শনিবার, ২ এপ্রিল ২০১৬

বেরিয়ে আসবে তনুর খুনিরা ময়নাতদন্তে

Home Page » প্রথমপাতা » বেরিয়ে আসবে তনুর খুনিরা ময়নাতদন্তে
শনিবার, ২ এপ্রিল ২০১৬



report1.jpg বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ কুমিল্লা সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুর মৃত্যু নিয়ে অনেক প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। তবে তাদের ধারণা, সংগৃহীত আলামতের ‘ডিএনএ’ প্রতিবেদন এবং ‘ফিঙ্গার প্রিন্ট’ থেকেই বেরিয়ে আসবে অনেক প্রশ্নের উত্তর। চিহ্নিত হবে তনুর খুনি। এক্ষেত্রে ঘটনাস্থল থেকে সংগৃহীত এলিট ফোর্স র‌্যাবের সংগৃহীত মাটি ও ঘাসের ফরেনসিক প্রতিবেদন তদন্তের ক্ষেত্রে অনেক সহায়ক হবে বলে মনে করছেন তারা। র‌্যাব সদর দফতর থেকে পুলিশ সদর দফতরে পাঠানো ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আলামতে চেতনানাশক দ্রব্য এবং পেট্রোলিয়ামের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। অন্যদিকে, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার পাওয়া তনুর ছবি এবং প্রথম ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার আগেই কবর থেকে লাশ তুলে দ্বিতীয় দফায় ময়নাতদন্ত নিয়ে তনুর পরিবারসহ প্রশ্ন অনেকেরই। হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী ও মানবাধিকার কর্মী এলিনা খান বলেন, ময়নাতদন্তের সময় ভিসেরা আলামত নেওয়া হয়ে থাকলে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের প্রয়োজন পড়ে না। এক্ষেত্রে যদি ময়নাতদন্তের সময় ভিসেরা আলামত সংগ্রহ করা না হয়ে থাকে তখন সে দায় সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের ওপর বর্তায়। আবার সুরতহাল প্রতিবেদন এবং ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের মধ্যে পার্থক্য দেখা দিলে তা নিশ্চিত হতে তদন্তকারী কর্মকর্তা পুনরায় ময়নাতদন্তের জন্য আদালতে আবেদন করতে পারেন। আলামত হিসেবে র‌্যাবের মাটির ফরেনসিক পরীক্ষার ব্যাপারে তিনি বলেন, র‌্যাব পুলিশেরই একটি অঙ্গ। শুনেছি তারা থানায় জিডি করেই ঘটনাস্থলের মাটি সংগ্রহ করেছিল ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য। এখন পরীক্ষার প্রতিবেদন তাদের তদন্তকারী কর্মকর্তাকে দেওয়া উচিত। একইসঙ্গে ঘটনার ছায়া তদন্তের জন্য কি কি আলামতের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে সে ব্যাপারেও তদন্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করা উচিত। তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি চক্র তনুর লাশের প্রকৃত ছবির বদলে অন্য একটি ছবি ছড়িয়ে দিয়েছে। এই চক্রটিকেও খুঁজছেন তারা। ওই ছবিটি মানব দেহের অঙ্গ পাচার শিরোনামে ২০১৫ সালের ২৪ ডিসেম্বর ভিয়েতনামের একটি অনলাইন পত্রিকায় (http://songkhoeusv.com/songkhoe-271t13/ http://songkhoeusv.com/songkhoe-61t15/) একটি প্রতিবেদনে ব্যবহার করা হয়েছিল বলে নিশ্চিত হয়েছেন তারা। একই সঙ্গে তাদের ধারণা, তনুকে হত্যার আগে চেতনানাশক পান করানো হয়েছিল। বিষয়টি ভিসেরা প্রতিবেদনে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

তনুর বাবা ইয়ার হোসেন গতকাল এ প্রতিবেদককে বলেন, বড় হয়ে ভালো চাকরি করার স্বপ্ন ছিল আমার মায়ের। তবে খুনের ব্যাপারে আমি কিছুই অনুমান করতে পারছি না। কবর থেকে লাশ তুলে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের পক্ষে আমি ছিলাম না। আমি তো প্রথম ময়নাতদন্তের ব্যাপারে কোনো আপত্তি দেইনি। আমার মেয়ের অনেক কষ্ট হয়েছে কবর থেকে লাশ তোলায়-বলেই হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করেন তিনি। এক পর্যায়ে নিজেকে সামলে নিয়ে তিনি বলেন, আমি আমার তনুর হত্যার বিচার চাই। তনুর পারিবারিক সূত্র জানায়, মাথার লম্বা চুল অনেক প্রিয় ছিল তনুর। অথচ ওই চুলই কাটা অবস্থায় পাওয়া গেছে লাশ উদ্ধারের স্থানে। মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার নাজমুল করীম খান বলেন, মামলার তদন্তভার গ্রহণের পর আগের তদন্তকারী কর্মকর্তার হস্তান্তরকৃত আলামতের বাইরেও গত তিন দিনে আরও কিছু আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। সবকিছুরই ফরেনসিক পরীক্ষা করা হচ্ছে। লাশের পরনে থাকা জামার ডিএনএ এবং অন্য আলামতের ডিএনএ নমুনা মিলিয়ে দেখেই খুনিকে চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহ্মুদ খান বলেন, ছায়া তদন্তের অংশ হিসেবে হত্যাকাণ্ডের নয় দিন পরই র‌্যাব ঘটনাস্থলের মাটি ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য নিয়েছিল। ওই সময়ের মধ্যে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সম্ভাব্য অনেক আলামত সংগ্রহ করেছিলেন। নয় দিন পরই র‌্যাব লাশ উদ্ধারের স্থানের মাটির পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়। এর অংশ হিসেবে সাধারণ ডায়েরি করে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় এক কেজি মাটি নেওয়া হয়।

মাটির ফরেনসিক প্রতিবেদনে চেতনানাশক এবং পেট্রোলিয়াম : গত ৩১ মার্চ র‌্যাব সদর দফতর থেকে পুলিশ সদর দফতরে পাঠানো কুমিল্লা সেনানিবাসে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকৃত মাটি এবং ঘাসের ফরেনসিক প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, র‌্যাবের ইনভেস্টিগেশন এবং ফরেনসিক উইংয়ের পরিচালক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. ময়নুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সংগৃহীত ওই মাটির দুটি নমুনায় পেট্রোলিয়াম এবং চেতনানাশক দ্রব্যের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। একটি নমুনায় পেট্রোলিয়ামের উপাদান Heptacosane, Octadecone, Docosane, Pentacosane এর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে যা দাহ্য পদার্থ। অন্য একটি নমুনায় নিদ্রাকারক একইসঙ্গে চেতনানাশক হিসেবে ব্যবহূত হয় Cyclobarbital এবং কীটনাশকের অবশিষ্ট Propyleneglycol monoleate এর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, আইন মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী র‌্যাবের ফরেনসিক প্রতিবেদন বিজ্ঞ আদালতে সাক্ষ্য হিসেবে গণ্য হচ্ছে এবং বিভিন্ন বিজ্ঞ আদালত এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা থেকে পাঠানো নমুনা ওই পরীক্ষাগারে নিয়মিত পরীক্ষা করে বিশেষজ্ঞ মতামত দেওয়া হচ্ছে। প্রসঙ্গত, কুমিল্লা সেনানিবাসের পাওয়ার হাউসের অদূরে কালভার্টের পাশের ঝোপ-জঙ্গলে গত ২০ মার্চ রাতে সোহাগীর লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় তার বাবা কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাত দুষ্কৃতকারীদের নামে হত্যা মামলা করেন। পরবর্তীতে ৩০ এপ্রিল তত্কালীন গোয়েন্দা পুলিশের ময়নাতদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনের ভিত্তিতে আদালতের নির্দেশে তনুর লাশ দ্বিতীয় দফায় ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে তুলে ওইদিনই পুনরায় দাফন করা হয়। এর আগে ২৯ মার্চ র‌্যাবের একটি টিম লাশ উদ্ধার হওয়া স্থানের কিছু মাটি সংগ্রহ করে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮:১৩:০৪   ২৪১ বার পঠিত