রবিবার, ৬ মার্চ ২০১৬
বিপর্যয়ের শঙ্কা কাটেনি টাকা ছাপানো কারখানার
Home Page » অর্থ ও বানিজ্য » বিপর্যয়ের শঙ্কা কাটেনি টাকা ছাপানো কারখানারবঙ্গনিউজ ডটকমঃঅর্থনীতির প্রধান বাহন টাকা। বিশেষ কাগজে তৈরি এই পণ্যটি ছাপানো হয় দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন(বাংলাদেশ)লিমিটেডে। তবে প্রতিষ্ঠানটি ‘টাকশাল’ নামেই অধিক পরিচিত।
দেশের সব টাকার নোট ছাপানো এই প্রতিষ্ঠানটি চরম সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে। চলতি বছরের শেষনাগাদ এই সঙ্কট কেটে যেতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গাজীপুরে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন(বাংলাদেশ) লিমিটেডে ১৯৮৮ সালে টাকা ছাপানো শুরু করে। তখন থেকেই জার্মানি থেকে ক্রয় করা কেবিএ-নোটাসিস সুইসের মেশিন দিয়ে চাহিদানুযায়ী টাকা ছাপিয়ে আসছে। দিন দিন অর্থনীতির আকার বড় হওয়ায় টাকার চাহিদা বাড়লেও টাকশালে তেমন বাড়েনি মেশিনারীর সংখ্যা।
টাকা ছাপানোর কারখানায় নতুন লাইন স্থাপনা না হলে, যে কোনো সময় মেশিনগুলো অকেজো হয়ে পড়লে টাকা ছাপানো বন্ধ থাকবে। আর দেশে মেরামত করারও কারিগর না থাকায় বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।
এ প্রসঙ্গে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলতে রাজি হন টাকশালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জিয়াউদ্দীন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর কোনো দেশের মেশিন ১৫-২০ বছরের বেশি দিন চলে না। সেই ১৯৮৮সালে স্থাপনের পর থেকে এখনো টাকা উৎপাদনে ব্যবহার করা হচ্ছে সেই পুরাতন মেশিনগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের যে পরিমান টাকা ছাপাতে বলে, তা ছাপাতে টাকশালের ধারণ ক্ষমতা নাই। টাকশালের সক্ষমতা বাড়ানো দরকার। প্রতিষ্ঠানটি ব্যাপক সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘উৎপাদনে থাকা এই মেশিনগুলো যদি আবারো নষ্ট হয়ে যায় তাহলে তা আর ঠিক করা যাবে না। কারণ মেশিনগুলোর আয়ুস্কেল শেষ।’
তিনি জানান, টাকশালে ছাপা মেশিনের অভাবে যে সঙ্কট দেখা দেয়, তা দূর করতে গত বছর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান উদ্যোগ নেন। তিনি ব্যাংক থেকে সাড়ে ১১০০ কোটি টাকা ধার দেয়। যা দিয়ে ৪টি মেশিন ক্রয়ের কাজ চলছে।
টাকশাল এমডি আরো জানান, এর আগে ২০১০ সালে ও ২০১৪ সালে বিদেশি প্রতিষ্ঠান কেবিএ-নোটাসিস সুইসের কাছ থেকে ‘ইনটাগলিও প্রিন্টিং মেশিন’ নামে টাকা ছাপানোর দুটি মেশিন কেনা হয়। ২০১০ সালে ক্রয়কৃত মেশিনটির মূল্য প্রায় ১২৪ কোটি টাকা ও ২০১৪ সালে ক্রয়কৃত মেশিনটির দাম ১৪২ কোটি টাকা। মেশিন বাড়লেও লাইন বাড়েনি। এসব মেশিনও দেশের চাহিদানুযায়ী টাকা ছাপাতে মোটেও যথেষ্ট না বলে জানান তিনি।
জিয়াউদ্দীন আহমেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাজারের চাহিদা অনুযায়ী অধিক টাকা ছাপানোর প্রয়োজনীয়তায় নতুন করে চারটি মেশিন কেনার কাজ চলছে পুরোদমে। কেবিএ-নোটাসিস সুইসের কাছ থেকে ‘ইনটাগলিও প্রিন্টিং মেশিন’ নামে টাকা ছাপানোর মেশিনই ক্রয় করা হচ্ছে। চলতি বছরের শেষনাগাদ এসব মেশিনে টাকা ছাপানো শুরু করা যাবে। তবে নতুন মেশিন চালু না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্টদের দুঃশ্চিন্তার কমতি নেই।
প্রায় ৮০০ কর্মকর্তা-কর্মচারীর এই প্রতিষ্ঠানে সব কর্মই যেন টাকা ছাপাকেন্দ্রিক। ছাপা মেশিনের কোনো একটি পার্স বা যন্ত্রাংশ নষ্ট হলে, পুরো উৎপাদন কাজই বন্ধ হয়ে যায়। আর এসব মেশিনের কোনো পার্স ঐ কোম্পানি ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। বিদেশি এ সব যন্ত্রাংশ ক্রয় করা স্বল্প সময়ে সম্ভব নয় বলে টাকশাল সূত্রে জানা যায়।
১৯৮৮ সালের আগে টাকা আমদানি করা হত। টাকার নোট ছাপানোর প্রথম বছর ২৬ কোটি ৪৩ লাখ পিস নোট ছাপানো হয়। আর গত বছরে ছাপনো হয় প্রায় ১১০কোটি লাখ পিস নোট। উৎপাদন কয়েকগুণ বাড়লেও সে তুলনায় বাড়েনি ছাপা মেশিন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১০ টাকা থেকে ১,০০০ টাকা মূল্যমানের ব্যাংক নোটগুলো ছাপানোর কাজ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর এক, দুই ও পাঁচ টাকার টাকার নোট ও ধাতব মুদ্রা সরকারি হিসেবে বের করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এসব নোট ছাপানোর কাজটি করে একমাত্র টাকশাল। তবে কয়েন বা ধাতব মুদ্রাগুলো জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্সসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে মুদ্রণ করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৫২:১৪ ৪০৪ বার পঠিত