মঙ্গলবার, ৮ মার্চ ২০১৬
গত বছর পুঁজিবাজারে সর্বোচ্চ বিদেশি বিনিয়োগ।
Home Page » অর্থ ও বানিজ্য » গত বছর পুঁজিবাজারে সর্বোচ্চ বিদেশি বিনিয়োগ।
বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ
বিগত পাঁচ বছরে ধারাবাহিকভাবে প্রতিবছরই বিনিয়োগের পরিমাণ বেড়েছে। এ ছাড়া পুঁজিবাজারের মন্দার সুযোগে গত বছরে বিদেশি বিনিয়োগ বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছেছে। পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা এমন তথ্য জানিয়েছে। তাদের মতে, পুঁজিবাজারে মন্দাবস্থা বিরাজ করলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ার কেনার প্রবণতা বেড়ে যায়। আর বাজার ভালো হলে তারা শেয়ার বিক্রি করে বেরিয়ে পড়েন। ২০১০ সালে দেশের পুঁজিবাজারে ভয়াবহ ধস দেখা দিয়েছে। এর আগে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তাদের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। ফলে ২০১১ সাল শেষে বিনিয়োগে খুব বেশি স্থিতি থাকেনি। একইভাবে ২০১৪-২০১৫ সালও দেশের পুঁজিবাজারের জন্য খুব একটা ভালো যায়নি। ওই সময় দেশে সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশের ব্যবসা বাণিজ্যে মন্দা পরিস্থিতি গেছে। আর উল্লেখিত বছরে বিদেশিরা ভালো পরিমাণের শেয়ার কিনেছেন। পরবর্তীকালে নানা আশঙ্কায় তারা দীর্ঘমেয়াদে শেয়ার ধরে রাখেননি। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে, বিগত পাঁচ বছরে পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে ৫ হাজার ৬১৯ কোটি ১৮ লাখ ৬১ হাজার ৮৫৪ টাকা। উল্লেখিত সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ হয়েছে ২০১৪ সালে আর সবচেয়ে কম বিনিয়োগ হয়েছে ২০১১ সালে। আর এই সময়ে সর্বমোট টার্নওভার হয়েছে ২১ হাজার ৬৮৭ কোটি ৯৪ লাখ ৪ হাজার ৪৬১ টাকা। ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালে দেশের পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড কিনেছেন ১ হাজার ২১৬ কোটি ৮৩ লাখ ৪৬ হাজার ১৪২ টাকার। আর বিক্রি করেছেন ১ হাজার ১৩৮ কোটি ৪০ লাভ ২৭ হাজার ৬৬৩ টাকার। আর এসব ক্রয় বিক্রয়ের ফলে ওইবছর মোট টার্নওভার হয়েছে ২ হাজার ৩৫৫ কোটি ২৩ লাখ ৭৩ হাজার ৮০৫ টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। বছর শেষে নেট বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৮ কোটি ৪৩ লাখ ১৮ হাজার ৪৮০ টাকা। আর ২০১২ সালে পুঁজিবাজারে নেট বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে ৭৯২ কোটি ৫৯ লাখ ১৯ হাজার ৫৫৪ টাকার। ওই সময়ে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কিনেছেন ১ হাজার ৩৪৮ কোটি ৩৯ লাখ ৪১ হাজার ৯৩৪ কোটি টাকার। আর বিক্রয় করেছেন ৫৫৫ কোটি ৮০ লাখ ২২ হাজার ৩৮০ টাকা। নেট বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ৭৮ কোটি ৪৩ লাখ ১৮ হাজার ৪৮০ টাকা। ওই বছর মোট টার্নওভার হয়েছে ১ হাজার ৯৪ কোটি ১৯ লাখ ৬৪ হাজার ৩১৪ টাকা। এ ছাড়া ২০১৩ সালে নেট বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে ১ হাজার ৯৪২ কোটি ৮৯ লাখ ৫৩ হাজার ৭১৫ টাকার। ওই সময়ে বিনিয়োগকারীরা কিনেছেন ২ হাজার ৬৫২ কোটি ৫০ লাখ ৫৪ হাজার ৬৩০ টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। আর বিক্রি করেছেন ৭৯ কোটি ৬১ লাখ ৯১৫ টাকার। আর এসব ক্রয় বিক্রয়ের ফলে মোট টার্নওভার হয়েছে ৩ হাজার ৩৬২ কোটি ১১ লাখ ৫৫ হাজার ৫৪৬ টাকা। ২০১৪ সালে নেট বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে ২ হাজার ৬১৯ কোটি ৭৮ লাখ ৩৬ হাজার ১৫০ টাকা। উল্লেখিত সময়ে বিদেশিরা ক্রয় করেছেন ৪ হাজার ৬১০ কোটি ৩৬ লাখ ১৯ হাজার ৩১৭ টাকা সমমূল্যের শেয়ার। আর বিক্রি করেছেন ১ হাজার ৯৯০ কোটি ৫৭ লাখ ৮৩ হাজার ১৬৭ টাকা। ওই বছর মোট টার্নওভারের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৬০০ কোটি ৯৪ লাখ ২ হাজার ২ হাজার ৪৮৪ টাকা। আর সবশেষ বছর ২০১৫ সাল শেষে নেট বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮৫ কোটি ৪৮ লাখ ৩৩ হাজার ৯৫৬ টাকা। গত বছর বিদেশিরা ক্রয় করেছেন ৩ হাজার ৮২৫ কোটি ৪৬ লাখ ৭১ হাজার ১৩৪ টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। আর বিক্রয় করেছেন ৩ হাজার ৬৩৯ কোটি ৯৮ লাখ ৩৭ হাজার ১৭৯ টাকার শেয়ার। আর এই সময়ে মোট টার্নওভার দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৪৬৫ কোটি ৪৫ লাখ ৮ হাজার ৩১৩ টাকার শেয়ার। সবমিলিয়ে বিগত পাঁচ বছরে পুঁজিবাজারে নেট বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৬১৯ কোটি ১৮ লাখ ৬১ হাজার ৮৫৪ টাকা। আর এই সময়ে সর্বমোট টার্নওভার দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৬৮৭ কোটি ৯৪ লাখ ৪ হাজার ৪৬১ টাকায়। জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী এ বিষয়ে বলেন, পুঁজিবাজারের মন্দাবস্থায়ও ধারাবাহিক বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি শুভ ইঙ্গিত বহন করে। বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে ইতিমধ্যে বিভিন্নমুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আশা করা যায়, ভবিষ্যতেও বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এ ধরনের প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রাক্তন উপদেষ্টা এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের পুঁজিবাজারের তুলনায় তাদের এখানে খুব বেশি বিদেশি বিনিয়োগ যে আছে, তা নয়। তবে মার্কেটের অবস্থা খারাপ থাকলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা অধিক পরিমাণে শেয়ার ক্রয় করেন। আর মার্কেট ভালো অবস্থানে ফিরে আসলে তারা বিক্রি করে বেরিয়ে পড়েন-এটাই তাদের রীতি। তবে যাই হোক না কেন, বাজারে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়লে মার্কেট ক্যাপিটাল বাড়ে আর মার্কেট ক্যাপিটাল বাড়লে বাজার গতিশীল হয়। তাই দীর্ঘমেয়াদে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলের আরো তৎপর হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১০:২৬:২৭ ২৭৬ বার পঠিত