বুধবার, ৩০ মার্চ ২০১৬

রিকশাভর্তি তালপাখা নিয়ে ঢুকছেন রিকশাচালক আব্দুল হালিম।

Home Page » ফিচার » রিকশাভর্তি তালপাখা নিয়ে ঢুকছেন রিকশাচালক আব্দুল হালিম।
বুধবার, ৩০ মার্চ ২০১৬



image130.jpgবঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ ‘তোমার হাত পাখার বাতাসে প্রাণ জুড়িয়ে আসে’- মেঠো রোমান্টিকতার হাতপাখা যন্ত্রের শহরে বেমানান। কিন্তু চৈত্রের কাঠফাটা রোদ ইটপাথরের রাজধানীতেও হাতপাখা নিয়ে আসে।যেমনটি দেখা গেলো, চৈত্রের প্রথম সপ্তাহেই রাজধানীতে রিকশাভর্তি তালপাখা নিয়ে ঢুকছেন রিকশাচালক আব্দুল হালিম। অভিজাত এলাকার ফ্ল্যাটবাড়ি ঘেঁষে চলছে রিকশা বোঝাই হাতপাখার হাতছানি।

এসব তালপাতার পাখা আসছে ঢাকা জেলার ভাটারা ইউনিয়নের ছোলমাইদ থেকে। আর ছোলমাইদে তালপাতা আসছে ময়মনসিংহ থেকে। ছোলমাইদের ঘরে ঘরে একসময় হাতপাখা তৈরি হতো। এখন মাত্র গুটিকয়েক পরিবার হাতপাখা তৈরি করে। ছোলমাইদ পূর্বপাড়ায় এ গুটিকয়েক পরিবারের বাস।

ছোলমাইদে তৈরি হাতপাখা নিয়ে মাদানি অ্যাভিনিউ আমেরিকান সেন্টারের পাশ দিয়ে নতুন বাজার সড়কে উঠেই রাজধানীর হাটের দিকে ছুটছে রিকশা।

রিকশাচালক আব্দুল হালিম জানান, তিনি ছুটছেন নারায়ণগঞ্জের দিকে। ঢাকার চকবাজার ও ইমামগঞ্জে হাতপাখা বিক্রি হয়। হাড়ি-পাতিল, ঝাড়ুর দোকানে দোকানে হাতপাখা দেন তিনি।

তার কাছেই জানা যায়, হাতপাখার গ্রাম ছোলমাইদ। অবশ্য এখন ছোলমাইদে বসবাস করা অনেকেই জানেন না, এক সময় হাতপাখা তৈরিই ছিলো এখানকার মানুষের প্রধান জীবিকা। রাজধানীর ছোঁয়া পেয়ে বদলে যাওয়া ছোলমাইদে এখন হাতপাখার কারিগর মাত্র হাতেগোনা কয়েকজন।

জাকির, ছুরুল হক, ইউনুস আলী, খলিল, শাহজাহান- এ কয়েকজনের নাম জানা গেছে হাতপাখার কারিগর হিসেবে। তারা নিজেদের ঘরে হাতপাখা তৈরি করছেন। তাদের ঘরের নারীরাই সেই পাতপাখা সেলাই করেন। তারপর তা বিক্রির জন্য তুলে দেন রিকশা বোঝাই করে।

সপ্তাহে আব্দুল হালিম দুই থেকে তিনবার এভাবে রিকশা বোঝাই করে তালপাতার হাতপাখা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। রিকশাভাড়া হিসেবে তিনি আটশ’ থেকে এক হাজার টাকা পান।

যে রিকশা নিয়ে তিনি রাজধানীর পথ ধরেছেন সেই রিকশায় ১৪শ’ পাখা আছে। সাড়ে ১৮শ’ পাখা নেওয়া যায় রিকশায়। কাপড় দিয়ে মোড়ানো ১৫শ’ হাতপাখার একটি রিকশায় জায়গা হয়। আর কাপড় ছাড়া ১৮শ’ হাতপাখার জায়গা হয়।

ছোলমাইদের আদি বাসিন্দা হাতপাখার কারিগর জাকির বাংলানিউজকে জানান, ঢাকার খুব কাছে হলেও বছর দশেক আগে অজোপাড়া গাঁ ছিলো ছোলমাইদ। এখন বিল্ডিং-ফ্ল্যাট হয়ে গেছে এই গ্রামে। তবে তাদের কয়েকটি পরিবার মাত্র এই আদি পেশায় আছে।

ময়মনসিংহ থেকে নিয়ে আসা তালপাতা দিয়ে এখানে হাতপাখা তৈরি করেন তারা। কাপড় মোড়ানো হাতপাখা ১৪ টাকা আর কাপড় ছাড়া ১৬ টাকা পাইকারি দামে বিক্রি হয়। কাপড় ছাড়া যে হাতপাখা সেটি দু’দিকেই নকশা করা থাকে বলে দুই টাকা দাম বেশি।

বাংলাদেশ সময়: ১২:২০:৫৯   ১৯৬৮ বার পঠিত