বুধবার, ৬ এপ্রিল ২০১৬

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হ্যাকিং তদন্তের দল যাচ্ছে শ্রীলঙ্কায়

Home Page » অর্থ ও বানিজ্য » বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হ্যাকিং তদন্তের দল যাচ্ছে শ্রীলঙ্কায়
বুধবার, ৬ এপ্রিল ২০১৬



bb.jpg বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ আরও ৯৭ লাখ ডলার ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ফিলিপাইন ও শ্রীলঙ্কায় যাচ্ছে তদন্ত দল

রিজার্ভ হ্যাকিংয়ে নিজের দায় সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছেন ফিলিপাইন রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) শাখা ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দিগুইতো। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক লরেন্স ট্যানের নির্দেশেসব করেছেন বলে ফিলিপাইনের সিনেট ব্লু রিবন কমিটির শুনাতিতে তিনি জানান। শুনানিতে অংশ নিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ক্যাসিনো মালিক কিম অং আরও ৯৭ লাখ ডলার ফেরত দেওয়ার প্রুতিশ্রুতি দিয়েছেন। গতকাল ফিলিপাইনে সিনেট কমিটির শুনাতিতে অংশ নিয়ে তিনি এ প্রতিশ্রুতি দেন। অন্যদিকে রেমিট্যান্স লেনদেন কোম্পানি ফিলরিমের কর্মকর্তারা তাদের কাছে কোনো মুদ্রা থাকার কথা অস্বীকার করেছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হ্যাকিংয়ের ঘটনায় গতকাল ফিলিপাইনের সিনেট ব্লু রিবন কমিটি চতুর্থ দফা শুনানি করেছেন। শুনানিতে অংশ নিয়ে আরসিবিসির জুপিটার স্ট্রিট শাখার ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দিগুইতো প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সংশ্লিষ্টতা জানিয়ে বক্তব্য দেন। তিনি কমিটির সামনে বলেন, হ্যাকিং হওয়া বা ব্যাংকিং জালিয়াতির বিষয়টি কখনো আমার জানা ছিল না। নিউইয়র্ক ফেডারেল ব্যাংক থেকে অর্থ আসার পর তা ছাড় করতে চেক জমা দেওয়া হয়। ওই চেকের মাধ্যমে অর্থ ছাড় করা হবে কিনা সেটা জানতে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক লরেন্স ট্যানের কাছে ফোন করি। তিনি খুব দ্রুত অর্থ ছাড় করতে নির্দেশ দেন। তার নির্দেশেই সব অর্থ ছাড় করা হয়। ব্যাংকিং জালিয়াতি বিষয়টি আমি পরে জানতে পেরেছি।

অর্থ পাচারের সব তথ্য আমি জানি : কিম অং শুনানিতে ঘটনার অন্যতম অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত ক্যাসিনো মালিক কিম অং ও দিগুইতোকে সামনা-সামনি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে কিম অং কমিটির কাছে বলেন, অর্থ হ্যাকিংয়ের শুরু থেকে বিষয়টি আমি জানি। দিগুইতোর পরিকল্পণায় পাঁচ অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। তার মাধ্যমেই দুই ক্যাসিনো অর্থ আসে। আরসিবিসির ওই শাখা থেকে কোথায় অর্থ পাচার হয়েছে সে বিষয়টি আমি সম্পূর্ণভাবে জানি। দিগুইতোই আমাকে ফিলরিমের কাছে অর্থ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। পরে ফিলরিমের মাধ্যমে ৪৬ মিলিয়ন ডলার হংকংয়ে পাচার করে দেওয়া হয়। হংকংয়ে ওই অর্থ গিয়েছে সুহুয়া গাও, ডিং জিজ ও উইক্যাং জুয়ের কাছে। গত মে মাসের শুরুতে অর্থ পাচারের বিষয় নিয়ে মাইডাস হোটেলে দিগুইতোর সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠক হয়। পরে ৯ মে পুরো অর্থই ব্যাংক শাখা থেকে উত্তোলন শেষ করা হয়। এরপর তা নগদ ও ক্যাসিনো হয়ে ফিলরিমের কাছে যায়। সেই অর্থ পরে হংকংয়ে পাচার করে দেওয়া হয়। পাচার করে দেওয়া হলেও ফিলরিমের কাছে ১৭ মিলিয়ন ডলার রয়ে গেছে। ওই অর্থ পাচার করার আগেই বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। তাই তা পাচার করা সম্ভব হয়নি। আমার প্রতিষ্ঠানের কাছে যাওয়া ২৯ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে প্রায় ১৭ মিলিয়ন ডলার পাচার করা হয়েছে। বাকি অর্থ আমি ফেরত দেব। ইতিমধ্যে প্রায় সাড়ে চার মিলিয়ন ডলার ফেরত দিয়েছি। আরও ৪৫০ মিলিয়ন পেসো (স্থানীয় মুদ্রা) আগামী ১৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে ফেরত দেব। ৪৫০ মিলিয়ন পেসোতে প্রায় ৯৭ মিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৭৫ কোটি টাকা। কিম অংয়ের বক্তব্যের বিরোধিতা করে ফিলরিমের প্রেসিডেন্ট স্লুইড বাতিস্তার স্বামী ও প্রতিষ্ঠানের মালিক মাইকেল বাতিস্তা পুরোপুরি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমরা ১৮ বছর ধরে ব্যবসা করি। কোনো ধরনের জালিয়াতি করার ইচ্ছে আমাদের নেই। আমরা জানি জালিয়াতি হলে আমাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাই আমরা এই লেনদেনে আমাদের লভ্যাংশ থেকে এক কোটি পেসো আগেই ফেরত দিতে চেয়েছি। আমাদের প্রতিষ্ঠানে যে অর্থ এসেছে তা সবই ট্রান্সফার করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের কাছে কোনো অর্থ নেই।

শুনানিতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ডাকা হয়। এর মধ্যে ফিলিপাইনের আরসিবিসি কর্তৃপক্ষ, এন্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিল (এএমএলসি), ফিলরিম সার্ভিস করপোরেশন, ফিলিপাইন অ্যামিউজিং অ্যান্ড গেমিং করপোরেশন, ব্যুরো অব ইন্টারনাল রেভিনিউ (বিআরআই) অংশ নেয়। বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারাও শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন।

ফিলিপাইন ও শ্রীলঙ্কায় সিআইডির তদন্ত দল : রিজার্ভ ঘটনা তদন্তে ফিলিপাইন ও শ্রীলঙ্কা যাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডির দুটি দল। তারা সেখানকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ইন্টারপোলের সহায়তায় শ্রীলঙ্কার শালিকা ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। সিআইডির অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক শাহ আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তদন্তভার পাওয়ার পরপরই বাংলাদেশ ব্যাংকে তদন্তের পাশাপাশি ফিলিপাইন ও শ্রীলঙ্কায় যাওয়ার জন্য তদন্ত দলের পক্ষ থেকে আদালতে অনুমতি চাওয়া হয়। আদালতের অনুমতি নিয়ে ছয় সদস্যের তদন্ত দলকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে তিন সদস্যের একটি দল ফিলিপাইনের উদ্দেশে গতকাল রাত ১১টায় ঢাকা ত্যাগ করেছে। অপর তিন সদস্যের দল আজ সকাল ১১টায় শ্রীলঙ্কার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বে। ফিলিপাইনের দলের নেতৃত্বে রয়েছেন সিআইডির উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) সাইফুল ইসলাম। তার সঙ্গে অপর দুই কর্মকর্তা হলেন-সিআইডির অর্গানাইজড ও ইকোনমিক ক্রাইম স্কোয়াডের বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল্লাহেল বাকী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়হান উদ্দিন খান। এ ছাড়া শ্রীলঙ্কা যাবেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার জান্নাত আরা, পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (এনসিবি) রফিকুল রনি ও অপরাধ তদন্ত বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক নাজমুল আলম।

ফিলিপাইনে ইতিমধ্যে ৮ ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। আর শ্রীলঙ্কার শালিকা ফাউন্ডেশনের ছয় ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছে। ফিলিপাইনে শনাক্তরা হলেন- মাইকেল ফ্রান্সিসকো ক্রুজ, জেসি ক্রিস্টোফার লাগ্রোসাস, আলফ্রেড সান্তোস ভেরগারা, এনরিকো টিয়োডরো ভ্যাসকুয়েজ, উইলিয়াম সো গো, ক্যাম সিং অং ওরফে কিম অং, মায়া সান্তোস দিগুইতো ও রোমালদো আগ্রাদো। আর শ্রীলঙ্কার শালিকা ফাউন্ডেশনের অভিযুক্তরা হলেন- শালিকা পেরেরা, মিয়ুরিন রানাসিংহে, প্রদীপ রোহিথা, সান্থা নালাকা ওয়ালাকুলুয়ারাচ্চি, সঞ্জিভা তিসা বান্দারা ও শিরানি ধাম্মিকা ফার্নান্দো।

বাংলাদেশ সময়: ৩:৫৬:২৯   ৩৭৯ বার পঠিত