বৃহস্পতিবার, ২৪ মার্চ ২০১৬

কীভাবে বুঝবেন আপনার অনিয়মিত হৃদস্পন্দন হচ্ছে?

Home Page » স্বাস্থ্য ও সেবা » কীভাবে বুঝবেন আপনার অনিয়মিত হৃদস্পন্দন হচ্ছে?
বৃহস্পতিবার, ২৪ মার্চ ২০১৬



4261_1.jpg

অনেকেরই অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের সমস্যা হতে দেখা যায়। এমন হলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. নূর আলম। বর্তমানে তিনি জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের কার্ডিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। এনটিভির প্রতিদিনকার আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিনের ২৩৩৪তম পর্বে অংশ নেন তিনি।

প্রশ্ন : অনিয়মিত হৃদস্পন্দন বা এরিদমিয়া কী?

উত্তর : আমরা সাধারণত জানি, প্রতি মিনিটে স্বাভাবিকভাবে ৬০ থেকে ১০০ বার হৃদস্পন্দন হয়। এটি আমরা নাড়ির গতি দেখে বুঝতে পারি। কোনো কারণে যদি হৃদস্পন্দন ১০০-এর ওপরে চলে যায় বা কোনো কারণে যদি ৬০-এর নিচে চলে যায়, তখনই একে আমরা অনিয়মিত হৃদস্পন্দন বা এরিদমিয়া বলি।

প্রশ্ন : হৃদস্পন্দন অনিয়মিত হওয়ার পেছনের কারণ কী?

উত্তর : কিছু হৃদরোগের জন্য হয়। হৃদরোগের বাইরে শরীরে অন্য কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে যদি অসুস্থতা থাকে সে কারণেও হয়ে থাকে। মানুষের যদি জ্বর হয়, তাহলেও কিন্তু হৃদস্পন্দন বেড়ে যেতে পারে। একে অবশ্য আমরা খুব বেশি গুরুত্বের সঙ্গে নেই না। এ ছাড়া কিছু হরমোনের সমস্যা, যেমন থাইরয়েড হরমোন বেড়ে গেলে এ রকম হতে পারে। অথবা যদি বাতজ্বরজনিত কারণে হার্টের ভাল্ভের রোগ হয়, সেই ক্ষেত্রেও হৃদযন্ত্রের গতি বেড়ে যেতে পারে। এ ছাড়া হার্টের মধ্যে যদি অস্বাভাবিক ট্র্যাক্ট বা পথ হয়ে থাকে, সেখান দিয়ে ইলেকট্রিসিটি গিয়েও হার্টের গতি বাড়িয়ে দিতে পারে।প্রশ্ন : অনিয়মিত হৃদস্পন্দন কী কারণে হচ্ছে সেটি কী বোঝার কোনো উপায় রয়েছে?

উত্তর : আসলে এই ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলেই হয়তো বোঝা যাবে।

প্রশ্ন : এই ক্ষেত্রে রোগীর অভিযোগ কী থাকে?

উত্তর : হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলে রোগীর পালপিটিশন বা বুক ধড়ফর করে। এর পাশাপাশি রোগীর বুকে ব্যথা হতে পারে, একটু শ্বাসকষ্ট হতে পারে। যখন হৃদযন্ত্রের গতি বেড়ে যায়, তখন এমন হয়। আবার যখন হৃদযন্ত্রের গতি কমে যায়, তখন অনেক সময় মাথা ঘোরানো, মাথা হালকা হয়ে যাওয়া, অনেক সময় অজ্ঞানও হয়ে যায়। এ রকম সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

প্রশ্ন : এ ধরনের সমস্যা নিয়ে আসলে প্রাথমিকভাবে রোগীকে কী পরামর্শ দেন?

উত্তর : দেখা যায়, অনেক সময় এসব বিষয়গুলো মাঝে মাঝে হয়। কখনো হয় আবার কখনো স্বাভাবিক থাকে। রোগীরা যখন চিকিৎসকের কাছে আসেন, আমরা একটি ইসিজি করি। তখন হয়তো ইসিজির প্রতিবেদনটা স্বাভাবিক দেখা যাবে। সেই্ রোগ নির্ণয়েরও বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। যেমন, ২৪ ঘণ্টা রোগীর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করার একটি পরীক্ষা রয়েছে। সেটি আমরা করতে পারি। এ ছাড়া হার্টের একটি ইকো পরীক্ষা করা যেতে পারে। এ ছাড়া হার্ট ছাড়া অন্যান্য কোনো কারণে, হরমোনের কারণে যদি গতি বেড়ে যায়, সে ক্ষেত্রে সেগুলো পরিমাপ করে বা সেই পরীক্ষা করে রোগ ধরতে পারি।

প্রশ্ন : রোগনির্ণয়ের পর পরামর্শ কী থাকে বা কিসের ভিত্তিতে চিকিৎসা শুরু করেন?

উত্তর : হৃদরোগ ছাড়া অন্য কোনো কারণে হৃদস্পন্দনের গতি বেড়ে যাচ্ছে, এমন যদি হয় তাহলে এর চিকিৎসা করি। আর যদি হৃদরোগের কারণে হয়, আমরা বলি সুপ্রাভেন্টিকুলার টেরিকার্ডিয়া আছে, সেটা হৃৎপিণ্ডের বিশেষ একটি জায়গায় একটি অস্বাভাবিক পাথওয়ে (পথ) হয়ে থাকে। এর একটি আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা আছে, যেই পথটি থাকে একে নির্ণয় করে ক্যাথেডার অ্যাবলেশন করলে রোগী পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যায়।

প্রশ্ন : এই বিষয়টি কাদের ক্ষেত্রে আপনারা প্রয়োগ করেন?

উত্তর : সুপ্রাভেন্টিকুলার টেরিকার্ডিয়া যেসব রোগীদের ক্ষেত্রে দেখা যায় তাদের রোগনির্ণয় করে এর চিকিৎসা করার ব্যবস্থা করা যায়।

প্রশ্ন : চিকিৎসা করার পর কী রোগী সুস্থ জীবন ফিরে পায়? আগের মতো স্বাভাবিক অবস্থায় কী ফিরে যেতে পারে?

উত্তর : জি, অবশ্যই ফিরে যেতে পারে। যদি হৃদযন্ত্রের গতি অনেক বেড়ে যায় এবং এর যদি রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা করা যায়, সেটা যেমন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যায়, আবার হৃদযন্ত্রের গতি যদি কমে গিয়ে যে অসুবিধা হয়, সেগুলোও পেসমেকারের মাধ্যমে চিকিৎসা করলে পরিপূর্ণভাবে নিরাময় করা যায়।

প্রশ্ন : এই চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে আপনাদের পরামর্শ কী থাকে জীবনযাপনের ধরন পরিবর্তনের ক্ষেত্রে, যাতে করে এই সমস্যা না হয়?

উত্তর : পরামর্শ হলো নিয়মিত চিকিৎসকের ফলোআপে আসা। চিকিৎসক যেসব ওষুধ দেবেন তা ঠিকমতো খাওয়া। এর মাঝে যদি কোনো অসুবিধা দেখা দেয় তবে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। আর জীবনযাপনের ধরন পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সে অতিরিক্ত চর্বি খাবে না। ধূমপান করবে না। চাপ যুক্ত জীবন যেন এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। আর স্বাভাবিক কর্মজীবন চালালেই সে সুস্থ থাকবে আশা করি।

প্রশ্ন : হৃদস্পন্দন ঠিকমতো না হলে কী কী ধরনের জটিলতা হতে পারে?

উত্তর : রোগীর হার্ট ফেইলিউর হতে পারে। ফুসফুসে পানি জমে যেতে পারে। হৃদযন্ত্রের গতি কমে গিয়ে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট, হার্ট বন্ধও হয়ে যেতে পারে। রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। রোগীর হার্ট বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং মৃত্যুর ঝুঁকিও রয়েছে।

প্রশ্ন : এ জাতীয় সমস্যা থেকে দূরে থাকতে রোগীদের প্রতি আপনার পরামর্শ কী থাকবে?

উত্তর : প্রথমত হলো সচেতনতা দরকার। যেমন অল্প বয়সে একটি লোক বুক ধড়ফড়ের কথা বললে অনেকে একে গ্রাহ্য করে না। তবে এটি আসলেই একটি রোগ। বুক ধড়ফড় করাটাকে অনেকেই তেমন গুরুত্ব দেয় না। তবে যদি এটা অনেক বেড়ে যায়, তাহলে এটি অগ্রাহ্য না করে গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। এতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বুক ধড়ফড় বা যেকোনো ধরনের মাথা ঘুরানো সেসব ক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করানো উচিত।

প্রশ্ন : তরুণসমাজের মধ্যে কেন বুক ধড়ফড়ের সমস্যা বেশি হচ্ছে?

উত্তর : আসলে এখন অনেকে হয়তো এসব বিষয়ে সচেতন হয়েছে। এখন রোগ ধরা পড়ছে, আগে ধরা পড়ত না। এই ধরনের রোগ অনেকের মধ্যে ছিল, যেহেতু অনেকে সচেতন হয়েছে, চিকিৎসকের কাছে আসছে এবং রোগ ধরা পড়ছে। এ জন্য আমি মনে করি, বিষয়গুলো প্রতীয়মান হচ্ছে। এটি একটি কারণ। আরেকটি কারণ হলো, হৃদরোগ ছাড়াও আনুসঙ্গিক কারণে যে এরিদমিয়া হয়ে থাকে, এ সম্বন্ধেও এখন মানুষের সচেতনতা বেড়েছে। সুতরাং এভাবে রোগগুলো ধরা পড়ছে এবং চিকিৎসা হচ্ছে।

প্রশ্ন : জীবনযাপনের ধরন কি এই ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা পালন করে? কী মনে করেন আপনি?

উত্তর : অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের জন্য আলাদা করে কিছু নেই। অন্যান্য হৃদরোগের মতো এই ক্ষেত্রেও জীবনযাপনের ধরনটা পরিবর্তন করা উচিত।

প্রশ্ন : হার্টের নিজস্ব কোনো কারণে যখন এরিদমিয়া হয়, তখন কি এর নির্দিষ্ট কোনো ভূমিকা রয়েছে?

উত্তর : অনেক সময় অতিরিক্ত টিভি দেখা, অতিরিক্ত চাপযুক্ত জীবন বা অনেক সময়, চা-কফি বেশি খেলে, দুশ্চিন্তা বেশি করলে এই অনিয়মিত হৃদস্পন্দন হতে পারে। সেই বিষয়ে সবার সতর্ক থাকা উচিত।

বাংলাদেশ সময়: ২:০৩:১৭   ৪৪৯ বার পঠিত