সোমবার, ১৪ মার্চ ২০১৬
রিজার্ভের অর্থ চুরিতে দেশি চক্রের ১ জন চিহ্নিত।
Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » রিজার্ভের অর্থ চুরিতে দেশি চক্রের ১ জন চিহ্নিত।
বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের ঘটনাটি হ্যাকিং নয়। স্বাভাবিক প্রক্রিয়া মেনেই ফেডারেল রিজার্ভ থেকে টাকা স্থানান্তর করার জন্য অ্যাডভাইস পাঠানো হয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের কম্পিউটারের মাধ্যমেই। তদন্তকারী দল বলছে, এ কাজে ব্যবহৃত ৪টি ইউজার আইডি সনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে একজনকে সনাক্ত করা গেছে। সনাক্ত হওয়া ব্যক্তি বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপানায় ব্যবহৃত ডিলিং রুমের কর্মকর্তা বলে নিশ্চিত হয়েছেন তারা। অর্থ আত্মসাতের ঘটনার চুলচেরা খতিয়ে দেখছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাসহ আরও দুটি দল। আইটির বিষয়টি দেখছে রাকেশ আস্থানা ও সদ্য নিয়োগ পাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের ফায়ার-আই নামক প্রতিষ্ঠান এবং র্যাব আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত শুরু করেছে গতকাল রোববার থেকে। এর বাইরেও ৩টি গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশ ছায়া তদন্ত করছে। তদন্ত দলের এক কর্মকর্তা বলেছেন, এটি একটি সংঘবদ্ধ চক্রের কাজ। এতে দেশি-বিদেশি চক্রের লোকজন জড়িত রয়েছে। পরিকল্পিতভাবে এ কাজটি করা হয়েছে। দেশি চক্রে প্রভাবশালী মহল জড়িত। তাদের নাম প্রকাশ করা সহজ কাজ নয়। জীবনের ঝুঁকি আছে। আমরা প্রায় নিশ্চিত কারা এ কাজের সঙ্গে জড়িত। এখন কিছু তথ্যের ক্রস চেক করা বাকি আছে। তারপর আমরা সম্পূর্ণ নিশ্চিত হতে পারব এ চক্রের সদস্যদের ব্যাপারে। তিনটি তদন্ত দলই নিজেদের পাওয়া তথ্য নিয়ে বৈঠক করেছে। একে অন্যকে তাদের ফাইন্ডিংশ(প্রাপ্ত তথ্য) দিয়েছে। ক্রস চেকের মাধ্যমে মিলিয়ে দেখা হচ্ছে পাওয়া তথ্য। কিছু প্রশ্নের উত্তর এখনও পায়নি তদন্তকারি দলের সদস্যরা। তারা বলছে, এটা ক্রস বর্ডার(দেশের সীামান্তে বাইরের) অপরাধ হওয়ায় তথ্য নিশ্চিত হতে আরও কিছু সময় লাগবে। তথ্য উদ্ধারে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১১টি কম্পিউটার ও ল্যাপটপ জব্দ করা হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা স্থানান্তরের কাজে ব্যবহৃত কম্পিউটারের ফরেনসিক পরিক্ষা করা হয়েছে। আরও কিছু তথ্য উদ্ধারের চেষ্টা করছে তদন্ত দল। অর্থ চুরির এ ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের ও ফরেক্স রিজার্ভের কয়েকজন কর্মকর্তার উপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এতে একাধিক কর্মকর্তার সংশ্লিষ্ঠতা পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে বেশকিছু প্রমাণও পাওয়া গেছে। প্রভাবশালী মহলের সম্পৃক্ততার কারণে সবকিছু নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেই তদন্তকাজ চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ঘটনাটি কাউকে না জানানোতে ক্ষুদ্ধ হয়েছেন অর্থমন্ত্রী, সচিবসহ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা। দীর্ঘ এক মাস পেরিয়ে গেলেও এত বড় ঘটনায় কোন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি। গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ড. এম আসলাম আলম বলেছেন, শীঘ্রই চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ৯৫ কোটি ১০ লাখ ডলার মার্কিন ডলার আত্মসাত করে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৭ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার সরিয়ে নিতে পেরেছে এ চক্র। যা বাংলাদেশি টাকায় বাকি ৮৫ কোটি ডলার সরাতে পারেনি ফেডারেল ব্যাংকের সতর্কতার জন্য। বাংলাদেশ ব্যাংকে সচিব এম আসলাম আলম সাংবাদিকদের বলেন, ১০১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ১৯.৩ মিলিয়ন ডলার শ্রীলংকা থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। ফিলিপাইন থেকে ৬৮ হাজার ডলার(৫৪ লাখ টাকা) ফেরত আনা গেছে। বাকি টাকা উদ্ধারে ফিলিপাইনের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে। অথচ গতকাল শ্রীলংকার একটি সংবাদপত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া অর্থ শ্রীলংকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে কোন প্রকার টাকা প্রবেশ করেছে কিনা। পত্রিকাটি নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে আরও জানায়, শ্রীলংকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কোন অর্থ প্রবেশ করে নি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭:৪২:৩৮ ৩২১ বার পঠিত