মঙ্গলবার, ১ মার্চ ২০১৬
ভুলে ভরা স্মার্টকার্ড
Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » ভুলে ভরা স্মার্টকার্ড
বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ
উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র (স্মার্টকার্ড) ছাপানোর কাজ করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। জাতীয় তথ্যভাণ্ডারে সংরক্ষিত ১০ কোটির মধ্যে এক কোটি ভোটারের স্মার্টকার্ড ছাপানোর প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে রয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব ভোটারের জন্য কার্ড ছাপানো হবে। তবে জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা ভুল তথ্য সংশোধন কিংবা যাচাই-বাছাই না করেই ছাপা হচ্ছে এই স্মার্টকার্ড। পরে এই কার্ড সংশোধন করতে হবে সংশ্লিষ্ট ভোটারকে। ফলে আইডি কার্ড সংশোধনে বর্তমান হয়রানি আরও কয়েক গুণ বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইসি-সংশ্লিষ্টদের হিসাব অনুযায়ী, জাতীয় তথ্যভাণ্ডারে কমপক্ষে আড়াই কোটি ভোটারের তথ্যে বড় ধরনের ভুল রয়েছে। অনেকে বলছেন, এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি। কেননা, ২০০৭ সালে প্রথমবারের মতো দেশে ছবিসহ ভোটার তালিকার প্রচলন হয়। প্রশিক্ষিত জনবল ও অভিজ্ঞতা না থাকায় ওই সময়ের এনআইডি কার্ডধারীদের তথ্যে গুরুতর ত্রুটি রয়ে যায়। তবে ত্রুটিযুক্ত কার্ডধারীর প্রকৃত সংখ্যা কত, তার হিসাব নেই ইসির কাছে। এ ছাড়া ওই সময়ে যারা ভোটার হয়েছেন, গত সাত বছরে তাদের ব্যক্তিগত তথ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে। তবে ইসির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ভুল তথ্য থাকার কথা স্বীকার করে বলেছেন, আইডি কার্ড হাতে পাওয়ার পর যারা ভুল সংশোধনের আবেদন করেননি, তাদের স্মার্টকার্ড ওইভাবেই ছাপা হবে। এ ক্ষেত্রে ইসির কিছু করার নেই। তবে সংশোধনের জন্য আবেদনকারীদের চলমান হয়রানির কথাও স্বীকার করছেন তারা। এখন নাগরিকদের কাছে যে কার্ড রয়েছে, তা জমা নিয়ে পর্যায়ক্রমে সব নাগরিককে স্মার্ট এনআইডি দেওয়া হবে। প্রথমবার বিনামূল্যে দেওয়া হলেও পরে সংশোধন করতে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিতে হবে। গত ৯ ফেব্রুয়ারি সংসদে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০০৭ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত ছয় লাখ ১৩ হাজার ২৮৯ জন এনআইডি সংশোধনের জন্য আবেদন করেছেন। এ ছাড়া নতুন জাতীয় বেতন স্কেলের গেজেট জারির কারণে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এনআইডি সংশোধনের হিড়িক পড়ে। ইসির এনআইডি উইংয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংশোধনের আবেদন জমা পড়েছে তিন লাখের ওপরে। এখনও আবেদন আসছে। সব নাগরিককে কার্ড না দেওয়া পর্যন্ত এটি বাধ্যতামূলক না করার বিধান জাতীয় পরিচয়পত্র আইনেই রয়েছে। দেশে এখনও প্রায় এক কোটির বেশি নাগরিককে কার্ড দেওয়া সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন এনআইডি উইংয়ের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহউদ্দিন। এনআইডির একজন উপপরিচালক জানিয়েছেন, বিদেশযাত্রা, নতুন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা এবং মোবাইল ফোনের সিম নিবন্ধনের জন্য নানা প্রয়োজনেই এনআইডির ব্যবহার বেড়ে চলছে। এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় তথ্যভাণ্ডারে সংরক্ষিত ভোটারদের তথ্য হালনাগাদ করা জরুরি হয়ে পড়ছে। কেননা, দেশের ১২ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে তিন লাখের বেশি ভুল ধরা পড়েছে। সেই হিসাবে ১০ কোটি ভোটারের মধ্যে আড়াই কোটির আইডি কার্ডে ভুল রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এ সংখ্যা আরও বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অন্য নাগরিকদের তুলনায় অনেক বেশি সচেতন এবং তাদের সবারই শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ রয়েছে। সাধারণ নাগরিকদের আইডিতে এ ধরনের ভুল আরও বেশি থাকাটাই স্বাভাবিক। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, আট বছরের বেশি সময় নাগরিকদের হাতে আইডি কার্ড রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে যারা তথ্য সংশোধনের আবেদন করতে পারেননি, তাদের স্মার্টকার্ড ভুলভাবে ছাপা হলে কিছুই করার নেই। ইসির সিদ্ধান্তেই চলমান নাগরিক ভোগান্তি! ২০০৭ সালে আইডি কার্ড বিতরণের পরপরই ইসি থেকে বলা হয়েছিল, সারাদেশে উপজেলা সদরে সার্ভার স্টেশন স্থাপনের কাজ শেষ হলেই মানুষের হয়রানি কমে যাবে। ঢাকায় ইসির এনআইডি উইংয়ে সংরক্ষিত জাতীয় তথ্যভাণ্ডারের সঙ্গে এসব সার্ভার স্টেশনের নেটওয়ার্ক থাকবে। তখন মানুষকে আর ঢাকায় আসতে হবে না। কিন্তু ইসি কর্মকর্তাদের পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার চেষ্টায় এরই মধ্যে ভেস্তে গেছে ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) স্থাপনের কাজ। অযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে নেটওয়ার্কিংয়ের কাজ দেওয়ার সিদ্ধান্তের কারণে আপত্তি জানায় বিশ্বব্যাংক। এ বিষয়ে আলাপকালে ইসি কার্যালয়ের সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিশ্বব্যাংকের আপত্তির কারণে দরপত্রের মাধ্যমে ইসির চূড়ান্ত প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া সম্ভব হয়নি। তিনি জানান, নতুন দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। সার্ভার স্টেশনের সঙ্গে নেটওয়ার্কিং স্থাপন হয়ে গেলেই মানুষকে কষ্ট করে আর ঢাকায় আসতে হবে না। বর্তমানে মোবাইল মডেম দিয়ে ইসি সচিবালয়ের মাঠপর্যায়ের কার্যালয়ে ইন্টারনাল সাইটের মাধ্যমে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সর্বনিম্ন প্রতিষ্ঠানকে বাদ দিয়ে ইসির পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ না দেওয়ার বিষয়টি বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে তদন্ত করা হচ্ছে। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে দুই কর্মকর্তা ঢাকা সফর করে গেছেন। এ ছাড়া সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের (সিপিটিইউ) মহাপরিচালক বরাবর অনিয়ম তদন্তের জন্য আবেদন করা হয়েছে। গত ২৪ জানুয়ারি দেওয়া এ আবেদনের অনুলিপি পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনামন্ত্রী, আইএমইডি সচিব, ইআরডি সচিব, ইসি সচিব, বিটিআরসি চেয়ারম্যান ও বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধির কাছে। কমিশন ভোটারদের স্মার্টকার্ড দেওয়া ও ভিপিএন সংযোগের জন্য ২০১১ সালে আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং অ্যাকসেস টু সার্ভিস (আইডিয়া) প্রকল্প গ্রহণ করে। এ জন্য বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ১৯ কোটি ৫০ লাখ ডলারের (দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি) ঋণ চুক্তি করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৪২:১৮ ২৯৫ বার পঠিত