শুক্রবার, ২৫ মার্চ ২০১৬
সাত বছরে ২০০ দিনেই বিদেশে আতিউর।
Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » সাত বছরে ২০০ দিনেই বিদেশে আতিউর।
বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ
গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালনের সাত বছরে সাত মাসেরও বেশি সময় বিদেশে কাটিয়েছেন আতিউর রহমান। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে শুধু নির্ধারিত সূচিতেই তার ১৯৭ দিন কেটেছে বিদেশে। বিভিন্ন অনুষ্ঠান, সেমিনার, সম্মেলন এবং মেলায় অংশ নিতে তিনি এসব সফর করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও ব্যাংক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সফরের এই হার অস্বাভাবিক। এতে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থও অপচয় হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র বলছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো গভর্নর হিসেবে আতিউর রহমান বিদেশ সফরের রেকর্ড করেছেন। এর আগে কোনো গভর্নর এত বিদেশ সফর করেননি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৮০০ কোটি টাকা রিজার্ভ চুরির ঘটনায় গত ১৫ই মার্চ গভর্নরের পদ ছাড়েন আতিউর। তার পদত্যাগের পর অর্থমন্ত্রী সংবাদ মাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে গভর্নরের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি আতিউর রহমানের বিদেশ সফর নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, ৭৫ বার বিদেশ সফর করেছেন আতিউর। এই সময়ে তিনি বিশ্বের ৩৪টি দেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভ্রমণ করেছেন ভারত। দেশটিতে গেছেন ১৩ বার। আর দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে তিনি ১০ বার ভ্রমণ করেন। এসব হিসাব শুধু অনুষ্ঠানের দিন গণনা করে করা হয়েছে। সফরের যাতায়াত ও অন্য দিনগুলো হিসাবে আনলে সফরের পরিধি আরও বেশি বলে ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে। ২০০৯ সালের ১৩ই জুন ইন্দোনেশিয়া দিয়ে শুরু হয়ে গত ১৩ই মার্চ দিল্লি সফরের মাধ্যমে শেষ হয় তার ভ্রমণ। আতিউর রহমানের যোগদানের তারিখ (০১-০৫-২০০৯) থেকে গত ১৫ই মার্চ পর্যন্ত বৈদেশিক ভ্রমণের তথ্য এসেছে। কোন দেশে কতবার: গভর্নর তার মেয়াদে ভারতে ১৩ বার সফর করেছেন। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১০ বার, সুইজারল্যান্ডে ৯ বার, যুক্তরাজ্যে ৭ বার ও সিঙ্গাপুরে ৪ বার ভ্রমণ করেছেন। ৩ বার করে ভ্রমণ করেছেন ইন্দোনেশিয়া ও সৌদি আরবে। ২ বার করে সফর করেছেন শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, জার্মানি, নেপাল, মালয়েশিয়া, ডেনমার্ক, কাতার ও জাপান। একবার করে ভ্রমণ করেছেন উগান্ডা, কেনিয়া, সুদান, স্পেন, সুইডেন, ভুটান, নাইজেরিয়া, ফ্রান্স, কোরিয়া, কানাডা, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রুনাই, ইরান, কাজাখস্তান, আমস্টারডাম, পেরু, ইতালি ও কুয়েত। যেসব অনুষ্ঠানে অংশ নেন: যোগদানের পর আতিউর প্রথম ভ্রমণ করেন ইন্দোনেশিয়ায়। ২০০৯ সালের ১৩-১৪ই জুন অনুষ্ঠিত ব্যাংক ইন্দোনেশিয়ার বার্ষিক আন্তর্জাতিক সেমিনারে যোগদান করেন। একই দেশে এএফসি গ্লোবাল পলিসি ফোরাম ২০১০-এ অংশ নেন ২৭ থেকে ২৯শে সেপ্টেম্বর। ২০১৪ সালে ১০-১১ই জুন এশিয়া প্যাসিফিক আউটরেচ মিটিং অন সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যানসিংয়ের ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাকার্তায়। দ্বিতীয়বার ভ্রমণ ছিল শ্রীলঙ্কায়। এখানে তিনি দুইবারে দুটি অনুষ্ঠানে অংশ নেন। প্রথমটি মিটিং অব দ্য বোর্ড অব ডাইরেক্টর অব দ্য আশিয়ন ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন। দ্বিতীয়টি, সার্ক ফাইন্যান্স গ্রুপ মিটিং গভর্নর সিম্পোজিয়াম ও সার্ক সেন্ট্রাল ব্যাংক ইকোনমিস্ট মিটিং। তৃতীয়বার ভ্রমণ করেন সুইজারল্যান্ডে। প্রোগ্রাম হলো- ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল সেটেলমেন্টসের বার্ষিক সাধারণ সভা ২০০৯, দি অ্যানুয়াল জেনারেল মিটিং অব দ্য ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল সেটেলমেন্ট ২০১০, এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড প্রভার্টি রিডাকশন: অ্যা কেস ফর ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ২০১১, ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল সেটেলমেন্টস, ব্যাসেল অ্যাডম স্মিথ সেমিনার ২০১১, ফাইন্যান্সিয়াল ডেভেলপমেন্ট, স্টাবিলিটি অ্যান্ড গ্রোথ ২০১২, ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল সেটেলমেন্টস, ব্যাসেল অ্যাডাম স্মিথ সেমিনার ২০১৩, বার্ষিক সাধারণ সভা ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল সেটেলমেন্টস ২০১৪, ইনকুয়ারি ইনটু দ্য ডিজাইন অব অ্যা সাসটেনেবল ফাইন্যান্সিয়াল সিসটেম ২০১৫ ও বার্ষিক সাধারণ সভা ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল সেটেলমেন্টস ২০১৫-এ যোগদান করেন। ইউরোপের দেশগুলোতে সুইজারল্যান্ড ছাড়া জার্মান, স্পেন ও সুইডেন, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, ইতালি ও আমস্টারডামে বিভিন্ন সেমিনারে যোগদান করেন। যুক্তরাজ্যে ৭ বার ভ্রমণে বাংলাদেশি প্রবাসীদের সঙ্গে রেমিট্যান্স বৃদ্ধি শীর্ষক আলোচনা সভা, দেশে বিনিয়োগ বাড়ানো শীর্ষক রোড শো, এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের বেস্ট গভর্নরদের নিয়ে সম্মেলন ও আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন আতিউর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশে বিনিয়োগ, ইউএস-বাংলা মেলা বিষয়ক ইউএসএ সরকারের বিভিন্ন বিভাগের সঙ্গে আলোচনায় অংশগ্রহণ। এছাড়া পেরুতেও সেমিনারে অংশ নেয়ার জন্য ভ্রমণ করেন তিনি। একই উদ্দেশ্যে আফ্রিকার সুদান, নাইজেরিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশে ভ্রমণ করেন। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সৌদি আরব, ইরান, কাজাখস্তান কুয়েত ও কাতারে বিভিন্ন সেমিনারে অংশ নেয়ার জন্য ভ্রমণ করেন। এ ছাড়া জাপান, কোরিয়া, ব্রুনাই, মালয়েশিয়া, চীন, থাইল্যান্ড, নেপাল, ভুটান ও ভারতে বিভিন্ন সেমিনারে অংশ নেন। ১৯৫১ সালে জামালপুরের একটি গ্রামে জন্ম আতিউর রহমানের। এরপর অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত গ্রামের স্কুলেই পড়াশোনা করেন তিনি। এরপর ময়মনসিংহ ক্যাডেট কলেজে। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে মাস্টার্স করেছেন। পরবর্তীতে পিএইচডি করেছেন ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে। কর্মজীবন শুরু করেন বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনে প্ল্যানিং অফিসার হিসেবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অফ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বা বিআইডিএসের রিসার্চ ফেলো ছিলেন প্রায় ২৭ বছর। এরপর দায়িত্ব নেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে। গভর্নর হওয়ার আগে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের পরিচালক ও জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন আতিউর রহমান। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন। প্রকৃতিপ্রেমী ও সংস্কৃতিমনা এই অর্থনীতিবিদ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক উন্নয়ন, পরিবেশবান্ধব অর্থনীতি নিয়েও কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। স্ত্রী ড. সাহানা রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পেডিয়াট্রিক্স বিভাগের অধ্যাপক। আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর ২০০৯ সালে আতিউরকে ৪ বছরের জন্য গভর্নর পদে নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর ২০১৬ সালের ২রা আগস্ট পর্যন্ত তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল। নিয়োগ পাওয়ার পর ১০ টাকায় কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষের জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্টসহ বেশ কিছু উদ্যোগ নেন। যা নিয়ে আলোচনা ছিল ব্যাংক অঙ্গনে। তবে এর সমালোচনাও ছিল। গত ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভে সঞ্চিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার হাতিয়ে নেয়ার ঘটনার প্রায় এক মাস পর তা প্রকাশিত হয়। গভর্নর হিসেবে তিনি এ চুরির ঘটনা প্রকাশ না করায় তীব্র সমালোচনা করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। দাবি ওঠে পদত্যাগের। প্রবল চাপের মুখে গভর্নরের পদ থেকে সরে দাঁড়ান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯:৪৪:১৬ ৩৪১ বার পঠিত