বৃহস্পতিবার, ৭ এপ্রিল ২০১৬

আমদানি মাত্র এক পণ্য রপ্তানি হয়ই না

Home Page » অর্থ ও বানিজ্য » আমদানি মাত্র এক পণ্য রপ্তানি হয়ই না
বৃহস্পতিবার, ৭ এপ্রিল ২০১৬



1fc34087ee3488fff0632c5e9abac70b-11.jpgবঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান নৌ প্রটোকলের আওতায় একটি পণ্যের ওপরই ব্যবসা-বাণিজ্য নির্ভরশীল। এই প্রটোকল ব্যবহার করে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে সিমেন্টশিল্পের কাঁচামাল ফ্লাই অ্যাশ আনা হয়। এটা অনেকটা একমুখী বাণিজ্য। নৌপথে ভারতে কোনো পণ্য রপ্তানি হয় না।
অপর দিকে এই প্রটোকলের আওতায় ভারত বাংলাদেশের ভূখণ্ড বা নৌপথ ব্যবহার করে ভারতের আরেকটি ভূখণ্ডে নিতে পারে। ভারতীয় ব্যবসায়ীরা বছরে বড় জোর ৮-১০টি পণ্যের চালান বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে আসামের গুয়াহাটি ও করিমগঞ্জে নেন। পর্যাপ্ত নাব্যতা না থাকায় শুষ্ক মৌসুমে এ পথে চলাচলের অনুমতি দেয় না বাংলাদেশ। তাই তাঁরা বাংলাদেশের এ দুটি নৌপথ ব্যবহার করতে আগ্রহী নন।
১৯৭২ সাল থেকে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে নৌ প্রটোকল করা হয়। গত ৪৪ বছরে নৌপথে দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য খুব একটা বাড়েনি। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ও ভারতীয় অভ্যন্তরীণ নৌ কর্তৃপক্ষ (আইডব্লিউএআই) নিজ নিজ দেশের পক্ষে প্রটোকলটির যাবতীয় কার্যক্রম করে থাকে।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর সময়ে মোট ২ হাজার ৫৯৯টি আমদানি চালানের (ভয়েজ) অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৫৭৮টি চালানে বাংলাদেশে পণ্য আনা হয়েছে। বাংলাদেশে আনা চালানগুলোর মধ্যে ২ হাজার ৫৭১টিতে ফ্লাই অ্যাশ আনা হয়েছে। অর্থাৎ দেশে যত পণ্য আনা হয়েছে, এর মধ্যে ৯৯ দশমিক ৭২ শতাংশই ফ্লাই অ্যাশের চালান। বাকিগুলো ভোগ্যপণ্য, বড় পাথর, স্টিল প্লেটের চালান।
এ ছাড়া ওই সময়ে মাত্র ২১টি চালান কলকাতা থেকে বাংলাদেশের নৌপথ ব্যবহার করে আসামের পান্ডু ও করিমগঞ্জ এবং পান্ডু থেকে কলকাতায় গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক (পরিকল্পনা বিভাগ) ও ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান সেলিম প্রথম আলোকে বলেন, এই প্রটোকলের আওতায় যেকোনো পণ্যই আনা-নেওয়া করা যায়। সিমেন্ট কারখানাগুলো নদীর তীরে হওয়ায় ভারত থেকে ফ্লাই অ্যাশ আনতেই এ প্রটোকল ব্যবহার করা হয়। তৈরি পোশাক খাতের সুতা কিংবা অন্য ভোগ্যপণ্য আনায় বেশ সমস্যা রয়েছে। স্থলপথে এসব পণ্য আনলে সীমান্তে শুল্কায়ন প্রক্রিয়া শেষে আমদানিকারক সরাসরি নিজস্ব কারখানায় নিয়ে যেতে পারেন। কিন্তু এ প্রটোকলের আওতায় আমদানি করলে পণ্যের চালান খুলনা, নারায়ণগঞ্জ ও আশুগঞ্জ ছাড়া আর কোথাও শুল্কায়ন করা যায় না। তাই আমদানিকারক নিজের সুবিধার জন্যই এ নৌপথে পণ্য আনেন না।
নৌপথে পণ্য পরিবহন স্থলপথের চেয়ে অনেক সাশ্রয়ী। এ প্রটোকলের আওতায় জাহাজ পরিচালনাকারী মালিকপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, কলকাতা থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত এক টন ফ্লাই অ্যাশ পরিবহন করলে বাংলাদেশি জাহাজমালিকেরা গড়ে ১২ ডলার পান। অন্যদিকে সড়কপথে বেনাপোল থেকে ঢাকা পর্যন্ত পণ্য আনতে ৫ টনের ট্রাকের ভাড়া পড়ে ১৫-২০ হাজার টাকা। এ ছাড়া কলকাতা থেকে পেট্রাপোল সীমান্ত পর্যন্ত খরচ হয় আরও ৫ থেকে ৮ হাজার টাকা।
প্রটোকলের আওতায় জাহাজ চলাচলকারী নেক্সাস করপোরেশনের স্বত্বাধিকারী সানাউল হক বলেন, নৌপথে পণ্য পরিবহন অনেক সাশ্রয়ী, তাই এ পথে পণ্য আমদানি-রপ্তানির সুযোগ করে দেওয়া উচিত। যেহেতু পোর্ট অব কলেই পণ্য পণ্য খালাস করতে হবে এমন নয়। পোর্ট অব কলে শুল্কায়ন করে নিজস্ব গন্তব্যে জাহাজ নিয়ে যেতে পারবেন আমদানিকারক। তাঁর মতে, বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে বস্ত্র খাতের বিপুল পরিমাণ সুতা আমদানি করা হয়। কিছু সুতা যদি নৌপথে আনার সুযোগ দেওয়া হতো, তাহলে এ পথে ব্যবসা-বাণিজ্য আরও বাড়ত। একইভাবে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিকারকের নৌপথে ভারতে পাট রপ্তানির সুযোগ রয়েছে।
উল্লেখ্য, এ প্রটোকলের আওতায় তিনটি পোর্ট অব কল রয়েছে। এগুলো হলো খুলনা, নারায়ণগঞ্জ ও আশুগঞ্জ। এ তিনটি বন্দরেই শুধু শুল্কায়ন করা যায়।

বাংলাদেশ সময়: ০:৫৭:৫০   ৪৪৮ বার পঠিত