজের নাম প্রত্যাহার করেছেন।
বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ তাহলে হাইকোর্টের সবশেষ আদেশের পরেও যেকোনো ব্যক্তি প্রতিকার চাইতে পারেন?
শফিক আহমেদ * নিশ্চয় পারেন। সংবিধানে ১২ অনুচ্ছেদ থাকতে কোনো ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদা দেওয়া যায় না। এখন আমরা গোঁজামিল দিয়ে বলেছি, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানরাও সমমর্যাদা ভোগ করবে।
বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ সাংসদেরা আইন পড়েন না বা বোঝেন না বলে প্রশ্ন উঠেছে।
শফিক আহমেদ * এর জবাব হলো সংসদের সব সদস্য আইনের খুঁটিনাটি বিষয়ে প্রশ্ন করেন না। প্রতিদিন সংসদে আইন পাস করা হয় না। সাংসদেরা নিজ নিজ এলাকার জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেন। তাঁদের স্বার্থ দেখাটাই সাংসদদের মূল কাজ।
বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ কিন্তু সংসদে আইন নিয়ে তো আলোচনা হবে। পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে সংসদে মাত্র এক দিন আলোচনা দেখলাম।
শফিক আহমেদ * আলোচনা হয়। পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে স্থায়ী কমিটিতে বহুবার আলোচনা হয়েছে। অনেকে ত্রয়োদশ সংশোধনী অর্থাৎ তত্ত্বাবধায়ক সরকার বহাল রাখার কথা বলেছিলেন। কিন্তু গণতন্ত্রের মৌলিক যে চেতনা, আমরা তার বাইরে যেতে পারি না। গণতন্ত্রে বিশ্বাস করলে জনগণের প্রতিনিধি দিয়ে দেশ পরিচালিত হতে হবে। জিয়াউর রহমানকে কে ক্ষমতা দিয়েছিল সংবিধান পরিবর্তনের জন্য?
বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ আপনার সময় সাংসদেরা কি খুব আগ্রহী ছিলেন আইন নিয়ে আলোচনার ব্যাপারে?
শফিক আহমেদ * নিশ্চয়ই। হঠাৎ করে আইন পাস হয় না। স্থায়ী কমিটিতে অনেকবার আলোচনা হয়, বিশেষজ্ঞদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। আমরা অনেকবার আইন কমিশনকে ডেকেছি। হিন্দুবিবাহ আইন পাস করার সময় আমার বাড়ি ঘেরাও করা হয়েছিল। এ কারণে আইনটি বাধ্যতামূলক করতে পারিনি, ঐচ্ছিক হয়েছে। অথচ, ভারতে ১৯৫৬ সালে হিন্দুবিবাহ নিবন্ধন আইন হয়।
বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ বিচারক অপসারণের মামলায় আপিল বিভাগের ৪০ দফার নির্দেশনাকে কীভাবে দেখছেন?
শফিক আহমেদ * খুবই ভালো। এত দিন একটা আচরণবিধি ছিল, কিন্তু এভাবে নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সুরক্ষার জন্যই এর প্রয়োজন ছিল। পূর্ণাঙ্গ রায় লেখার জন্য ছয় মাস সময় দেওয়া হয়েছে, এটা ঠিকই হয়েছে। এর মাধ্যমে বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে এবং জনগণ উপকৃত হবে।
বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধি দিয়ে তনু হত্যার বিচার সম্ভব নয় বলে প্রধান বিচারপতি বলেছেন।
শফিক আহমেদ * সম্ভব নয়, এ কথা বলব না। তার মানে এদ্দিন পর্যন্ত কোনো হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি? প্রশ্ন হলো, এখন আধুনিক
যুগে অনেক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি বেরিয়েছে, সেটা তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে ওয়াকিবহাল করা দরকার। সেই লক্ষ্যেই কিন্তু প্রধান বিচারপতি
এ কথাটি বলেছেন। এ জন্য যারা তদন্ত করছে তাদের প্রশিক্ষণ দরকার। বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে কীভাবে তদন্তকাজ করবে, সেগুলো
শেখানো দরকার। তা না হওয়া পর্যন্ত আমাদের পুরোনোর ওপর চলতে হবে।
বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ প্রধান বিচারপতি বলেছেন, আইনজীবীরা আজকাল বাণিজ্যিক হয়ে গেছেন, শুধু স্থগিতাদেশ, জামিন, নিষেধাজ্ঞা-এসব নিয়েই আছেন, কীভাবে টাকা কামানো যায়।
শফিক আহমেদ * আমার জানা নেই। তবে আইনজীবীরা হলেন অফিসার্স অব দ্য কোর্ট। আমাদের বিচারব্যবস্থায় বিচারকেরা হলেন আম্পায়ার। উভয় পক্ষের আইনজীবীরা আইন দেখাবেন, তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করবেন, আর বিচারকেরা আম্পায়ারের কাজ করবেন।
বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ বারবার চেষ্টা করা সত্ত্বেও দৈনিক কজলিস্ট কেন শুধু অনলাইনভিত্তিক করা যাচ্ছে না?
শফিক আহমেদ * উদ্যোগটা ভালো। তবে ওই যে সবাইকে তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ হতে হবে। আমার ক্লার্ক কিন্তু খুব এক্সপার্ট। কিন্তু সব আইনজীবীর ক্ষেত্রে তো তা নয়, তাই আরও কিছুদিনের জন্য থাকা দরকার আছে।
বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ আপনার হাত থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল হয়ে গেছে। আজ যে নির্বাচন হচ্ছে, এটা কীভাবে দেখছেন?
শফিক আহমেদ * ভারতেও নির্বাচন কমিশন আছে। নির্বাচন কমিশন যদি শক্ত হয়, তাহলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দরকার নেই। এটা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব, যাকে খুব শক্ত হতে হবে। ভারতে আদালত ইন্দিরা গান্ধীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন এবং শেষ পর্যন্ত তাঁর সদস্যপদও বাতিল হয়ে গিয়েছিল। আমাদেরও নির্বাচন কমিশনকেও শক্তিশালী হতে সাহায্য করা উচিত। আমাদের সে জন্য কাজ করতে হবে। দশম সংসদ নির্বাচনের অব্যবহিত আগে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী একটা সমাধান চেয়েছিলেন। সেটা হলো সর্বদলীয় সরকার হবে। যাদের সংসদীয় প্রতিনিধিত্ব আছে। তিনি বিএনপিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও দিতে চেয়েছিলেন। তখন মন্ত্রিসভা বৈঠকে আমি বললাম, আমরা
যারা টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী, তাঁদের পদত্যাগ করা উচিত। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) তা গ্রহণ করলেন। এটা তাঁর আন্তরিকতারই বহিঃপ্রকাশ ছিল।
বাংলাদেশ সময়: ১:২০:১৫ ২৭২ বার পঠিত